4:04 pm , April 17, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠির গাবখান সেতুতে বেপরোয়া গতির ট্রাকের চাপায় চারটি বাহনের ১৪ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। বুধবার দুপুর দুইটার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর পুলিশ ট্রাক চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা দেয়া হবে।
নিহতরা হলো- ঝালকাঠির গাবখান এলাকার সেলিম হাওলাদারের ছেলে মো. নজরুল (৩৫), ওস্তাখান এলাকার মন্নান মাঝির ছেলে সফিকুল মাঝি (৫০), নওপাড়া শেখের হাট এলাকার আতিকুর রহমান সাদি (১১), বিমান বাহিনীর অব. সদস্য ইমরান হোসেন (৪০) কাঠালিয়ার তালগাছিয়া এলাকার মো. ইব্রাহিমের কন্যা নুরজাহান (৭), তার বাবা ইব্রাহিম (৪০), মা তাহমিনা (২৫), উত্তর সাউথপুর এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে হাসিবুর রহমান (৪০) তার স্ত্রী সোনিয়া বেগম (৩০), কন্যা তানিয়া আক্তার (৩), এক বছর বয়সী ছেলে তাহমিদ রহমান, একই এলাকার বাসিন্দা নিপা (২২), স্বরুপকাঠির রুহুল আমিন (৭০) ও ঝালকাঠির শহিদুল ইসলাম (৩৫)।
পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, বুধবার বেলা ২টার দিকে ঝালকাঠির শহরতলীর গাবখান ব্রিজের টোলপ্লাজায় সিমেন্টবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয়। পরে ট্রাকটি পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সাত জন মারা যান। আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক আরও ৫ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো দুই জনের মৃত্যু হয়।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে আরো ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া তিনজনকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর পর চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল।
গ্রেপ্তার চালকের নাম আল আমিন হাওলাদার। তার বাড়ি ঝালকাঠি সদরের নবগ্রামে। আর সহকারী নাজমুল শেখ খুলনা সদরের বাসিন্দা।
পুলিশ সুপার বলেন, আল আমিন নিয়মিত চালক ছিলেন না। তিনি বদলি চালক হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি খুলনা থেকে সিমেন্টের বস্তা নিয়ে নিজ বাড়ি যাচ্ছিলেন।
তদন্ত কমিটি গঠনঃ
মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক রুহুল আমীনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম।কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সহায়তাঃ
জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ১৪ জনের পরিবারকে মোট ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী বর্ননা ঃ
বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চারটি ইজিবাইকে কনের বাড়ির লোকজন ঝালকাঠির ছাগলকান্দার শশীর হাটে বরের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে গাবখান সেতুতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দুটি ইজিবাইকের যাত্রী। এতে ওই পরিবারের বেশ কয়েকজনের প্রাণ গিয়েছে; বাকিরা হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া রুবেল হোসেন বলেন, গাবখান ইউনিয়নের ওস্তকার মাঝি বাড়ি থেকে কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ছাগলকান্দা শশীর হাটে যাইতেছিলাম বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে। গাবখান ব্রিজ পার হইয়া চারডা অটো (ইজিবাইক) নিয়া যাইতেছিলাম। দুইটা অটো পাশ কইরা গেছে। দুইটা টোল দিতেছিল।
“পেছন থেকে ট্রাক আইসা আমরার ওই দুইটা অটো প্লাস আরও দুইটা অটোরে মাইরা দিছে। ব্রেক ফেইল কইরা মাইরা দিয়া ও নিজে গর্তে পইড়া গেছে।”
রুবেল বলেন, নিজেদের পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে; আহত আছে আরও সাতজন।
দুর্ঘটনায় সব মিলিয়ে কতজন মারা গেছে এটা জানেন না রুবেল। তবে তার ধারণা গাড়ির নিচে লোক আছে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত রুহুল আমিনের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার মেয়েজামাই গাবখানের বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন।
তিনি বলছিলেন, “ছাগলকান্দা আমরা ভাইঝি বিয়া দিছি। সেইখানে আমরা মেলা করছি (রওনা দিয়েছি)। আমরা সামনের গাড়িতে, তারা পিছের গাড়িতে, অটোতে।
“চারডা অটোতে মেলা করছি; দুইডা অটো সামনে গেছে। দুইডা পিছে টোল দেয়; আর ট্রাক আইয়া মাইরা দিছে। আমাগো লোক মারা গেছে পাঁচ-ছয়জন।”
ঝালকাঠির রামনগরের বাদশা মিয়ার ছেলে সাইদুল বলেন, তার প্রতিবন্ধী ভাই শহীদুল (৪৫) গাবখানে ভিক্ষা করেন। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।