4:46 pm , June 25, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল জেলা প্রশাসকসহ ৫ কর্মকর্তার সম্মানীর নামে এইচএসসির প্রবেশ পত্র বিতরনে ৫০০ টাকা করে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সরকারী পাতারহাট আরসি (রসিক চন্দ্র) মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা উপাধ্যক্ষ’র দাবি করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে তার পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশ পত্রের জন্য কেন ৫০০ টাকা দিতে হবে উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের কাছে জানতে চায়।
জবাবে উপাধাক্ষ্য শহীদুল ইসলাম বলেন “টিএনওর সম্মানী পাঠাইতে হবে, ডিসির সম্মানী পাঠাইতে হবে, এডিসির সম্মানী পাঠাইতে হবে। দুইজন ট্যাগ অফিসারকে সম্মানী দিতে হবে। উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম আরো বলেন, তিনি ২১ দিনের ট্রেনিং করে এসেছেন কয়েকদিন আগে। সরকার তাকে দিয়ে দিয়েছে ৫৩ হাজার টাকা আর তার খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা।এ সময় ছাত্রী আরো বলে, স্যার ৫০০ টাকা দিয়া আমাদের প্রবেশ পত্র নিতে হবে। জবাবে উপাধ্যক্ষ বলেন, এইটা তোমাদের কাছে আবেদন। ওই ছাত্রী বলেন, স্যার আমরা যদি ৫০০ টাকা না দিয়ে এডমিট কার্ড নিতে না পারি।
জবাবে উপাধ্যক্ষ বলেন, এটা তোমার উইশ। ছাত্রী বলেন এক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি।
জবাবে উপাধ্যক্ষ বলেন, তুমি আমার সাথে যুদ্ধ করতে নামো, যুদ্ধ কন্টিনিউ করতে পারো। কোন সমস্যা নেই। সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার তুমি যুদ্ধ করে যেতে পারো। যুদ্ধ করা তোমার অধিকার।
এ সময় ছাত্রী বলে, ৫০০ টাকা দিয়ে যদি না নিতে পারি ?
জবাবে উপাধ্যক্ষ বলেন, সেটা তোমার ব্যক্তিগত বিষয়।
ছাত্রী বলে ২৬ টাকা দিয়ে ফরম ফিলাম করে আবার ৫০০ টাকা দেয়া সবার তো এবিলিটি থাকে না।
জবাবে উপাধ্যক্ষ বলেন, এবিলিটির কথা বইলো না। যারা গরীব তারা টাকা দিয়া গেছে, রিকসাওয়ালার পোলায় আইয়া টাকা দিয়া গ্যাছে। যারা ধনী সামর্থ্যবান তারা এসে যুদ্ধ করে। প্রিন্সিপালকে কিভাবে হেনস্থা করা যায়। তুমি যে এন্ড্রয়েট যে সেটটা তুমি ব্যবহার করো, আমি যখন ষ্টুডেন্ট ছিলাম, তখন ওইটা তো কল্পনাও করতে পারি নাই। তুমি গরীব হইলা কোনখান দিয়া। খালি আমার উপর দায় চাপানো, আমার বেতনের টাকা দিয়া তো তোমাগো জন্য কিছু করতে পারবো না। আমার তো সংসার আছে।
তার এই বক্তব্য ভাইরাল হবার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম ২০২৩ সালে ২৫ জানুয়ারী অধ্যক্ষ এবিএম মাহবুবুল হক অবসরে যায়। এরপর থেকে উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম দায়িত্ব নিয়েই জড়িয়ে নানা বিতর্কমুলক কর্মকান্ডে।
নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে বেলা ১২ টার দিকে কয়েকশত শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করেন। তাদের দাবি ডিসি ও ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।
ওসি বলেন, ৫/১০ মিনিটের মতো সময় অবস্থান করেছিলো।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন কুমার গাইন বলেন, এডমিট কার্ড দেয়ার সময় কোন অর্থ নেয়া যাবে না। সেটা যদি পূর্বের বকেয়া হয়, তাও নেয়া যাবে না। এটা শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে আদেশ। তবুও যদি এরকম কেউ করে থাকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রবেশ পত্র দেয়ার জন্য টাকা নেয়ার নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ন অবৈধ। তার এ বক্তব্যের বিষয়টি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত উপাধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলামের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।##