4:30 pm , April 2, 2024
বিশেষ প্রতিদেক ॥ গ্রীষ্ম শুরুর আগেই বসন্তের তাপ প্রবাহের সাথে বিদ্যুৎ ঘাটতি বরিশাল অঞ্চলের রোজাদার সহ সার্বিক জনজীবনে অস্বস্তি ক্রমশ বৃদ্ধি করে চলছে। গত কয়েকদিন ধরেই সন্ধ্যায় ইফতারীর সাথেই বিদ্যুৎ ঘাটতি শুরুর পরে অনেক এলাকায় তারাবীর সময়ও তা অব্যাহত থাকছে। তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ৩-৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে থাকার মধ্যেই অন্ধকার আর গরমে তারাবীর নামাজ আদায় করতে গিয়ে মুসুল্লীদের দুর্ভোগ সব সীমা ছাড়াচ্ছে। শহরের চেয়ে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকাতে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পেরিয়ে লোডশেডিং তুলনামূলক বেশী বলে অভিযোগ রয়েছে। সাথে বিতরণ ব্যবস্থার গলদে বরিশাল মহানগরী সহ সন্নিহিত এলাকাগুলোতে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনজীবনে দুর্ভোগ বৃদ্ধি করছে।
গত সোমবার বরিশাল ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনে একটি ট্রান্সফর্মারে আকস্মিক বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকান্ডের পরে বরিশাল মহানগরীতে প্রায় ৪৫মিনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। ঝালকাঠী জেলা সদর সহ পুরো এলাকায় পৌনে ৩ ঘন্টা পরে বিকল্প ব্যবস্থায় সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হলেও বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন ফিডারগুলো সন্ধ্যা থেকে কয়েকবারই ট্রিপ করে। এরমধ্যে হাতেম আলী কলেজ ফিডারটি ইফতারের পর পরই ৪বার ট্রিপ করায় রোজাদারদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। সুষ্ঠু রক্ষনাবেক্ষন ও যথাযথ নজরদারীর অভাবে বরিশাল মহানগরী ও সিন্নিহিত এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা অনেক নাজুক পর্যায়ে। আকাশে মেঘ জমলেই এ নগরীর অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহবন্ধ হয়ে যায়।
পল্লী বিদ্যুৎ এবং পশ্চিম জোন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে গত কয়েকদিন ধরে সান্ধ্য পীক আওয়ারে ৩শ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ রেশনিং করতে হচ্ছে। জ¦ালানীর অভাবে বরিশাল অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বেসরকরী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পূর্ণ উৎপাদনে যেতে পারছেনা। ফলে গত কয়েকদিন ধরেই সান্ধ্য পীক আওয়ার থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ রেশনিং করতে হচ্ছে। এমনকি আসন্ন গ্রীষ্মে চাহিদা বৃদ্ধির সাথে আরো নাজুক পরিস্থিতির আশংকার কথা জানিয়েছে পিজিসিবি, ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্বশীল মহল।
তরল জ¦ালানী সংকট মোকাবেলায় বরিশালে সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার সহ পিডিবি’র পশ্চিম জোনে সরকারী ও আধা সরকারী বেশ কয়েকটি ইউনিটের উৎপাদন সীমিত করতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর রেশ ধরে জাতীয় গ্রীড থেকে চাহিদার বিপরীতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত রেশনিং করতে হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। যা আসন্ন গ্রীষ্মে আরো বৃদ্ধির আশংকার কথাও জানিয়েছে একাধিক দায়িত্বশীল মহল।
অথচ গ্রীষ্মের আগেই বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ইতোমধ্যে স্বাভাবিকের ৩-৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল অঞ্চলে প্রবাহমান মৃদু থেকে মাঝারী তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে। জলীয় বাস্পের আধিক্যের কারণে জনজীবনে অস্বস্তি বৃদ্ধির কথাও বলেছে আবহাওয়া অফিস।
ফলে রোজাদার সহ সাধারন মানুষ অস্বস্তিকর গরমে চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। তাপমাত্রার আধিক্যের সাথে বিদ্যুৎ রেশনিং ঈদের কেনাকাটায়ও বিরুপ প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
অপরদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চলমান তাপ প্রবাহের মধ্যে বিদ্যুৎ ঘাটতির এ সময়ে ‘হিট স্ট্রোক’ এর ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।