4:22 pm , June 11, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বর্ষা সহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মৌসুমের আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে-পরে বরিশালের ঘর ও কর্মস্থলমুখী মানুষের ভ্রমণকে নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে এবারো নিস্ক্রীয় রাষ্ট্রীয় সড়ক, নৌ ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলো। ফলে রাজধানী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চল সহ সারা দেশ থেকে বৃহত্তর বরিশালের বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিকটজনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা সহ কর্মস্থলে ফিরতে দুর্ভোগের পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পরার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি বিশাল জনগোষ্ঠিকে বেসরকারী সেক্টরের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মী হয়ে পড়ার শঙ্কার কথা বলছেন সাধারন যাত্রীরা। রাষ্ট্রীয় সড়ক নৌ ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সময়ে জনগনের স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ দায়িত্ব ভুলে যান বলেও অভিযোগ সাধারন যাত্রীদের। জনগনের দুর্ভোগকে পুঁজি করে বেসরকারী পরিবহন সেক্টরগুলোর নৈরাজ্য সব সীমা অতিক্রম করলেও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তেমন কোন হেলদোল নেই। অথচ দুর্যোগপূর্ণ মৌসুমের আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে-পরে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলো সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে কিছু বাড়তি যানবাহনের ব্যবস্থা করলে এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ ভ্রমণে অনেকটাই ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারত বলে মনে করছেন অনেকে।
রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি’র অন্যতম লাভজনক বরিশাল বাস ডিপোটি আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে-পরে কোন ‘বিশেষ বাস সার্ভিস’ প্রবর্তন করছে না সচল বাসের অভাবে। ডিপোটিতে ৭০টি যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে সচল ৫৪টি বাসের ৫২টি বরিশাল-ঢাকা ছাড়াও এ বিভাগীয় সদর থেকে খুলনা, যশোর, রংপুর, রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করছে। কিন্তু আসন্ন ঈদে বাড়তি যাত্রী পরিবহনের কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোটি দেশের অন্যতম লাভজনক ইউনিট। কিন্তু গত ৩ বছরেও কোন নতুন বা পুরনো যাত্রীবাহী বাস জোটেনি এ ডিপোটির ভাগ্যে। ফলে ১৮টি বাতানুকুল ও ৩৬টি দীর্ঘদিনের পুরনো বাস দিয়েই যাত্রী সেবা করছে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটি। তবে বাড়তি কোন বাস না থাকলেও বিদ্যমান গাড়ীগুলো দিয়েই অতিরিক্ত ট্রিপে যাত্রী পরিবহনের চেষ্টার কথা বলেছেন সংস্থাটির বরিশাল ডিপো ব্যবস্থাপক।
অপরদিকে রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি করোনা মহামারীর আগে থেকেই যাত্রীসেবা খাতে হাত গুটিয়ে নেয়ার পর থেকে গত সাড়ে ৪ বছরেও ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীণ ‘রকেট স্টিমার সার্ভিস’টি আর চালু করতে পারেনি। বিগত ঈদ উল ফিতরের সময় রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি ঘুমিয়ে থাকার পরে আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে ঢাকা থেকে ১৩ ও ১৫ জুন এবং বরিশাল থেকে ১৪,১৮ ও ২০ জুন তার ‘স্বেতহস্তি’ খ্যাত ‘যাত্রী বিড়ম্বনা’র ‘এমভি মধুমতি’ নৌযানটি দিয়ে যাত্রী পরিবহনের ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটির পরিচালক আশিকুজ্জামান জানান,‘চলতি বছরের মধ্যে আমরা বিলাসবহুল দুটি যাত্রীবাহী নৌযান হাতে পাবার পরে বরিশাল সেক্টরে যাত্রী সেবার মান উন্নত করার পরিকল্পনা করছি’।
তবে আসন্ন ঈদের অগে পরে রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে চাঁদপুর হয়ে বরিশালের যাত্রীরা বেসরকারী নৌযান মালিকদের মর্জির কাছেই জিম্মি হয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন সাধারন যাত্রীরা। গত ২০ বছরে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথের কথা বলে সরকারি শতাধিক কোটি টাকায় উপকূলীয় দুটি নৌযানের পুনর্বাসন ছাড়াও ৩টি নতুন নৌযান সংগ্রহ করলেও ২০১১ সালের মে মাস থেকে এ উপকূলীয় স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় নৌপথেও আগামী বছরের প্রথমভাগে নতুন নৌযান সংগ্রহের পরে পুনরায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন শুরুর হবে বলে সংস্থাটির দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা-বিমান পদ্মা সেতু চালুর পরে যাত্রী সংকটের ধুয়া তুলে বরিশাল সেক্টরে নিয়মিত ফ্লাইট সপ্তাহে ৩দিনে হ্রাস করে গত এপ্রিলের শুরুতে ১টি ফ্লাইট বৃদ্ধির মাসখানেক পরেই তা পুনরায় সংকোচন করেছে উড়োজাহাজ সংকটের কারেণ। কিন্তু ব্যাপক যাত্রী চাহিদার পরেও গত দেড় বছর ধরে বরিশাল সেক্টরে ফ্লাইট বাড়ানোর কথা বলা হলেও মাত্র ১টি ফ্লাইট বৃদ্ধি করে এক মাসের মাথায় তাও স্থগিত করা হয়েছে হজ্ব ফ্লাইটের কারণে। বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর বর্তমান সময়সূচি মোটেই ‘যাত্রীবান্ধব নয়’ বলে অভিযোগ সাধারন যাত্রীদের। অথচ ব্যাপক চাহিদার কারণেই বরিশাল-ঢাকা আকাশ পথে দেশের অভ্যন্তরীণ সেক্টরের সর্বোচ্চ মূল্যে টিকেট বিক্রী হচ্ছে।
তবে নিয়মিত ফ্লাইটের বাইরে আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে ১৩ ও ১৫ জুন এবং ঈদের পরে শুধুমাত্র ২২ জুন বিশেষ ফ্লাইট পরিচালন এর ঘোষনা দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। ফলে আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে পরে সরকারী আকাশ পরিবহন সংস্থাটির কাছ থেকে যথাযথ পরিসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বরিশাল সেক্টরের যাত্রীরা।