ভাদ্রের পূর্ণিমার মরা কাটালের বর্ষণ আর নদ-নদীর পানিতে সয়লাব বরিশাল অঞ্চল ভাদ্রের পূর্ণিমার মরা কাটালের বর্ষণ আর নদ-নদীর পানিতে সয়লাব বরিশাল অঞ্চল - ajkerparibartan.com
ভাদ্রের পূর্ণিমার মরা কাটালের বর্ষণ আর নদ-নদীর পানিতে সয়লাব বরিশাল অঞ্চল

3:41 pm , August 22, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ভাদ্রের পূর্ণিমার মরা কাটালে ভর করে গত কয়েক দিনের মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণের সাথে বরিশালের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৩টি গেজ স্টেশনেই নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে রোপা আমন ও বীজতলা সহ অন্যান্য ফসলের প্রায় পুরোটাই পানির তলায় চলে গেছে। উজানের ঢলের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর লাগাতর মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর পুরোটাই পানির তলায়। এ অঞ্চলের অন্যান্য এলাকায়ও প্রায় একই চিত্র। চলতি খরিফ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে যে ৮ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্য রয়েছে, তার রোপনকৃত প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরের ধান প্রায় পুরোটাই প্লাবনের কবলে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দর সহ এ অঞ্চলের সবগুলো বন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হলেও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে সব সতর্ক প্রত্যাহার করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
ফলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবাদ ও উৎপাদন। এবার ৮.৮১ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যে যে আমন বীজতলা তৈরী হয়েছে, তার পুরোটাই গত ৩-৪ দিন ধরে প্লাবনের শিকার। লক্ষ্যমাত্রার ২% বেশী আমন বীজতলা তৈরী হলেও তার প্রায় সবই নিমজ্জিত হওয়ায় কৃষকরা  দুঃশ্চিন্তায়। প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে প্রায় ২৪ লাখ টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করে রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত কয়েকদিনের বর্ষণের সাথে উজানের ঢল ও সাগর থেকে ধেয়ে আসা জোয়ারে এ অঞ্চলের প্রায় পুরো কৃষি জমিই প্লাবনের শিকার।
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা গত কয়েকদিন ধরেই বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকাজুড়ে বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশাল ও সিন্নিহিত এলাকায় ২২ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হলেও বুধবার সকালে তা ছিল ৭৫ মিলিমিটার। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার পর থেকে ঘনকালো মেঘ বরিশালে হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টি ঝড়িয়ে দুপুর ১২টার পরে তা প্রবল আকার ধারন করে। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ১শ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যেই ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে আগামী শনিবারের পর থেকে বরিশালে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা হ্রাস পাবার খবর জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল সহ মধ্যাঞ্চলে অবস্থানরত লঘুচাপটি গুরুত্বহীন হয়ে মৌসুমী বায়ুর অক্ষের সাথে মিলিত হবার কথা বলা হয়েছে। তবে মৌসুমী বায়ু বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকা সহ সারা দেশের ওপর সক্রিয় এবং উপকূল সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।
গত কয়েকদিনের বর্ষণের সাথে জোয়ারের পানিতে বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ এলাকা সহ রাস্তাঘাটও সয়লাব হয়ে আছে। নগরের অভ্যন্তর সহ কীর্তনখোলা নদীর সাথে সংযুক্ত খালগুলো জোয়ারের সাথে বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। ফলে ড্রেন থেকে খাল হয়ে নদীতে পানি নামছেনা। চরম বিপর্যয়ের কবলে গোটা নগরজীবন। নগরীর বহু বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেক বাড়িতেই গত কয়েকদিন চুলা পর্যন্ত জ্বলছেনা।
এদিকে ফুসে ওঠা সাগর উজানের ঢলের পানি গ্রহণ না করায় বরিশাল অঞ্চলের সবগুলো নদ-নদীই বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ বরিশালে কীর্তনখোলা নদী বিপদসীমার দশমিক ১০ সেন্টিমিটার, বিষখালীতে দশমিক ৮৬, বেতাগীতে একই নদী বিপদসীমার ১.২০ সেন্টিমিটার, দৌলতখানে সুরমা ও মেঘনা নদী দশমিক ৭১, তজুমদ্দিনে মেঘনা দশমিক ৯২, তেতুলিয়া দশমিক ৯, বুড়িশ^র ও পায়রায় ১.১২ সেন্টিমিটার, উমেদপুরে কঁচা নদী দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আগামী তিনদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা হ্রাস সহ ফুসে ওঠা সাগর কিছুটা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে উজানের পানি গ্রহণ শুরু করবে বলে আশা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে বরিশাল অঞ্চলের নদ-নদীর পানিও হ্রাস পাবার আশা করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেঘনা, তেতুলিয়া, সুরমা, বলেশ^র, বুড়িশ^র, কঁচা, বিষখালী, কীর্তনখোলা ও আড়িয়াল খাঁ সহ বরিশাল অঞ্চলের ১৩২টি নদ-নদীর অনেকগুলোই দু-কুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
কীর্তনখোলা নদী তীরের বরিশাল মহানগরীর একাধিক বস্তি সহ অনেক এলাকার বড়ী ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। ভঙ্গুর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থায় গত কয়েক দিনের মাঝারী থেকে প্রবল বর্ষনের পানি সামাল দিতে না পারায় মহানগরীর অনেক এলাকায়ই মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে। নগর ভবনের কনজার্ভেন্সি বিভাগ বাড়তি জনবল নিয়োগ করে ময়লা আবর্জনায় পানিবদ্ধ ড্রেনগুলো পরিস্কার করে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিস্থিতির খুব বড় পরিবর্তন লক্ষ্যনীয় ছিল না।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT