কথা রাখছেন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত কথা রাখছেন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত - ajkerparibartan.com
কথা রাখছেন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত

4:05 pm , July 14, 2024

রূপসী বাংলা আর দূরে নয়
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বরিশাল নগরীর ৭টি খাল পুনরুদ্ধারের কাজ শেষ হয়েছে। জোয়ার-ভাটার পানিতে টলমল করছে এখন খালগুলো। নগরীর কোথাও জলাবদ্ধতা আর স্থায়ী নয় অতিবর্ষণেও। যদিও খাল খননে সহযোগিতা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিগত মেয়রের সময় ৭টি খালের সংস্কার কাজের টেন্ডার হলেও সিটি কর্পোরেশনের অসযোগিতায় খাল খনন সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার কারণেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বের টেন্ডারকৃত খালের সংস্কার সম্ভব হয়েছে। এদিকে একইসাথে বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৩০টি ওয়ার্ডের ১৬৭ সড়ক ও ৯৫ টি ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজও শুরু হয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে খালগুলোর দুপাশে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও শুরু হয়ে যাবে। এসব কাজের টেন্ডার হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের ১২ জুন ‘নতুন বরিশাল গড়ার অঙ্গিকার জয় হোক শেখ হাসিনার’- এই শ্লোগান নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। এরপর একবছর অতিবাহিত হয়েছে। এই একবছরে তিনি শুধু এটুকুই বলেছেন, ‘আমাকে কাজ করতে দেন, আগামী ৪ বছরের মধ্যে এই বরিশাল প্রকৃত রুপসী বাংলায় পরিনত হবে। বাণিজ্যিক নগরী হবে বরিশাল।
গত ১২ জুন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার একবছর পার হয়েছে। কাউন্সিলদের শুভেচ্ছা গ্রহণকালে মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, কাউন্সিলররা হচ্ছেন আমার হাত। আপনারা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে জনগণ আমাদের উপর আস্থাশীল হবেন। তাই সবাইকে সততার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
২০২৩ সালের ১২ জুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর জয়ী হওয়ার পরপরই বরিশালের চিত্র বদলে যেতে শুরু করে। গেলো বছরের ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল সিটি করপোরেশন এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের আগেই খাল পুনরুদ্ধার ও নগরীর ড্রেনগুলো আধুনিকায়নের জন্য ৭৯৭ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে এনেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে । এই প্রকল্পের মধ্যে ২৬৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ এই মুহূর্তে চলমান রয়েছে বিসিসির ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। এরমধ্যে রয়েছে ২৫০ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং, ৪৩ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা, ৫০ কিলোমিটার সিসি রাস্তা, ১০০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মান, ৯০৪৫ বর্গমিটার আরসিসি চত্বর, নগরের ২১টি রাস্তার মোড়ের সৌন্দর্য বর্ধন, নগরীতে ৪টি ভাস্কর্য নির্মাণ ও নির্মাণ সহায়ক যানবাহন ক্রয়।
এছাড়াও সাড়ে ৩৫শ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছেন তিনি যা এই মুহূর্তে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরমধ্যে আছে ৯২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর খাল খনন ও খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মানসহ নান্দনিক সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ। একই সাথে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ২২শ কোটি টাকার আরো একটি সমন্বিত প্রকল্প। এরমধ্যে রয়েছে ফুটওভার ব্রিজসহ নগরীর রাস্তা, ড্রেন, বিদ্যুৎ, খাল ও পানি সরবরাহের অত্যাধুনিকিকরণের কাজ। এছাড়া অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হবে নতুন নান্দনিক অত্যাধুনিক নগরভবন। এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রীতিমতো বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এনে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন তিনি। গত ১৪ নভেম্বর বিসিসির দায়িত্ব গ্রহণের পর একবছরে নগরীতে ৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, সাড়ে তিন কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে, দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাগরদি খালের দুপাড়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ প্রকল্পের আওতায় নগরীর ড্রেন থেকে আবর্জনা অপসারণসহ ড্রেনের উপর পকেট স্লাব নির্মাণ করা হয়েছে। যা দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যে সুফল দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত।
উন্নয়ন সহায়তা কর্মসুচীর অংশ হিসেবে শীতের সময় কয়েক হাজার শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং ঘুর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ঈদগাঁ সংস্কার, মশক নিধন, পার্ক ডেকরেশনসহ সার্বিক কার্যক্রম করা হয়েছে। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হলো নিয়মিত সিটি করপোরেশন পরিষদের সভা করা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের ওয়ার্ডওয়ারি কাজের সমবন্টণ করা হয়েছে। যা নিয়ে খুশি নগরীর ৩০ ওয়ার্ডের ৪০ জন কাউন্সিলর।
গতবছর ১২ জুন বরিশাল মহানগরীর ভাগ্যের এই পরিবর্তন ঘটেছিল । একজন অপরিচিত প্রায় মানুষ, যিনি রাজনীতি থেকে সবসময় দূরে সরে থাকতে পছন্দ করতেন, তাকেই বরিশালবাসী নগরপিতা নির্বাচিত করে উল্লাসে মাতোয়ারা হয়েছিলো। নাম তার আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এর ছোট ছেলে। নিভৃতচারী, মৃদুভাষী একজন সাদামাঠা মানুষ। বরিশালে যখন যোগ্য নেতৃত্বের সংকট চরমে ঠিক তখন ২০২২ সালের ১৫ আগষ্টকে ঘীরে এই মানুষটি আলোচনায় এলেন প্রথম। আগষ্টের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী এই মানুষটি নিজেও পায়ে গুলি খেয়ে অল্পের জন্যে বেঁচে গেছেন এবং বাঁচিয়েছেন ভাতিজা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকেও। গণমাধ্যমের কল্যাণে এই সংবাদ মূহূর্তে পৌঁছে গিয়েছিল ৫৮ বর্গমাইল বরিশাল নগরীর প্রায় ৫ লাখ মানুষের কাছে। একইসাথে বিষয়টিতে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথও খুঁজে পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা তখনকার সময়ে বরিশালের মেয়র এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বে একটা চরম সংকট তার চোখেও ধরা পড়েছিলো হয়তো। একেতো বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবং জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছিল একটা টানটান উত্তেজনা। এর উপরে ঐ সময়ের মেয়রের কাজকর্মে নগরবাসীসহ প্রশাসনও রীতিমতো বিরক্ত। বরিশালে নেতৃত্ব সংকট দূর করতেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকেই পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সাথে খোকন সেরনিয়াবাত আলোচনায় আসতে থাকেন। ২০২৩ সালের ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। উৎসব আর উল্লাসে নগরবাসী তাকে বরণ করে নেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে নগরবাসীকে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলেন খোকন সেরনিয়াবাত। সেখানে আধুনিক বরিশাল গড়ার লক্ষ্যে খাল পুনরুদ্ধারসহ ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বরাদ্দও চলে আসে তিনি জয়ী হওয়া মাত্রই। নগরীর ৭টি খাল পুনরুদ্ধারের কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে জোয়ার-ভাটার পানিতে দূর হয়েছে জলাবদ্ধতা ও নোংরা আবর্জনা। ১৬৭ সড়ক ও ৯৫টি ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলমান রয়েছে। ৩ টি প্রকল্পে ১৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে চলছে এসব উন্নয়ন তৎপরতা।  এক বছরের মধ্যে এসব কাজ মানসম্পন্নভাবে শেষ করার কঠিন নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তা না হলে বিল আটকে দেওয়ার হুমকীও রয়েছে একাজে।
এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মানুষ গত ২২ বছর ধরে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করছিলেন। গণমাধ্যমে এ সংবাদ দেখেই সেখানে ছুটে যান মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। নিজে গিয়ে দেখে আসেন নগরীর মাতাসার এবং পুরানপাড়া এলাকার অবস্থা। বাসিন্দারা পানি সংকটে তখন স্থানীয় মসজিদ কিংবা যে বাড়িতে টিউবওয়েলসহ পাম্প বসানো আছে সেখানে ধর্ণা দিচ্ছিলেন। অপেক্ষা করছেন দীর্ঘ লাইনে। মেয়রকে দেখে ছুটে আসেন তারা।মাতাসার এবং পুরানপাড়ার বাসিন্দারা জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত মেয়র এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে ২২ বছর কেটে গেছে। কেউ একটু খোঁজও নেয়নি তাদের। এই প্রথম কোনো মেয়র তাদের কষ্ট দেখতে ছুটে এসেছেন এতেই খুশি আমরা খুশি।
বাসিন্দাদের এই কথা শুনে কেঁদে ফেলেন মেয়র খোকন নিজেও। বলেন, আমি যতদিন বেঁচে আছি এবং মেয়র আছি ততদিন আর আপনাদের এভাবে দৌঁড়ঝাপ করতে হবে না। মেয়রের নির্দেশে তৎক্ষনাৎ নিয়মিত দুটো পানির ট্রাকে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়। একইসাথে দুটো টিউবওয়েল বসানোর কাজ শুরু হয়ে যায় মাতাসার ও পুরানপাড়া এলাকায়। এদিকে আবার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশলী এনে বসিয়ে রেখেছেন নগরভবনে। দুটি বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য কাজ করবেন এই প্রকৌশলীরা। মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আমি আমার দেয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটাবো। আমাকে সময় দেন, প্রশ্ন না তুলে কাজ করতে দেন। ধীরে ধীরে বদলে যাবে এই বরিশাল। বাণিজ্যিক বরিশাল হবে বিশ্বের অনন্য উদাহরণ। আগামী চার বছরের মধ্যে এই বরিশাল প্রকৃত রুপসী বাংলায় পরিনত হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT