4:05 pm , June 26, 2024

জুবায়ের হোসেন ॥ সম্প্রতি বিলুপ্ত করা হয়েছে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি। এখন নতুন নেতৃত্বে কারা আসবেন এ নিয়েই চলছে আলোচনা।
যে কোন সময় নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে। এনিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছেন পদ প্রত্যাশী নেতাসহ কর্মী-সমর্থকরা। অনেকে বলছেন মাঠ পর্যায়ে যারা আন্দোলনে ছিলেন এমন নেতাদের দিয়ে গঠন করা হবে নতুন কমিটি।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর তিন সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে মো. মনিরুজ্জামান খান ফারুক কে আহবায়ক, এ্যাড. আলী হায়দার বাবুলকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এবং ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্য সচিব করা হয়। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ৫ নভেম্বর কমিটি অনুমোদন করেন। ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারী আহবায়ক ৪২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন লাভ করে। গত ১৩ জুন আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর পর থেকেই বরিশাল বিএনপিতে চলছে নতুন কমিটি নিয়ে নানা গুঞ্জন। দলীয় সূত্র জানায়, যেহেতু আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে এখন সুপার ফাইভ কমিটি গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে সম্ভাব্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে প্রথমেই আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। কারণ সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে মজিবর রহমান সরোয়ারের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য তৃনমূল নেতাকর্মীদের। তবে বর্তমানে মজিবর রহমান সরোয়ার দলের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে মহানগরের নেতৃত্বে তাকে আনা হবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, দল যদি দায়িত্ব দেয় সেক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত মেনে বরিশালে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে দলকে এগিয়ে নিতে হবে। দল দায়িত্ব দিলে একাধিক পদ কোনো বিষয় নয় বলেও তার অভিমত।
সভাপতি পদে জোরেশোরে আরো শোনা যাচ্ছে বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আলী হায়দার বাবুলের নাম। সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে তার সরব উপস্থিতি ছিলো সব সময়। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছেন বিএনপির এ নেতা, শিকার হয়েছেন হামলা-মামলার। দলের দুর্দীনে মাঠে ছিলেন আলী হায়দার বাবুল। তৃনমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন দলে ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করলে সভাপতি পদে আলী হায়দার বাবুলের নামটি চলে আসে সবার আগে।
সভাপতি পদে নাম উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) এ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিনের। দলের জন্য নিবেদিত এই নেত্রীও আন্দোলন সংগ্রামে দলের হয়ে হাল ধরেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রেই। আন্দোলন করতে গিয়ে জেলও খেটেছেন। তাই নেতাকর্মিরা তাকেও দেখতে চান এই পদে। বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, আদর্শের জায়গা থেকে বিএনপি করি। দীর্ঘ ৭ বছর কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সাথে। দলের কাছে এখন ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা পদোন্নতি চাই। দলের চেয়ারম্যান যদি তাকে কোন দায়িত্ব দেন সে বিষয়ে কোন দ্বি-মত নেই।
ত্যাগী নেতা হিসাবে পরিচিত জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক চাঁনের নামও উঠে এসেছে মহানগরের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে। তাকে মহানগর বিএনপির সভাপতি করা হতে পারে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। বরিশাল বিএনপির রাজনীতিতে তার অবদান অনেক সেই তুলনায় দল থেকে তেমন কিছুই পাননি।
এ বিষয়ে এবায়দুল হক চাঁন বলেন, দলের প্রতি ভালবাসা সব সময় ছিল, থাকবে। তার নাম কোন পদের জন্য শোনা যাচ্ছে এমন কোন বিষয় তিনি জানেন না। তবে তাকে যদি দল যোগ্য মনে করে কোন পদে দায়িত্ব দেয় সেটা আলোচনা সাপেক্ষে হতে হবে।
সভাপতি হিসেবে সদ্য সাবেক হওয়া মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের অবস্থান পুনরায় বহাল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই রয়েছে বলে একটি সূত্র দাবী করছে। আহবায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি দলকে তার সর্বস্ব দিয়ে পরিচালনার চেষ্টা করেছেন। সফলও হয়েছেন বেশ। সর্বশেষ আন্দোলনে প্রায় ৩ মাস কারান্তরীণ ছিলেন এই নেতা। তাই মেয়াদ শেষ হওয়া আহাবায়ক কমিটির পর এবার সভাপতি হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনেছেন সব সময়। আন্দোলন সংগ্রামে পিছপা হননি কখনও। দায়িত্ব পাওয়ার পর বরিশাল মহানগর বিএনপিকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন। তিন মাসের অধিক সময় জেল খেটেছেন। সব দিক বিবেচনা করে কিছুটা আশা তো থাকতেই পারে। তার পরেও দলের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মাথা পেতে নেব।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন মহানগর বিএনপির অন্যতম নেতা জিয়া উদ্দিন সিকদার। তৃনমূল থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মিরা তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। দলের দু:সময়ে এই নেতা মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক হিসেবে এবং ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে যোগ্যতার প্রমান দিয়েছেন। তাই বরিশাল মহানগর কমিটিতে সাধারন সম্পাদক হিসেবে তার অবস্থান বেশ পোক্ত বলে মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, দলকে ভালবেসে চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালন করে আসছি শুরু থেকেই। রক্তে মাংসে মেশা এই দলের জন্য নিজের সর্বস্ব দিতে রাজি। দলের চলমান প্রক্রিয়ায় আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে এবং সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় তা আবার পুনর্গঠন হবে। দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে কমিটিতে যেখানে রাখার যোগ্য মনে করবেন আমি সেখানেই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবো। এ বিষয়ে আমি পুরোপুরি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থাশীল।
সাধারন সম্পাদক পদ দাবী করছেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান শামীম। দলের একজন নিষ্ঠাবান ও সাংগঠনিক নেতা হিসেবে কর্মীদের কাছে তার পরিচিতি রয়েছে।
আক্তারুজ্জামান শামীম বলেন, ৪০ বছর এই নগরে বিএনপির সৈনিক হয়ে কাজ করছি। দল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করেছি নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে। বরিশাল মহানগরের মৃত প্রায় যুবদলের কার্যক্রমকে করেছি উজ্জীবিত। যদি দল তাকে যোগ্য মনে করে কোন দায়িত্ব প্রদান করে তবে নিজের শতভাগ দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করবো। দলের দু:সময়ের যোদ্ধা হিসেবে ছিলাম, আর ভালবাসার এই দলের হয়ে ভবিষ্যতেও থাকবো।
সাবেক আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ পুনরায় সাধারন সম্পাদক হতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। এবিষয়ে মীর জাহিদ বলেন, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে এই পর্যন্ত এসেছি। টানা চারবারের কাউন্সিলর ছিলাম। দলের সিদ্ধান্ত মেনে এবার নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছি। সব সময় দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত ছিলাম এখনো আছি। ভবিষ্যতে যাদের দায়িত্ব দিবে তাদের নিয়েই কাজ করবো।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে চমক আসতে পারে মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে। এই পদে অন্যতম দাবীদার তৃনমূল পর্যায়ে আন্দোলন সংগ্রামের সাহসী নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন। বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে কার-কি ভুমিকা ছিলো সেই হিসেব করলে সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন নাসরিন। নারী হলেও রাজপথে সব সময় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন এই নেত্রী। ছাত্রদল থেকে উঠে আসা এই নেত্রীর ত্যাগ দলের অনেকের চেয়েই বেশি। এছাড়া মামলার পাল্লাও এবং জেল খাটার পরিমানও আফরোজা খানম নাসরিনের অনেক নেতার চেয়েও বেশি। মানবিক বিষয়ে বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে হাই কমান্ডের নির্দেশে এবং উৎসব পার্বনে অসহায় মানুষ ও নেতাকর্মীদের পাশে দাড়িয়েছেন তিনি। আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে সবসময় চলেছি। এখনো চলবো। তিনি বলেন, নারী হিসেবে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে রাজনীতি করেছি। আশা করি দল আমার ত্যাগের মূল্যায়ন করবে।