4:07 pm , June 7, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ জৈষ্ঠের দু:সহ তাপদাহে বরিশালের সাধারন মানুষের প্রান অনেকটাই ওষ্ঠাগত। বাড়ছে ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়ার রোগীর সংখ্যাও। প্রতিদিনই বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া নিয়ে প্রায় ৪শ রোগী ভর্তি হচ্ছে। যার প্রায় ৩০ ভাগই শিশু। বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বরিশাল অঞ্চলেও স্বাভাবিকভাবে বিস্তার লাভ করলেও তাপমাত্রার পারদ এখনো স্বভাবিকের ৬ ডিগ্রী উপরে। এমনকি বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে বরিশাল অঞ্চলেই।
অথচ মাত্র ১২ দিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমেল এ ভর করে প্রবল বর্ষণে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। গত মাসেই বরিশালে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে ৩৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৫০ ভাগ বেশী। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসই বরিশালে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতি জনস্বাস্থ্য ও কৃষির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে ওঠে। এপ্রিল মাসে বরিশালে বৃষ্টির পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৮৬% এবং মার্চ ৩০% কম।
কিন্তু টানা ১৮ ঘন্টা ধরে ‘রিমেল’এর তান্ডব শেষ হবার তিনদিন পর থেকেই বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ওপরে উঠতে শুরু করে। ফলে জনস্বাস্থ্যের সাথে কৃষি ক্ষেত্রেও বিরুপ আবহাওয়া নতুন করে প্রভাব বিস্তার করছে। দু:সহ তাপপ্রবাহের কারণে কৃষি পুনর্বাসন সহ মৎস্য আহরণও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবন বরিশাল উপকুলে বঙ্গোপসাগর থেকে মৃত্যু আর ধ্বংস নিয়ে বার বারই ঘূর্ণিঝড় হানা দেয়। বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ‘রিমেল’ এর তান্ডবে বরিশালে কৃষি, মৎস্য, প্রাণি সম্পদ ও বনজ সম্পদের ক্ষতির পরিমানই হাজার কোটি টাকারও বেশী। মাঠে থাকা আউশ ধান, মুগ ও মরিচ সহ বেশ কিছু অর্থকরী ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে মাঠে থাকা সব ফসলেরই। সারা দেশে উৎপাদিত আউশের ২০ ভাগ এবং মুগ ডালের প্রায় ৪০ ভাগ আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে বরিশালেই।
কিন্তু সাম্প্রতিক রিমেল তান্ডবের ভয়াবহ ক্ষত পূরণ বরিশালবাসীর জানা না থাকলেও প্রকৃতির নানামুখী বিরূপ আচরণ অব্যাহত রয়েছে। জৈষ্ঠের শেষভাগে বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু উপকুল হয়ে বরিশালে বিস্তার লাভ করলেও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের প্রায় ৬ ডিগ্রী ওপরে উঠে যাওয়াকে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ বলছেন আবহাওয়া পর্যবেক্ষকরা। তবে চলতি মাসে বরিশালে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটারের স্থলে ৪৬০-৫১০ মিলি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া বিভাগ। পাশাপাশি আগামী ৪দিনের মাথায় বৃষ্টিপাতের প্রবনতা বৃদ্ধির কথাও বলছে আবহাওয়া অফিস।
টানা ১৮ ঘন্টা ধরে রিমেল তান্ডব চালিয়ে দুর্বল হয়ে মিলিয়ে গেলেও কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও বনভূমিতে তার ক্ষত এখনো দৃশ্যমান। কিন্তু নতুন করে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের অনেক ওপরে উঠে যাওয়াকে ‘প্রকৃতির আরেক বিরূপ আচরণ’ বলছেন পরিবেশবিদ সহ কৃষিবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
শুক্রবার দুপুরে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৭ ডিগ্রী নিচে থাকলেও এসময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৫.৫ ডিগ্রি বেশী ছিল বলে আবহাওয়া অফিসের হিসেব বলছে।