4:00 pm , May 5, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লা রুটের বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। শনিবার হর্ন দেয়া নিয়ে চালক ও হেলপারকে মারধরের ঘটনা নিয়ে দফায় দফায় মারামারি, হামলা-পাল্টা হামলার পর বাস চলাচল বন্ধ হয়। রোববার বেলা সাড়ে ১২ টার পর থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে পুলিশ ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জানিয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যার পর নথুল্লাবাদ এলাকার থ্রি-হুইলার ষ্ট্যান্ডে হামলা, শ্রমিকদের মারধর ও ভাংচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। শ্রমিক নেতা ও সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ নামধারী ১১ জন ও অজ্ঞাত ৬০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর আগে শনিবার বেলা ১২টার দিকে মাদারীপুর থেকে আসা অভ্যন্তরীন রুটের একটি বাস নথুল্লাবাদ টার্মিনালে প্রবেশ সময়ের হর্ন দেয়। এতে ছাত্রলীগ নেতা নুরুল ইসলাম বাবাই ক্ষুব্ধ হয়ে চালক সোহাগ ও হেলপার সৌরভকে মারধর করেন।
এ নিয়ে বাস শ্রমিকদের এক পক্ষ ক্ষুদ্ধ হয়ে শ্রমিকরা বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়, বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের কার্যালয়ে এবং টার্মিনালের কাউন্টারের সামনে ভাংচুর করে। পরে অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লা রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমিকরা পাশের থ্রি-হুইলার ষ্ট্যান্ডে হামলা করে অন্তত ৫০টি থ্রি-হুইলার, একটি খাবার হোটেলসহ দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করে। এ সময় থ্রি-হুইলার চালকদেরও মারধর করা হয়। প্রায় ৩০জন মাহেন্দ্রা চালক আহত হয়। থ্রি-হুইলার শ্রমিকরা পাল্টা বাস ভাংচুর শুরু করে। তখন পুলিশ একটি টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বাস শ্রমিকদের একটি গ্রুপ শনিবার দুপুরের পর থেকে টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বাস চলাচল বন্ধ রাখে। রোববার বেলা পৌনে ১২ টার দিকে বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী কবির অনুসারীরা শতাধিক যুবক ধারালো অস্ত্র, জিআই পাইপ ও লাঠি নিয়ে বাস টার্মিনালে প্রবেশ করে। তারা টার্মিনালে অবস্থান নেয়া পক্ষকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। আন্দোলনকারী কয়েকজন বাস শ্রমিককেও মারধর করেছে। পরে বাস টার্মিনাল অসীম দেওয়ান ও কাজী কবির অনুসারীরা দখলে নেয়। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে দুরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীন রুটের বাস চলাচল শুরু করেনি। বর্তমানে বাস টার্মিনালে র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি অসীম দেওয়ান ও কাজী কবির অনুসারীরা অবস্থান করেছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আরো জানায়, প্রতিপক্ষেকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়ার পর দুই অনুসারীরা বাস টার্মিনাল এলাকায় মিছিল করে। তখন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লিয়ন ও জাহাঙ্গীর নামের দুইজনকে তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসহ আটক করেছে।
বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী কবির বলেন, বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কোন সমস্যা নেই।
মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক লোকমান হোসেন বলেন, বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। টার্মিনাল এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বাস টার্মিনালে প্রতিপক্ষকে সশস্ত্র অবস্থায় ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি জানা নেই জানিয়ে পরিদর্শক লোকমান বলেন, বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে দুইজনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাতে থ্রি-হুইলার ভাংচুর ও শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনায় করা মামলার বাদী হয়েছেন থ্রি-হুইলার আলফা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মুশফিকুর রহমান দুলাল।
তিনি বলেন, থ্রি-হুইলারে যাত্রী পরিবহন করায় তাদের উপর হামলা করা হয়েছে। তাই তিনি বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লা, তার ভাই মুন্না মোল্লাসহ নামধারী ১১ জন। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ৬০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা ও তাই ভাই মুন্না মোল্লার নেতৃত্বে ৫০টি থ্রি হুইলার ভাংচুর করেছে। তাদের হামলায় আহত হয়ে ২৮ জন থ্রি হুইলার শ্রমিক আহত হয়ে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বরিশাল মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি মাকসুদ আলম বলেন, বাস টার্মিনালের পরিস্থিতি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লা রুটের বাস চলাচল করছে।
থ্রি-হুইলার মালিক সমিতি একটি অভিযোগ দিয়েছে। মামলা হিসেবে রুজু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নেব বলেন ওসি।