4:09 pm , July 5, 2024

৮ মাসেই মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর বাজিমাত
অতিথি প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ ১১ বছর পর নগরীর ১৬৫টি রাস্তা ও ৫৫ কিলোমিটার ড্রেন এর একসাথে নির্মান কাজ শুরু হওয়ায় মহাখুশি জনতা।
দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর পর বরিশাল মহানগরীতে শুরু হয়েছে একসাথে ১৬৫ টি রাস্তা নির্মান, পুন:নির্মান, সংস্কার ও মেরামতের কাজ। মোট ৩২২ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মান করা হচ্ছে এসব রাস্তা। ইতিমধ্যে ৪টি রাস্তা নির্মানের কাজ শেষ হয়েছে। একই সাথে চলছে ৫৫ কিলোমিটার ড্রেনের নির্মান ও সংস্কার কাজ । আগামি মাস নাগাদ শেষ হবে আরো ২০টি রাস্তার কাজ এবং ডিসেম্বর নাগাদ বদলে যাবে এই নগরীর রাস্তার পুরো চালচিত্র।
বিসিসি’র বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দায়িত্ব গ্রহণের সময়টাতে নগরীর রাস্তারসহ সার্বিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ৭৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ পান। সেই প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে সম্প্রতি ২৬৭ কোটি টাকা ছাড় করার পর পরই নগরীতে শুরু হয়েছে উন্নয়নযজ্ঞ। তার মেয়াদকালের মাত্র ৮ মাসের মধ্যেই নগরীর যে দিকে দৃষ্টি যায় শুধু দেখা যায় উন্নয়নের সোপান। ইতিমধ্যেই দরপত্র চূড়ান্ত করে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে ১৩৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ৪০ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ শুরুর জন্য। ইতিমধ্যে সমাপ্ত করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে অন্য একটি প্রকল্পের ৪টি রাস্তা ও ১৪ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ। বরিশাল নগরীর যেদিকে দৃষ্টি যাচ্ছে সেদিকেই চলছে রাস্তা খোড়াখুড়ির কাজ।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল বাসার জানান, দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিসিসি’র কোন প্রকল্প ছিলো না। বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রকল্পের শেষ নেই। আসলে আমাদের মহানগরীতে এখন উন্নয়ন কাজের মহাযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। আমরা ২৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬১টি রাস্তার কাজ শুরু করেছি ১৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে। কাজ দ্রুত করে নতুন বরিশাল উপহার দেবো আমরা। মানুষ আগামী ৬ মাসের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাবে। বৃষ্টি আমাদের উন্নয়নের পথে কোন বাধাই হবে না কেননা আমরা বিটুমিনের কাজ করবো সবার শেষে।
বরিশাল নগরীর ২০৫৬টি রাস্তা ও লেনের মধ্যে প্রায় ২শ রাস্তা হয়ে পড়েছিলো সম্পুর্ণ চলাচল অনুপযোগী। দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ধরে এর একটিতেও ছিলো না সংস্কারের কোন কাজ। খানাখন্দ আর জলাবদ্ধতায় এসব এলাকার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা ছিলেন মহাবিপদে। গতমাস থেকে শুরু হয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এসব দুর্ভোগ লাঘবের কাজ। প্রথম অবস্থায় শেষ হয়েছে ৪টি রাস্তার কাজ। শুরু হয়েছে ১৩৫ কিলোমিটারের ১৬১ টি রাস্তার উন্নয়ন কাজ। একাজে খুশি নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের জনগন। এবার তাদের দাবি রস্তার কাজ যেন মান সম্পন্ন হয়।
পরিবেশবীদ কাজী মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর থেকে রাস্তা নিয়ে আমরা ছিলাম চরম দুর্ভোগে। এখন রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে তবে আশা করবো কাজের মান যেনো ভালো হয়। রাস্তার সাথে পানি নিস্কাশনেরও যেন ব্যবস্থা করা হয়।
গোরস্থান রোডের অপর এক বাসিন্দা জানান, এই রাস্তার উপর দিয়ে পিচ, সুরকি, পাথর, ইট সবই উঠে গেছে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায়। রাস্তা দেবে যাওয়ায় অনেকের বাড়ির দেয়াল পর্যন্ত ধসে গেছে। এখন রাস্তার নির্মানকাজ শুরু হওয়ায় আমরা আশাবাদি।
টিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা এক কলেজ শিক্ষক জানান, বর্ষার সময় লজ্জায় এই পথ দিয়ে মেয়েরা চলতে পারতো না। ভাঙ্গা রাস্তায় বছরের পর বছর সবাই অনেক কষ্ট করেছি। আমাদের কষ্ট লাঘবের দিন মনে হয় এসেছে। শুধু এই রাস্তা নয় অনেক রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের আশা থাকবে রাস্তার স্থায়ী উন্নয়ন হবে।
এবারে ছোট বড় সব রাস্তা নির্মানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ৫ বছরের গ্যারান্টি নেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে দ্রুত রাস্তা নির্মান করা হচ্ছে। মোট ১৩৮ কিলোমিটার রাস্তার কাজকে ১৮টি প্যাকেজে বিভক্ত করে সার্বক্ষনিক কাজ মনিটরিং এ রয়েছে বিসিসি’র কর্মীরা। জলাবদ্ধতাকে মাথায় রেখে চার লেয়ারে নির্মিত এসব রাস্তায় স্থায়ীত্বের উপর দেয়া হচ্ছে সার্বাধিক গুরুত্ব। রাস্তার সাথে একইভাবে শুরু করা হচ্ছে ৫৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মানের কাজ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রাকিব হাওলাদার বলেন, রাস্তার কাজ আগে অনেকটাই যেনতেন ভাবে করা হয়েছে। আমরা নির্মান করছি ৫ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে। ৫ বছরের মধ্যে রাস্তার কোন ক্ষতি হলে আমরা নির্মান করে দেবো। আগামি ২ মাসের মধ্যে ২০টি এবং ৬ মাসের মধ্যে সবকটি রাস্তা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কার্য সহকারী মিজানুর রহমান, নির্মান কাজ যাতে সিডিউল অনুযায়ী শতভাগ হয় সে জন্য আমাদের সার্বক্ষনিক মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। অনেক বছর পর রাস্তার কাজ হওয়ায় এবারে মনিটরিং অন্য সব বারের চেয়ে কঠিন করা হয়েছে। এবারে এলাকাওয়ারি উন্নয়নকাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিরাও। তাদের মতে আগের সব নেতৃত্ব নিজেদের ইচ্ছেমতো উন্নয়ন কাজ করাতে গিয়ে উন্নয়নের কিছুই হয়নি। এবারে প্রাপ্ত প্রকল্পের টাকা সমবন্টন হওয়ায় সবার মুখ রক্ষা হবে ভোটারদের কাছে।বিসিসি’র ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার বলেন, আমি এই নিয়ে তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এবারের মতো এমন সমবন্টন কখনো দেখিনি। এতো রাস্তার উন্নয়ন কাজ একসাথে বরিশালবাসী আগে দেখেনি। বিগত মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ দিনের বেলায় অফিসে বসতেন না। তার আগের মেয়র আহসান হাবিব কামাল বিএনপির লোক হওয়ায় কোন প্রকল্প আনতে পারেননি। আসলে এই দুই মেয়রের কেউই জনগনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। যা মাত্র ৮ মাসে দিখিয়ে দিয়েছেন বর্তমান নেতৃত্ব।
মেয়র আবুল খায়েরের বিজয়ের এক বছর পূর্তির হিসেব নিকেশ এমন কথাই বলছে। এই সময়টায় বিসিসি’র জন্য তিনি ৭৯৭ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে এনেছেন। এই প্রকল্পের মধ্যে ২৬৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের টেন্ডার হয়ে এখন সে কাজ শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৫০ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং, ৪৩ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা, ৫০ কিলোমিটার সিসি রাস্তা, ১০০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মান, ৯০৪৫ বর্গমিটার আরসিসি চত্বর, নগরীর ২১ টি রাস্তার মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধন, ৪ টি ভাস্কর্য নির্মান, নির্মান সহায়ক যানবাহন ক্রয়। এছাড়া সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এখন অনুমোদনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এরমধ্যে আছে ৯২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর খাল খনন ও খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মানসহ নান্দনিক সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। একই সাথে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ২২শ কোটি টাকার আরো একটি সমন্বিত প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে নগরীর রাস্তা,ড্রেন, বিদ্যুৎ, খাল ও পানি সরবরাহের অত্যাধুনিক করনের কাজ। এছাড়া অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মান করা হবে নতুন নান্দনিক অত্যাধুনিক নগর ভবন? এক কথায় মেয়র নির্বাচিত হবার এক বছরেই বাজিমাত করেছেন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন। আগামির বরিশালকে স্বপ্নিল বরিশাল গড়া হবে এ প্রত্যয় নিয়ে মেয়র খায়ের বলেছেন সব কাজ শেষ করতে পারলে বরিশাল হবে প্রকৃত রুপসী বাংলা। আগামি চার বছরে যার দৃশ্যপট হবে।