বরিশালে ৭২ ঘন্টায় নদী-খালে ডুবলো ৬ শিশু ও দুই তরুণী বরিশালে ৭২ ঘন্টায় নদী-খালে ডুবলো ৬ শিশু ও দুই তরুণী - ajkerparibartan.com
বরিশালে ৭২ ঘন্টায় নদী-খালে ডুবলো ৬ শিশু ও দুই তরুণী

4:20 pm , April 15, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে গত ৭২ ঘন্টায় নদী ও খালের পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছে ৬ শিশু ও দুই তরুণী। এরমধ্যে এক তরুণী ও তিন শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত দুই শিশুসহ চারজন নিখোঁজ রয়েছে।
শনিবার বেলা ১১ টা থেকে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে বানারীপাড়া, মুলাদী, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ৫জন ঈদে গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এসে এ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পানিতে ডুবে যাওয়ার পর লাশ পাওয়া গেছে সিলেটের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী মো. সোহেল রানার কন্যা শান্তা ইসলাম (১৮),  হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর দুর্গাপুর গ্রামের জেলে আক্তার হাওলাদারের ছেলে জাকারিয়া (৪) ও  বোরহান (৬) এবং গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের জেলে জসিম মাতুব্বরের চার বছর বয়সী কন্যা মিম।
নিখোঁজ রয়েছে- গলইভাঙা গ্রামের মো. মাহমুদ হাসানের মেয়ে হাবিবা হাসান অর্পা (১৭) ও তার ভাই মো. বাবুর মেয়ে হিজরাতুল মুনতাহা হাফসা (১৩), হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন মোল্লার ছেলে ইয়ামিন মোল্লা (১১), মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ চর এককরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ঢাকায় ফ্যান তৈরির ফ্যাক্টরির শ্রমিক মনির খানের ছেলে রায়হান খান (১১)।
হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাকিব সিকদার জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে নদীতে মাছ ধরতে যায় বেদে সদস্য বাবা-মা। নৌকায় শিশু কন্যা মিম ছিলো। মিম নদীতে পড়ে মারা যায়। পরে অপর এক জেলের জালে তার লাশ পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসকের অনুমতিতে লাশ বিনা ময়না তদন্তে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হিজলা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত ষ্টেশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে ১টার মধ্যে ইয়ামিন মোল্লা অন্যান্য শিশুদের সাথে মেঘনা নদীতে গোসল করতে যায়। সাঁতার না জানার কারনে ¯্রােতে তলিয়ে গেছে ইয়ামিন। সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
শিশু ইয়ামিন ঈদে বাড়ীতে বেড়াতে এসে এ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সাঁতার না জানার পরেও শিশুকে নদীতে গোসল করতে যেতে দেওয়ায় অভিভাবকদের দুষছেন তিনি।
বানারীপাড়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আনোয়ার হোসেন বলেন, গত শনিবার সকালে শান্তা মরিচবুনিয়া গ্রামে উপজেলার মামীর  বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে। মহাখালী টিএন্ডটি মহিলা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শান্তা তার ছোট বোন লামিয়াকে নিয়ে ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির সামনে বেলুয়া নদীতে গোসল করতে যায়। এ সময় পা পিছলে নদীতে পড়ে যায় সে। সাঁতার না জানায় ¯্রােতে ভেসে গিয়ে ডুবে যায়। রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ২০০ ফুট দূরে শান্তার লাশ ভেসে উঠে। পরে ঢাকায় নিয়ে দাফন করা হয়েছে।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দিকে মেঘনা নদীর শাখা খালে গোসল করতে দাদার সাথে যায় হিজলা উপজেলার চর দূর্গাপুর গ্রামের জেলে আক্তার হাওলাদারের ছেলে জাকারিয়া ও বোরহান।
উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নোমান সরদার জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দাদা সেরাজ হাওলাদারের সাথে চর দূর্গাপুর খালে যায়। দুই নাতিকে খালের পাড়ে রেখে দাদা সেরাজ হাওলাদার খালে গোসল করতে নামে। খালের কিছুদূর যাওয়ার পর ফিরে এসে দুই নাতিকে দেখতে না পেয়ে তল্লাশী শুরু করে। বেলা ১ টার দিকে দুই নাতিকে খাল থেকে ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেছেন।
একই দিন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ চর এককরিয়া গ্রামে গজারিয়া নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয় ঢাকার একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রায়হান।
হিজলা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত ষ্টেশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদে গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিলো। রোববার বেলা ১১ টার দিকে বাড়ির আরেকটি শিশু সাথে গ্রামের রহমানের হাট খেয়াঘাট এলাকায় যায়। তখন রায়হান নদীতে পড়ে যায়। রায়হানের সাথে থাকা শিশু উদ্ধারের চেষ্টা করে সেও হাবুডুবু খায়। তখন স্থানীয় এক ব্যক্তি বিষয়টি দেখতে পেয়ে শিশুটি উদ্ধার করতে পারলেও রায়হান নিখোঁজ হয়। সোমবার বিকেল পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মুলাদী ফায়ার স্টেশনের লিডার মো. নুরুল ইসলাম জানান, ঈদে বাড়ীতে বেড়াতে বাবা মাহমুদ হাসানের সাথে আড়িয়াল খাঁ নদীতে গোসল করতে যায় তার দুই মেয়ে এবং  ভাইয়ের দুই কন্যা। গলইভাঙা ঢালী বাড়ি লঞ্চঘাট এলাকায় গোসলে নেমে সাঁতার না জানায় চারজনই  ডুবে যায়। তখন মাহমুদ হাসান দুইজনকে টেনে তুলতে পারে। তবে নিজের মেয়ে অর্পা ও ভাইয়ের মেয়ে হাফছা নিখোঁজ হয়।
টিম লিডার নুরুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিকেল পর্যন্ত তাদের সন্ধান করা হয়েছে। কিন্তু খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডারের মন্তব্য মানুষের অসচেতনতার কারনেই এ সকল দুর্ঘটনা ঘটছে। নদীর গভীরতা ও ¯্রােত সম্পর্কে কারো কোন ধারনা নেই। সাঁতার না জেনে নদীতে নেমে ডুবে গিয়ে মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে ক্যাম্পিং জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইউনিসেফের একটি প্রকল্পে বরিশাল নগরীর শিশুদের সাঁতার শেখানো এনজিও স্কোপ এর নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, অন্যান্য শিক্ষার সাথে শিশুর জীবন রক্ষার জন্য সাঁতার শেখানো জরুরী। কিন্তু অভিভাবকদের সে বিষয়ে কোন নজর নেই। উৎসবে এসে তারা গোসল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এনজিও ব্যক্তিত্ব শিবলু বলেন, বিদেশে শিশুদের তিন বছর বয়স থেকে সাঁতার শেখানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কোন শিশুকে সাঁতার শেখানোর কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিশুদের কাছে জানতে চাইলেই বিষয়টি জানা যাবে।
তিনি বলেন, শিশুদের সাঁতার শেখায় বেশ আগ্রহ রয়েছে। তিনি যখন সাঁতার শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তখন অনেক শিশু স্কুল পালিয়ে এসে সাঁতার শিখেছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের রোষানলেও পড়তে হয়েছে।
অভিভাবকদের নেতিবাচক মন্তব্যের কারনে ইউনিসেফ সাঁতার শেখানো প্রকল্প গুটিয়ে নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন এনায়েত হোসেন শিবলু।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT