4:08 pm , April 30, 2024

জুবায়ের হোসেন ॥ সময় তখন বেলা ২ টা। বরিশালে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গরম অনুভূত হচ্ছিল এর চেয়ে বেশি। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে আগুনের হলকা নেমে আসছে। নগরীর নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে তখনও যানবাহনের বেশ চাপ। সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের দুজন সার্জেন্ট ও ৬ জন কনস্টেবল। গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা সহ সড়কের যানজটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছিলেন তারা। তাদের ভাষ্য, প্রচ- গরমে রাস্তায় দায়িত্ব পালন সত্যিই বেশ কষ্টকর। কিন্তু কিছু তো করার নেই। রাস্তায় পাঁচ মিনিট না থাকলে যানজট লেগে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। জনগণের সেবাই পুলিশের কাজ, তাই যতই কষ্ট হোক না কেন দায়িত্বের জায়গাটি নিষ্ঠার সাথেই পালন করতে হয়। নথুল্লাবাদে দুপুরে যারা দায়িত্ব পালন করছিলেন তাদের একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. জাকির হোসেন । তিনি বলেন, প্রচ- গরম কিংবা বৃষ্টিতে রাস্তায় দায়িত্ব পালনের সময় বিশ্রামের সুযোগ নেই। তবে এবারের গরম অনেক বেশি। তাই মাঝেমধ্যে অস্বস্তি লাগে। অস্বস্তি লাগলেও পুলিশের প্রশিক্ষণ ও জনগণের জন্য কাজ করা দৃঢ় মনোভাব কাজের ক্ষেত্রে বেশ সহায়তা করে । গরমের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বর্তমানে সমন্বয় করে কাজ করছেন তারা । বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী গরম এড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে যতটা সম্ভব সুরক্ষিত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিদিন । অসনীয় এই তাপমাত্রায় টানা রোদে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালনে বেশ কষ্ট হলেও জনগণের প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে তা বেশ মানিয়ে নিয়েছেন বলে জানান এ ট্রাফিক সার্জেন্ট ।
সকাল থেকে নগরীর চৌমাথা মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক কনস্টেবল হারুন অর রশিদ । বেলা দুইটার দিকে ডিউটি শিফট শেষে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘামে ভেজা অবস্থায় গাছের ছায়ায় কিছুটা বিশ্রাম নিতে দেখা যায় তাকে । তিনি বলেন, সকালে অফিসে যাওয়া ও বিকেলে অফিস ছুটি হওয়ার সময় প্রচ- চাপ থাকে। তখন যত গরমই হোক না কেন, বিশ্রামের সুযোগ পাওয়া যায় না। তবে অন্য সময় নিজেদের মধ্যে কথা বলে এক-দুজন বিশ্রাম করেন। তারা এলে আবার অন্যরা বিশ্রাম করেন। এভাবেই সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করেন। সকাল ৮টা থেকে ২ টা পর্যন্ত প্রথম শিফট এবং ২টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত দ্বিতীয় শিফটে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের । এই পুরো সময়টিতে বিশ্রামের সুযোগ নেই বললেই চলে ।
বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যেসব সদস্যকে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে হয়, তাদের রোদ থেকে সুরক্ষা পেতে ছাতা ও টুপি ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। পাশাপাশি গরমে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কেউ যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন সে জন্য পানি ও খাওয়ার স্যালাইনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে গরম বিবেচনায় কর্মঘণ্টা কমেনি, আগের মতোই কাজ করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বরিশাল ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, কিছুটা সমস্যা হলেও দায়িত্ব থেকে পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। প্রচ- গরম বিবেচনায় রেখে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা ও সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্বরত প্রত্যেক ট্রাফিক সার্জেন্ট ও সদস্যদের অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে। একটু পর পর পান করতে হবে বিশুদ্ধ পানি । যানবাহনের চাপ যখন বেশি থাকবে তখন দায়িত্ব পালনের পর চাপ কমলে সুবিধামতো বিশ্রাম নিয়ে নিতে বলা হয়েছে । দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার ।
এছাড়াও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের জন্য খাওয়ার পানি, স্যালাইন ও ছাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে । প্রচ- তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে এবং পুলিশ সদস্যদের সুস্থ রাখতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এমন বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন । এরমধ্যে রয়েছে বাইরে দায়িত্ব পালনের সময় ছাতা, টুপি, সানগ্লাস ব্যবহার নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ ও স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ধীরে ধীরে পান করা, ঠান্ডা পানি (বরফসহ পানি) পান পরিহার করা, মাত্রাতিরিক্ত স্যালাইন পানি নিয়ম না মেনে পান না করা, পুলিশ মেস, ক্যানটিনে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করা, বাইরে থেকে ঘরে ফিরে আধা ঘণ্টা পর হাতমুখ ধোয়া বা গোসল করা। ট্রাফিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাষ্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সারাদিনই রোদে বাইরে কাজ করতে হয়। দুই বছর ধরে প্রচ- গরম পড়ছে। অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে। মাঠপর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের শারীরিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষায় প্রস্তুত থাকার কারণে ট্রাফিক সদস্যদের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তারপরেও দায়িত্ব পালনকালে কোন পুলিশ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।