4:00 pm , May 29, 2024

জুবায়ের হোসেন ॥ প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবের পর তিন দিন অতিবাহিত হলেও বিদ্যু সংযোগ ফিরে পায়নি নগরীর বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা। এতে গৃহস্থলির কাজতো দূরের কথা, এক রকম থেমে আছে তাদের অতি প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাজকর্ম। বিদ্যুত সংযোগ না থাকায় ওই সকল এলাকাগুলোর বাসিন্দারা ভুগছেন ব্যবহারের পানির তীব্র সংকটে। খাওয়ার পানি কিনে বা টিউবয়েল থেকে আনলেও রান্নার পানি ছাড়া অনেকের ঘরে রান্না পর্যন্ত করতে পারছেন না। এছাড়া তিন দিন বিদ্যুৎ না থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাসাবাড়ি ও দোকানের ফ্রিজে সংরক্ষিত সকল ধরনের পচনশীল খাবার। এরকম আর একদিন চলাও অসম্ভব বলে জানিয়েছেন বিদ্যুত সংযোগ না থাকা এলাকাগুলোর সাধারন মানুষ। প্রাপ্তবয়স্করা কোনভাবে কষ্ট সহ্য করে থাকলেও এই অবস্থায় খুব ভোগান্তিতে আছে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা। ঝড় শেষ হওয়ার পর থেকেই সংযোগ ফিরে পেতে অপেক্ষার পর যে যার মত এলাকার সকলে মিলে চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছেন। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মরতদের সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না। কিভাবে সংযোগ ফিরে পাবেন, কবে পাবেন, সংযোগ ফিরে পেতে আসলেই কি করতে হবে এখন এর কোন কুল কিনারা করে উঠেতে পারছেন না বলে জানান নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা। বুধবার দুপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে পেতে তাদের দেখা যায় সড়কে বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান দের জন্য অপেক্ষা করতে।
এসময় আলাপে চা দোকানি জয়নাল মিয়া জানান, ঝড় শেষ হওয়ার পর আজ ৩দিন। এখনো ২৩নং ওয়ার্ডে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ আসেনি। এমন প্রতিটি ওয়ার্ডের কিছু কিছু এলাকায় রয়েছে যেখানে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ ছাড়া ৩দিন মানবেতর জীবন জাপন করছেন তারা। ঘরে নেই শৌচাগার ব্যবহার করার মত পানিও। বিদ্যুৎ না থাকায় চলছে না মটর। অনেকে রান্না করে ইলেক্ট্রিক চুলায়। সেই ঘর গুলোর রান্না বন্ধ আজ ৩দিন। ফ্রিজে রাখা খাবার গুলো প্রায় সবারই নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকার সবাই মিলে জেনারেটর ভাড়া এনে একদিন কিছুটা প্রয়োজন মিটিয়েছেন। তবে এভাবে চলা সম্ভব নয় বলেন তিনি। শুনেছেন প্রতিটি এলাকার কাউন্সিলরা বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে যে সকল বাসাবাড়িতে এখনো বৈদ্যুতিক সংযোগ আসেনি তা ঠিক করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। তবে তাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে তেমন কোন ফল হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভুগছে ঘরে থাকা শিশু ও বয়স্করা। অনেকেই বাসাবাড়ি তালা মেরে চলে গেছেন আত্মিয়-স্বজনদের বাসায়। এখন কিভাবে বিদ্যুৎ আসবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, বিভিন্ন স্থানে এখনো গাছপালা পড়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত আছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। তাই মেরামতের পরেই নাকি সংযোগ ফিরিয়ে দেয়া হবে।
জয়নাল আরো বলেন, যদি এলাকার সবাই মিলে টাকা পয়সা দিয়েও বৈদ্যুতিক সংযোগ ফিরিয়ে আনা যেত তবে তারা তাই করতেন। কিন্তু তাও সম্ভব হচ্ছে না। এখন বিদ্যুত ফিরে না পেতে বাসা-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বলেন এই ব্যক্তি।
এমন অভিযোগ জানান ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ নং ওয়ার্ডের বর্ধিত এলাকার অসংখ্য ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক বাহারের সাথে আলাপ করা হয়। তিনি বলেন, ২৩নং ওয়ার্ডে এখনো অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে বিদ্যুৎ আসেনি। মেরামতের জন্য গতকাল থেকেই বারবার বিদ্যুত অফিসের প্রোকৌশলী সহ কর্মরত লাইনম্যানদের সাথে আলাপ করেছেন। তবে কোন লাভ হয়নি। বিভিন্ন স্থানে লাইনে সমস্যা আছে জানিয়ে ঠিক করার পরেই সংযোগ দেয়া হবে বলে তাদের পক্ষ জানানো হয়েছে। তার পরেও এলাকার মানুষের ভোগান্তি চিন্তা করে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগের সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তারা সবাই ব্যস্ত আছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য ঝড়ের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বরিশালের অসংখ্য এলাকার বৈদ্যুতিক লাইন। এ কারনে রোববার রাত থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না গোটা বরিশালে। এরপর নগরীর প্রধান এলাকাগুলোতে সোমবার বিকেলের পর থেকে বিদুৎ সংযোগ ফিরে আসতে শুরু করলেও এখনও বর্ধিত এলাকার বেশিরভাগ স্থানেই মেরামত করে দেয়া হয়নি বৈদ্যুতিক সংযোগ।