4:11 pm , April 4, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নামকরা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্বের বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলছে জুয়ার এই বিজ্ঞাপন। আর এই এ্যাপস ডাউনলোড ও ইন্সস্টল করা মাত্রই আপনার সব ডাটা হ্যাকিং হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইটি বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ফেসবুকে নামকরা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী টেলিভিশন সময় টিভি, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমসহ আরো খ্যাতনামা তারকাদের কে ব্যবহার করে ফেসবুকজুড়ে রীতিমতো ঝড় তুলে দিয়েছে এই এ্যাপস। রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার প্রলোভন পুরো বিজ্ঞাপনে। সমর্থন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েছে রাতারাতি বড়লোক হবার এই খেলায়। প্রলোভনে পড়ছে অনেক শ্রমজীবী মানুষও। রাস্তার পাশে, চা দোকানে এবং পাড়া-মহল্লার আনাচেকানাচে নিজেকে সর্বশান্ত করার মহাউৎসবে মেতেছে অনেকেই। এমনভাবে এটির প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে দেখে মনে হচ্ছে সরকারিভাবেই বুঝি অনলাইন জুয়াকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
বরিশালের আমতলা মোড়ের স্বাধীনতা পার্কে বসে এটি নিয়ে আগ্রহী কয়েকজন তরুণ জানতে চাইলেন, এটা কি হচ্ছে, কীভাবে সম্ভব ? সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে প্রতারিত হওয়ার এই সুযোগ কেন দেয়া হচ্ছে বলে প্রশ্ন তোলেন ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ রানা। তিনি বলেন, ইতিপূর্বেই এরকম বেশকিছু অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে বরিশালের অনেক যুবকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যা নিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বেশকিছু পত্রিকায়।
এদিকে ফেসবুকে এই বিজ্ঞাপন দেখে পরিচিত অনেকেই ইনবক্সে এই লিংক দিয়ে সত্যতা জানতে চাইছেন, তাদের প্রশ্নের ধরণে বোঝা যাচ্ছে – তারাও রাতারাতি কোটিপতি হবার প্রলোভনে পড়তে চাইছেন । আর সচেতন কয়েকজনের আঙ্গুল সাইবার ক্রাইম বিভাগের দিকে। এদিকে এই অনলাইন জুয়া বিষয়ে জানতে পুলিশ ও র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিংকসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে। তবে কেউই এই মুহূর্তে কিছু বলতে রাজী হননি। যা দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। তারা বলছেন, পুলিশই যদি এ বিষয়ে কিছু না জানেন তাহলে আমাদের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের সবকিছু কি শুধু লোক দেখানো? এ প্রশ্ন প্রতারিত হওয়া অসংখ্য মানুষের। এরআগে এরকম প্রতারণায় অনেকে সর্বশান্ত হয়েছেন এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে যেয়ে প্রতিবেদক সাংবাদিক আরিফ আহমেদ এর ১২ হাজার টাকা আজো আমাজন প্রতারণায় আটকে আছে। যে সম্পর্কে অবহিত আছেন বরিশালের পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারাও। আজ পর্যন্ত পুলিশ সে টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ রয়েছেন।
ফেসবুক জুড়ে অনলাইন জুয়ার এই বিজ্ঞাপন একটি মারাত্মক প্রতারণা জানিয়ে আইটি বিশেষজ্ঞ ও সাহিত্য বাজার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সালাম খোকন বলেন, এই অ্যাপস ডাউনলোড করে ইন্সস্টল করতে গেলেই এটি কিছু তথ্য চাইবে। যা দেওয়া মাত্র আপনার ব্যাংক, বিকাশ নম্বর কোড সব চলে যাবে ওদের নিয়ন্ত্রণে। এক কথায় আপনার ফোনটিই চলে যাবে ওদের নিয়ন্ত্রণে। তাই সাবধান। এর কিছুই ক্লিক করবেন না।
প্রায় একই কথা বলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিপূর্বেই আমরা এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বহুবার সাবধান করেছি। এখনো করছি। এটা অনেক বড় একটি চক্র। এদের মূল নেটওয়ার্ক দেশের বাইরে হওয়ার কারণে আমাদের সময় লাগছে। তবে অনলাইন জুয়া নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব শীঘ্রই হয়তো ভালো খবর দিতে পারবো।