4:00 pm , July 9, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সদ্য ঘোষিত বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি নিয়ে জ্যেষ্ঠ ও তৃনমুল নেতা কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তৃনমুল নেতাদের দাবি জ্যেষ্ঠ নেতাদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। এতে কার্যত তারা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়বেন। কারন তারা কি পরিচয়ে মাঠে সক্রিয় থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন নেতাকর্মীরা। আকস্মিকভাবে গত ১৩ জুন বরিশাল মহানগর বিএনপির ৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তেমনি গত ৭ জুলাই তিন সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষনা দেয়া হয়। কমিটিতে সাবেক আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুককে বহাল রাখা হয়েছে। সদস্য সচিব হিসেবে রাখা হয়েছে পূর্বের কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে। এছাড়াও এক নম্বর যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে আফরোজা খানম নাসরিনকে।
সাবেক কমিটির সদস্য সচিব এ্যাড. মীর জাহিদুল কবির জাহিদ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক এ্যাড. আলী হায়দার বাবুলকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবদল নেতা বলেন, আহবায়ক ও সদস্য সচিব নিয়ে কারো মধ্যে কোন ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ এক নম্বর যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিনকে নিয়ে। কারন অনেক সিনিয়র নেতা রয়েছেন। তাদের কোন স্থানে রাখা হবে। তবে স্থানীয় বিএনপির কয়েক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে নিরিবিলি বাসায় বসে যারা নিরাপদ জীবনযাপন করেছেন, পুলিশের সাথে লিয়াজো করে চলেছেন, তাদের অনেকেই পদ বঞ্চিত হয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছেন। তিনি তারুন্য দীপ্ত এবং দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করেছেন। এক্ষেত্রে বয়স বিবেচনা করা হয়নি।
নতুন আহ্বায়ক কমিটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে এক যুবদলের নেতা বলেন, সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক এ্যাড. আলী হায়দার বাবুল ত্যাগি নেতা। আন্দোলন সংগ্রাম সক্রিয় অংশ গ্রহন করেছেন। এ্যাড. আলী হায়দার বাবুল, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আলতাফ মাহমুদ সিকদার ও কেএম শহীদুল্লাহ, এ্যাড. মহসিন মন্টু, আনোয়ারুল হক তারিন, আনম সাইফুল আহসান আজিমের মতো জ্যেষ্ঠ নেতাদের এক প্রকার অবমুল্যায়ন করা হয়েছে এই কমিটিতে।
আরেক সাবেক ছাত্র নেতা বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি না দিয়ে পরিধি আরো বাড়ানো উচিত ছিলো। কারন পূর্বের আহবায়ক কমিটির পরিধি যখন বাড়ানো হয়, তখন একটি অংশের নেতারা বাদ পড়ে যায়। কমিটিতে যারা থাকেন, তারা নিজেদের অনুসারীদের রাখেন। এতে দলের মধ্যে একটি অংশ নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। এবারে যেন সেই ঘটনার পূনরাবৃত্তি না ঘটে সেই দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির খেয়াল রাখতে হবে।
বর্তমানে দলের দু.সময়। এই সময়ে নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং বিভেদসহ দলের কমিটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মহানগর যুবদলের এক নেতা বলেন, এক নম্বর যুগ্ম আহবায়ক নাসরিন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। দলের ত্যাগি নেতা, এ নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বয়সের চেয়ে তাকে অনেক উপরে নিয়ে আসা হয়েছে। যেটা ঠিক হয়নি।
একইভাবে মহানগর বিএনপির আরেক নেতা আইনজীবী বলেন, সিনিয়র কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তাদের নিয়ে কমিটি করলে কোন সমস্যাই থাকতো না।
মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. আল আমিন বলেন, ছাত্রদল থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। যুবদলের কমিটিতে পদ ছিলো। সাবেক আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলাম। আমার যে বয়স, তাতে এখন আমাকে কোথায় রাখা হবে এমন প্রশ্ন করে বলেন, আমি তো দলীয় সকল কর্মসুচীতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছি। ভবিষ্যতে করবো।
তবে নতুন কমিটি ঘোষনায় খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল পূর্বে এক বক্তৃতায় আহবায়ক মো. মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার এবং এক নম্বর যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন নিজেদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আদর্শের আদর্শিত হয়ে ভেদাভেদ ভুলে সকলকে এক হয়ে রাজপথে সরকার পতনের আন্দোলনে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী রক্ত দিয়ে হলেও পালন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
নতুন কমিটি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চান না সাবেক কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক এ্যাড. আলী হায়দার বাবুল। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জড়িত। শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে দলকে ভালোবাসি। আমৃত্যু বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকবো। বিএনপি রাজনীতির করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৭ বার জেলে গিয়েছেন। বর্তমান সরকারের সময় ১২ বার জেলে গিয়েছেন। পদের জন্য রাজনীতি করেন জানিয়ে বলেন, এর আগেও ১০ বছর কোন পদ আমার ছিলো না। আমি দলের কর্মী হয়ে ছিলাম। এবারো দলের কর্মী হয়েই রাজনীতি করবো।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, তাকে সদস্য সচিব করায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ। তার প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, তা জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবেন। দলের মধ্যে কোন বিভেদ রাখবেন না। সবাইকে নিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।