4:34 pm , May 8, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমে দু মাসের আহরণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার মধ্য দিয়ে পুরো উপকূল ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে মৎস্য আহরণে বিধি নিষেধ দূর হলো। তবে সারা দেশেই অনুর্ধ্ব ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত ইলিশ পোনা ‘জাটকা’ আহরণ, পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা নিধন বিরোধী অভিযানও অব্যাহত থাকব বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। উপকূলীয় ৭ হাজার ৩৩৪ বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজননস্থল সহ সারাদেশে গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের আহরণ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবার আগেই ১ নভেম্বর থেকে ৮ মাসের জাটকা আহরণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পুলিশ,প্রশাসন এবং কোষ্টগার্ড সহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহাতায় বরিশাল সহ উপকূলীয় অঞ্চলে জাটকা নিধন বিরোধী অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
পাশাপাশি জাটকা আহরণ নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলেদের খাদ্য নিরাপত্তা সহায়তা বাবদ এবারো ভিজিএফ-এর মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও লাগাতার তাপ প্রবাহের ফলে এবার বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকার নদ-নদীতে ইলিশ সহ অন্যান্য মাছের দেখা মিলছেনা।
উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ডিম ছাড়ার পরে তা থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে বিচরন করে খাবার খেয়ে নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়ায়। এসব জাটকা কিছুটা বড় হয়ে ১২-১৮ মাস বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসের পরে প্রজননক্ষম হয়ে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় জাটকা খাদ্য গ্রহণ করে বেড়ে ওঠে, মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষনা অনুযায়ী সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহিৃত করে ‘অভয়াশ্রম’ ঘোষনা করা হয়েছে। ফলে ইলিশের বংশ অনেকটাই রক্ষা পাচ্ছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের লতা, নয়া ভাঙ্গনী ও ধর্মগঞ্জ নদীর মিলনস্থল পর্যন্ত প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটার, ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেতুুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার, খেপুপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে চর ইলিশা হয়ে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ কিলোমিটার, নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত মোট ৬টি অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে।
এসব অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ২-৩ মাস পর্যন্ত সব ধরনের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। ফলে জাটকা নিধন থেকে রক্ষা পেয়ে ইলিশ সহ সব মাছের উৎপাদন বাড়বে বলেও দাবী মৎস্য বিজ্ঞানী সহ মৎস্য অধিদপ্তরের।
গত বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের মূল প্রজনন মৌসুমের আহরণ নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে দেশের ইলিশ প্রজন্মে আরো অন্তত ৪১ হাজার কোটি জাটকা যুক্ত হয়েছে বলে মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি। বিগত মূল প্রজননকালীন সময়ে বরিশাল অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় প্রজনন এলাকায় ৫২.০৪ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। আরো অন্তত ৩৫ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছাড়ারত ছিল বলে গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানিয়েছেন। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৫ ভাগ বেশী ছিল বলে জানা গেছে।
এবারে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে বরিশাল সহ উপকূলের ২০টি জেলার ৯৭টি উপজেলার ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭১টি জেলে পরিবারের মধ্যে ৪ মাসের খাদ্য সহায়তা বাবদ ৫৭ হাজার ৭৭২ টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারী থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে এসব চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এদিকে গত দু মাসে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকার অভয়াশ্রমে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মৎস্য অধিদপ্তর প্রায় আড়াই হাজার অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া সাড়ে ৬শ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রায় ৮৫ লাখ মিটার ইলিশ জাল, ৪ কোটি ৮ লাখ মিটার কারেন্ট জাল সহ আরো সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশী বিভিন্ন ধরণের নিষিদ্ধ জাল বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসব অভিযানে সাড়ে ১২শর মত মামলা দায়ের ছাড়াও ভ্রাম্যমান আদালত ১ হাজার ১১১ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে। এসময় আইন ভঙ্গের দায়ে আদালত প্রায় ২৮ লাখ টাকা জরিমানাও আদায় করেছে বলে জানা গেছে।