4:20 pm , June 24, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কৃষি অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদনের বিরল সাফল্যের পরে ঘূর্ণিঝড় রিমাল’এর তান্ডবে বীজতলা সহ রোপা আউশের ব্যাপক ক্ষতির ফলে লক্ষ্যে পৌঁছান সম্ভব হচ্ছে না। অথচ এবারো সারা দেশের প্রায় ৩০ভাগ আউশের আবাদ ও উৎপাদন হওয়ার কথা বরিশাল কৃষি অঞ্চলে। কিন্তু রিমাল তান্ডবে ৬০ ভাগের বেশী লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ‘খরিপ-১’ মৌসুম প্রায় শেষ হলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আউশ আবাদের শেষ সীমা নির্ধারন করা হয়েছে।
আউশ আবাদের রেশ ধরে উৎপাদন ঘাটতির ফলে প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশালে এবার খাদ্য নিরাপত্তায় কিছুটা হলেও বিরুপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। সমাপ্ত প্রায় খরিপ-১ মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে ২ লাখ ৪০ হাজার ৫শ হেক্টরে আউশ আবাদ লক্ষ্য নির্ধারন করা হলেও ডিএই’র সর্বশেষ হিসেবে আবাদ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ২৬ হাজার হেক্টরের মত। ফলে প্রায় সোয়া ৬ লাখ টন আউশ চাল উৎপাদন লক্ষ্যে পৌছানও সম্ভব হবেনা।
চলতি মৌসুমে সারা দেশে ১৩ লাখ ৭ হাজার হেক্টরে আউশ আবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত ধান থেকে যে ৩৫ লক্ষাধিক টন চাল পাবার কথা, সে লক্ষ্য অর্জন না হবার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে বলেও মনে করছেন একাধিক দায়িত্বশীল মহল।
গত বছর খরিপ-১ মৌসুমে একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও সারা দেশে আবাদকৃত প্রায় সাড়ে ১০ লাখ হেক্টরে উৎপাদিত আউশ ধান থেকে ৩০ লাখ ৪০ হাজার টন চাল পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩৩ ভাগ বৃদ্ধি করা হলেও গত বছরের পর্যায়েও পৌঁছান সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে কৃষিবীদদের মধ্যে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবন বরিশাল অঞ্চলে মৃত্যু আর ধ্বংস নিয়ে বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এর তান্ডবে কৃষি, মৎস্য প্রাণিসম্পদ ও বনাঞ্চলের ক্ষতির পরিমানই ছিল কয়েক হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে কৃষিখাতেই ক্ষতির পরিমান প্রায় হাজার কোটি। এ ঝড়-জলোচ্ছাসে প্রায় ৫ লাখ ২৮ হাজার পরিবারের ২২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে। মাঠে থাকা ফসলের প্রায় ২৬ ভাগ পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে আউশ বীজতলার প্রায় ৪২ ভাগ ও রোপা আউশের ২২ ভাগ পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।
আউশের এ বিপর্যয়ে বরিশালের কৃষিযোদ্ধারা মারাত্মক সংকটে। বিশেষ করে মৌসুমের শুরতে বৃষ্টির অভাবে আউশের বীজতলা তৈরী ও রোপন নিয়ে মারাত্মক সংকটের মধ্যভাগে এসে রিমাল-এ ভর করে মাঠে থাকা বীজতলার প্রায় অর্ধেকই বিনষ্ট হবার ফলে রোপন নিয়ে ভয়াবহ সংকটে পড়েন বরিশালের কৃষিযোদ্ধারা। রোপনকৃত আউশের ২৬ ভাগই অবিরাম বৃষ্টি আর প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ পূরণ থেকে এবার অনেক পেছনে খরিপ-১ মৌসুমের এ প্রধান ফসল।
তবে আউশের এ দুঃসংবাদের আগেই সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বোরো আবাদ ও উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন বরিশালে কৃষকরা। সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার ৪% অতিরিক্ত, এযাবতকালের সর্বাধিক প্রায় ৩ লাখ ৯১ হাজার হেক্টরে বোরা আবাদ সম্পন্ন করেন কৃষকরা। ফলে এবার বরিশাল অঞ্চলে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার টন বোরো উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম করে প্রায় ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
তবে প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে ধানের দাম না বাড়ায় কৃষক ও কৃষি অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট নাজুক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। সাথে প্রকৃতির বিরূপ আচরন কৃষি ও কৃষি অর্থনীতির জন্য বার বারই বড় দুর্যোগ সৃষ্টি করছে। দুবছর আগে রবি মৌসুমেই ডিজেলের দাম প্রায় ৩০ ভাগ বৃদ্ধি বোরো আবাদ ও উৎপাদনে নতুন সংকট তৈরীর পরে এবার মৌসুম শেষ হবার পরে কিছুটা হ্রাস করা হলেও তা কৃষকের কোন উপকারে আসেনি। সাথে গত দু বছরে দু দফায় সারের মূল্যবৃদ্ধিও সংকটের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে প্রতিমণ বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় প্রায় সাড়ে ১১শ টাকায় পৌছলেও ধানের দাম ১১শ টাকার বেশী নয়।