হালিমা খাতুন স্কুলে অনিয়ম ও দুর্নীতির পাহাড়! হালিমা খাতুন স্কুলে অনিয়ম ও দুর্নীতির পাহাড়! - ajkerparibartan.com
হালিমা খাতুন স্কুলে অনিয়ম ও দুর্নীতির পাহাড়!

4:20 pm , May 13, 2024

 

মামুনুর রশীদ নোমানী, অতিথি প্রতিবেদক ॥ বরিশালের ঐতিহ্যবাহী হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুনাম ও লেখা পড়ার মান আজ তলানীতে।শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়েছেন কোচিং বানিজ্যে। টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্ধ ও কোন্দল চরমে। বিতর্ক পিছু ছাড়ছেনা বিদ্যালয়টির। প্রতিবাদী শিক্ষকদের দমন করা হচ্ছে স্পর্শকাতর বিষয় দিয়ে।অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। এছাড়া স্কুলটিতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতি,ভুয়া সনদ দিয়ে শিক্ষকতা,বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের নামে ভুয়া বিল ভাউচারসহ শত অভিযোগ বলে জানিয়েছেন স্কুল সংশ্লিষ্টরা। জেলা শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় অফিসে আবেদন করেও কোন সাড়া পাচ্ছেনা অভিযোগকারীরা। তবে সব অভিযোগ অস্বিকার করেছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক।
যত অভিযোগ : গত ৯ মে ২০২৪’ তারিখ হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ মহিউদ্দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের উপ পরিচালকের নিকট হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ে সনদবিহীন ও জাল সনদে চাকুরীরত শিক্ষক, শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,আমি মোঃ মহিউদ্দিন হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইংরেজী বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় ১ম হই।কিন্তু আমাকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য দুজন প্রার্থী যাদের একজন হলেন মোসাঃ রওশন আরা বেগম এবং দ্বিতীয়জন রোকেয়া বেগম। যাদের ইংরেজী বিষয়ে বি.এ পাস),বি.এ (অনার্স) ইংরেজী কোনটাই নাই এবং উক্ত প্রার্থীদ্বয়ের ইংরেজী বিষয়ে নিবন্ধন সনদও নাই।গনিত বিষয়ে নিয়োগ প্রাপ্ত হয় অনিমেষ ঘোষ। যার গনিত বিষয়ের নিবন্ধন সনদ নেই বলে চূড়ান্ত নির্বাচিত তালিকায় উল্লেখ আছে।
এ ব্যাপারে জনাব মহিউদ্দিন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করেন উপ পরিচালক বরাবর।
এ ব্যাপারে উপ পরিচালক মাহবুবা হোসেন বলেন, বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্কুলটির সহকারি শিক্ষক মহিউদ্দিন জানান,আমার সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষ অন্যায় করেছেন। আমি যথাযথ ব্যবস্থা চাই। তিনি বলেন,কিভাবে একটি স্কুলে নিবন্ধন বিহীন শিক্ষকরা শিক্ষকতা করেন। এছাড়া তিনি প্রশ্ন করে বলেন, রোকেয়া বেগম নামে এক শিক্ষকের অর্থনীতিতে নিবন্ধন রয়েছে অথচ সে নিয়োগ পেয়েছে ইংরেজী বিষয়ে। যা সম্পুর্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম। সে সময়ে নিয়োগের শর্ত ছিল নিয়োগের দু বছরের মধ্যে এমপিও হতে পারবেনা অথচ অবৈধ উপায়ে আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে দু বছরের মধ্যে এমপিও ভুক্ত হয় বলে অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন ।
স্কুলটির নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে সহকারি শিক্ষক মহিউদ্দিন একাধিকবার বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অফিসে লিখিত আবেদন করলেও রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা এমনকি তদন্তও হয়নি। এ নিয়ে স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
কোচিং বানিজ্য ও শিক্ষক মাইদুল:
হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবসা শাখার শিক্ষক মাইদুল ইসলাম কোচিং বানিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্ধে জড়িয়ে পরেন প্রধান শিক্ষক এস এম ফখরুজ্জামানের সাথে।প্রথমে মাইদুল প্রধান শিক্ষককে কোচিং বানিজ্যের শতকরা ৪০ ভাগ টাকা দিতো। প্রধান শিক্ষক ৬০ ভাগ টাকা দাবী করলে মাইদুল ৬০ ভাগ টাকা দিতে নারাজ হলে প্রধান শিক্ষকের সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে কথিত অভিযোগে বরখাস্ত হন বলে জানান স্কুলটির সহকারি শিক্ষক মোঃ মাইদুল ইসলাম। আর এখান থেকে শুরু দ্বন্ধের। এ দ্বন্ধের কারনেই চলতি বছরের জানুয়ারীতে ক্লাশ টিচার থেকে প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
যেভাবে নিয়োগ পান মাইদুল ইসলাম:
মোঃ মাইদুল ইসলাম ছিলেন প্রধান শিক্ষক এস এম ফখরুজ্জামানের বাসার গৃহ শিক্ষক। এ সুবাধে প্রধান শিক্ষক ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই ১৬ নং স্মারকে মাইদুলকে অস্থায়ী ভাবে খন্ডকালীন (ব্যবসায় শিক্ষা ) শিক্ষক হিসেবে ৯ হাজার পাচঁ শত টাকা বেতনে নিয়োগ প্রদান করেন।স্কুলটিতে মাইদুল ইসলাম যোগদান করার পরেই স্কুলটির প্রথা ভেঙ্গে প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে প্রাথমিক শাখায় শ্রেনী শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব প্রদান করেন। প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে দিয়ে কোচিং ও প্রশ্ন পত্র বানিজ্য করাতো বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবকরা।কোচিং ও প্রশ্ন পত্র বানিজ্যের ভাগের টাকা প্রধান শিক্ষকের দাবী অনুযায়ী দিতে অস্বীকার করলে ক্ষিপ্ত হয় প্রধান শিক্ষক।এর পর থেকেই মাইনুল ইসলামকে স্কুল থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়।অবশেষে কথিত অভিযোগ এনে মাইদুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয় ৯ মে ২০২৪’ তারিখ কোন প্রকার বিধি বিধান না মেনেই। এমনকি কারন দর্শানোর নোটিশ পর্যন্ত দেয়া হয়নি তাকে।
লুটপাট ও ভাগ বাটোয়ারা :
হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ে চলছে লুটপাট এমনটাই অভিযোগ সংশিষ্টদের। এছাড়া শ্রেনী কক্ষ ভেঙ্গে করা হয় প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন। এদিকে হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পুরুষ হওয়ায় অস্বস্তিতে শিক্ষিকারা ও শিক্ষার্থীরা বলে জানান একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।স্কুলের আয়ের টাকা ভাগ -বাটোয়ারা করেন সবাই মিলে। অথচ নানান বিষয়ে সংকট রয়েছে।নেই সমাধানের উদ্যোগ। কোনবিধি বিধান না মেনেই সম্প্রতি একজন শিক্ষিকা নিয়োগ দেয়া হয় ।এ নিয়ে নানান কথা চলছে স্কুল জুড়ে। স্কুলটিতে অবৈধভাবে ও জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ, কোচিং বানিজ্যের টাকার ভাগ -বাটোয়ারা, কোন্দল ও অনিয়মের কারনে স্কুলটির সুনাম আজ তলানীতে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সচেতন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
বিতর্ক পিছু লেগেই আছে:
২০২০ সালে এস এস সি পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রে বহু নির্বাচনী পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্র দেয়ায় হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের হল সুপার সহকারি প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কেন্দ্রের ৪ শিক্ষক মাসুদা বেগম,মোঃ সাইদুজ্জামান,শাহানাজ পারভিন শিমু ও শেখ জেবুন্নেছাকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
তৎকালীন সময়ে এ নিয়ে নগরী জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পুকুর ভরাট করে উদ্যান :
হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুকুরের একাংশ ভরাট করে ২০২৩ সালে উদ্যান করা হয়।৯৫ বছরের পুরোনো এ বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশের সময় পশ্চিম পাশে বড় আয়তনের পুকুরটির চারপাশ ভরাট করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পুকুর ভরাটের কারণে স্কুলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলের মধ্যে এধরনের পুকুর ভরাটের ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকেও এব্যাপারে অবহিত করা হয়নি। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিজ ক্ষমতাবলে পুকুর ভরাট করেছে। এবং তার ইশারায় স্কুলে কোচিং বাণিজ্য অবহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল বলেন, আমি স্কুলটির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমি কোচিং বানিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সহ সাধ্য অনুযায়ী শৃংখলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক এস এম ফখরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন,আমি বিষয়গুলো অবহিত হয়ে বলতে পারবো।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT