বরিশালে স্বস্তির ছোঁয়া : চলছে বাজার মনিটরিং ফেরত আসছে লুট হওয়া মালামাল বরিশালে স্বস্তির ছোঁয়া : চলছে বাজার মনিটরিং ফেরত আসছে লুট হওয়া মালামাল - ajkerparibartan.com
বরিশালে স্বস্তির ছোঁয়া : চলছে বাজার মনিটরিং ফেরত আসছে লুট হওয়া মালামাল

4:41 pm , August 10, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ গতরাত থেকেই বরিশালে স্বস্তির ছোঁয়া খুঁজে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নিরাপত্তা ও নির্বিঘেœ পথচলা শুরু হয়েছে চারিদিকে। ইতিমধ্যে ফেরত আসতে শুরু করেছে লুটপাট হওয়া মালামালও। বরিশাল ক্লাব, বীরোত্তম ভবনের লুট হওয়া মালামাল ও সেরনিয়াবাত ভবনের লুট হওয়া কিছু টাকা ফেরত পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করেছে অনেক মালপত্র ও নগদ টাকা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বৈষম্যবীরোধী শিক্ষার্থীরা টহল দিচ্ছেন রাতের নগরীতে। সাথে যুক্ত হয়েছেন আলেম সমাজ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও। রাজনৈতিক দলগুলোও তদারকি শুরু করেছে বরিশালের ১০ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে। এজন্য কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সবাই। তবে নগরীর সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ কে আর কোনো ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না কোথাও। সরেজমিনে শনিবার সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বরিশাল নগরীর সড়কে ও বাজারে দেখা গেছে মানুষের নির্বিঘœ চলাচল। বাজারেও ফিরেছে স্বস্তির ছোঁয়া। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরাও বের হয়েছেন ঘর থেকে। তবে তা খুবই জরুরী প্রয়োজনে। জানালেন, দুদিন আগের তুলনায় আজ অনেকটা স্বস্তি বোধ করছি।
বরিশাল ক্লাবের সামনের ট্রাফিক সামলাতে সামলাতে একজন শিক্ষার্থী জানালেন, আজ সকালে বীরোত্তম ভবন ও বরিশাল ক্লাবের লুট হওয়া বেশকিছু মালামাল ফেরত এসেছে।  ওদের দেখানো পথে বরিশাল ক্লাবে প্রবেশ করে দেখা গেল টেবিল, চেয়ার, সোফাসহ হাঁড়িপাতিলের বেশকিছু অংশ ফেরত এসেছে।
ক্লাবের সিনিয়র সদস্য আসাদুজ্জামান খসরু বলেন, লাখ দুয়েক টাকার মালামাল ফেরত এসেছে। তবে এগুলো বেশিরভাগই আর ব্যবহার উপযোগী নেই। সবমিলিয়ে ক্লাবের ক্ষতি প্রায় ২ কোটি টাকা বলে জানান তিনি।
এছাড়া ক্লাবের আপদকালীন সময়ে ক্লাব পুণর্গঠনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বায়ন জানিয়েছেন আহ্বায়ক আলতাফ মাহমুদ সিকদার। তিনি বলেন, ক্লাবে হামলা ভাংচুর করে যে ক্ষতিসাধন করা হয়েছে তার সেরে উঠতে অনেক সময় লাগবে। তবে আমরা সর্বাত্তক চেষ্টা চালাচ্ছি দ্রুততম সময়ে সবকিছু ঠিকঠাক করার জন্য।
৫ আগষ্ট বিকেলে ঐতিহ্যবাহি বরিশাল ক্লাবের এসি, ফ্যান, চুলা থেকে শুরু করে রান্নার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে চামচটি পর্যন্ত নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এতে ক্লাবটির প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
একই সময় বিরোত্তম ভবনের সামনেও একটি খাটিয়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এই খাটেই নাকি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ওমর বীরউত্তম ঘুমাতেন বলে জানালেন একজন বাসিন্দা। ৫ আগস্ট বিজয়ের দিন সন্ধ্যায় এই বাড়ীটি ভাংচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর বাড়ি থেকে লুট হওয়া প্রায় ২ কোটি টাকার মধ্যে ৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা ফেরত এসেছে।
বরিশালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক সাফায়েত বলেন, কিছু কিছু অসংগতি আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে আমরাও লক্ষ্য করেছি। তাই খুব শীঘ্রই একটা সাংগঠনিক রূপ দাঁড় করিয়ে সবাইকে একটা নিয়মের মধ্যে আনার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে সংগঠনের নামও ঠিক হয়েছে। প্রতিধ্বনি ছাত্র সেবা সংগঠন বলে জানান সাফায়েত।
এদিকে সবসময় যেকোনো সংকটে লাফিয়ে পড়া সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের পাশে নেই কেন প্রশ্ন তুলে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বরিশালের সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের পাশে দাঁড়ালে বাজার মনিটরিংসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিতে আমাদের আরো সুবিধা হতো। কিন্তু তাদের কোথাও কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনি। কেউ কেউ ফেসবুক, ইউটিউবে আমাদের নিন্দা বা প্রশংসা করছেন। কেউ কেউ সংখ্যালঘু নির্যাতন আর ধ্বংসযজ্ঞ হবার শ্লোগান তুলছেন।  আমাদের সাথে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন এমন একজন কাউকে কি দেখেছেন?
এদিকে বাজার মনিটরিং এ তখন ১০/১২জন শিক্ষার্থী ঘুরছেন বিভিন্ন দোকানে। সেনাবাহিনীর দেয়া ন্যায্যমূল্যের বাজর দরের তালিকার সাথে এই বাজারে অনেক পণ্যের দামে হেরফের পেয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন তারা। এরপর বাজার দরের তালিকা ঝুলিয়ে দিলেন দোকানে। শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা কাউকে শাস্তি বা জরিমানা এগুলো করবো না। আমাদের সাথী বড়রা এসে তা দেখবেন। আমরা বেশি অনিয়ম পেলে সেনাবাহিনীকে সংবাদ দেব। এটাই আমাদের উপর নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান  শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এই বাজার মনিটরিং নিয়ে সাধারণ মানুষ ভীষণ খুশি। বাজার করতে আসা কয়েকজন ক্রেতা বলেন, নতুন স্বাধীনতা এনেছে নতুন প্রজন্ম। ওরা চমৎকার কাজ করছে। সড়কে ট্রাফিক সামলাচ্ছে, রাতে নগরী পাহারা দিচ্ছে, আবার প্রথম দিন উৎসব আনন্দে লুটপাট হওয়া মালামাল উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যি নতুন এবং শিক্ষনীয় বলে জানান তারা। এসময় বাজার করতে আসা চরকাউয়া এলাকার  বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আবদুল মান্নান বলেন, ওদের কাজে আমি বিস্মিত এবং হতবাক। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি শুরু হয়ে যায়। শাজাহান ওমর, মহিউদ্দিন মানিক ওরা একটা পক্ষ যারা লুটপাটকে প্রশ্রয় দেয়, প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ওঠে। তখন আমরাও এতোটা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারিনি। আজ এই নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা ছোট্ট ছোট্ট শিক্ষার্থীরা যা করছে সেজন্য ওদের স্যালুট বলে জানান তিনি।
বরিশাল নগরীর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তখন শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ চলছে। ওরা হেলমেট পরা, সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক গাড়ি আটকে তল্লাশিও করছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ববি, বিএম কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী ছাড়াও রয়েছে বরিশাল জিলা স্কুল, উদয়ন স্কুল, হালিমা খাতুন স্কুলের  শিক্ষার্থীরা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT