নগরীতে বাবা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার নগরীতে বাবা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার - ajkerparibartan.com
নগরীতে বাবা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার

4:19 pm , June 12, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ৫ বছরের শিশু কন্যাকে গলাকেটে হত্যার পর নিজের গলা বটি দিয়ে কেটে আত্মহত্যা করেছেন হতাশাগ্রস্ত বাবা।
বুধবার সকালে বরিশাল নগরের কাউনিয়া প্রধান সড়ক পানির ট্যাংকি সংলগ্ন স্বপ্ন বিলাস ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে পাঁচ বছর বয়সী কন্যা রাবেয়া বশরি রোজা ও বাবা নাঈম হাওলাদারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মহানগর পুলিশের কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিবার জানিয়েছে ঘরে থাকা বটি দিয়ে প্রথমে কন্যাকে জবাই করে হত্যা করেছে। পরে বাবা নাঈম নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করে। কিন্তু বিষয়টি এত সহজভাবে নেয়া হচ্ছে না। তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পরিদর্শক আরো জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
একই কথা জানিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, এত দ্রুত সিদ্বান্তে আসা যাচ্ছে না। একটু তো রহস্য রয়েছে। পরিবারের দাবি প্রথমে কন্যাকে হত্যা করে আত্মহত্যা করে নাঈম। আমরা এর উপর নির্ভর করছি না। বিষয়টি আরো গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে, স্বপ্ন বিলাস ভবনের মালিক জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, নাঈম ও তার পরিবার ১ মে আমার স্বপ্ন বিলাস ভবনের চার তলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটে উঠেছিল। এরপর থেকে তারা তাদের মতো ছিলো। সকালে তার ছেলে কল করে জানিয়েছে, ‘ওই ফ্ল্যাটে ডাবল মার্ডার হয়েছে। তিনি এসে দেখেন বাসায় পুলিশ এসেছে। পুলিশকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছে তা পুলিশ বলতে পারবে।
বাড়ীর মালিকের ছেলে নাঈমুর রহমান পলাশ জানান, দেড় মাস পূর্বে বাসা ভাড়া নেয় তারা। নাঈম, তার কন্যা, নাঈমের বোন ও বোনের কন্যা এবং বাবা-মা ওই বাসায় থাকতো। বাসায় আসার পর থেকে বিষন্ন দেখা গেছে নাঈমকে। পরে জানতে পারি তার স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে। তার ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তানকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর এ নিয়েই তার মধ্যে বিষন্নতা ছিলো।
ঈদের পর একটি চাকরিতে যোগদান করার কথা ছিলো জানিয়ে পলাশ জানান, ‘শুরুতে আমরা জানতাম নাঈম চাকরি করে। পরে জানতে পারি চাকরি নেই।
পলাশ আরো জানান, নাঈমের বোন আখি তার ১২ বছরের কন্যা নুসরাত জাহান জান্নাতি পুস্পাকে নিয়ে বাসায় থাকতো। তবে তার স্বামী মঞ্জুরুল ইসলামকে কখনো আমরা দেখিনি। সে ঢাকায় চাকরি করছে বলে শুনেছি।
পলাশ বলেন, সকাল ৯ টার দিকে নাঈমের বোন আখি আক্তার বাসায় চিৎকার শুরু করে। চতুর্থ তলার পাশের ফ্ল্যাটে থাকায় তিনি শুনতে পেয়ে নাঈমের ঘরে যান। সেখানে গিয়ে দুইজনের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
আখি আক্তার জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে ভাই ও ভাতিজিকে ডাকতে তাদের কক্ষে যান। এ সময় দেখতে পান রক্তাক্ত অবস্থায় দুইজন পড়ে রয়েছে। আমাদের চিৎকার শুনে বাড়িওয়ালা এসে পুলিশকে জানিয়েছে। নাঈমের বাবা শাহজাহান হাওলাদার বলেন, আমি, নাতনি রোজা ও ছেলে নাঈম রাতে একরুমে ঘুমিয়েছি। খাটে নাঈম ও রোজা ঘুমিয়েছিলো। আমি ফ্লোরে ঘুমিয়েছিলাম। সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে যখন বাসা থেকে বের হই তখন নাতনি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলো। নাঈম পান্তা ভাত খেতেছিলো। বের হওয়ার সময় নাঈম আমার কাছে ২০ টাকা চেয়েছিলো। তাকে টাকা দিয়ে তিনি তার কর্মস্থল অনন্যা ফ্লাওয়ার মিলে চলে যায়।  সকাল সাড়ে ৯ টায় মেয়ে আখি জানিয়েছে ছেলে ও নাতনি আত্মহত্যা করেছে। এরপর বাসায় এসে নাতনি ও ছেলের রক্তাক্ত লাশ ফ্লোরে পড়া অবস্থায় পেয়েছি।
শাহজাহান হাওলাদার জানান, বরিশাল নগরীর দক্ষিণ পলাশপুরের বাসিন্দা নূর ইসলাম মোল্লার কন্যা অনা আক্তারের সাথে ৬/৭ বছর আগে নাঈমের সাথে অনেকটা আমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। এরপর চার মাসপূর্বে অনা স্বামী নাঈমকে ডিভোর্স দিয়ে দেন মোহরের পাঁচ লাখ টাকা নেয়। এ সময় নাঈম কিছুটা ভেঙ্গে পড়ে।
তিনি জানান, নাঈম অপসোনিন কোম্পানীর গাড়ি চালক ছিলো। সেই চাকরি যাওয়ার পর নতুন একটি চাকরি খুঁজতে ছিলো। এরই মধ্যে গত রাতে অনা নাঈমকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে ‘নাতনি রোজাকে নিয়ে যাবে’। এরপর থেকে নাঈম চরম বিষন্নতায় ভুগতেছিলো।
সহকারী পুলিশ কমিশনার সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে শিশুকে গলাকেটে হত্যার পর বাবা নিজের গলাকেটে আত্মহত্যা করেছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারনেই এ ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে নাঈমের সাথে তার স্ত্রীর তালাক হয়েছে। এরপর থেকে শিশুকন্যাকে কাছে রাখেন নাঈম। পরিবারের স্বজনদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, গতকাল সকালে রোজার মায়ের আসার কথা ছিল। রোজাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এ বিষয়টি নাঈম মানতে পারেনি। সেখান থেকেই হয়তো এ হত্যাকান্ড সংঘটিত করতে পারে। তবে বিষয়টি আরো গভীর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম জানান, এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে। তদন্ত না করে প্রকৃত রহস্য কি বলা যাবে না।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT