2:42 pm , March 18, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ হন্তদন্ত হয়ে একবারে শেষ মুহূর্তে মসজিদের সামনে এসে দাঁড়ালেন দুই যুবক। মুয়াজ্জিন তখন মাগরিবের আজান দিতে যাবেন। যুবকদের দেখে ইশারায় দোতালায় যাওয়ার পথ দেখালেন। দোতালায় বারান্দা ও ভিতরের নামাজের স্থানে তখন প্রায় আড়াইশ মুসল্লী জড়ো হয়েছেন ইফতােেরর জন্য। বেশিরভাগ মুসল্লী রোজদার অসহায় মিসকিন ও মুসাফির। এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে। আবার কিছু আছেন প্রতিবেশী ব্যাচেলর। আবার সখের বশে সবসময় মসজিদে ইফতার করেন এমন মুসল্লীর সংখ্যাও কম নয় বলে জানালেন বরিশালের ব্রাউন কম্পাউন্ড মসজিদের ইফতার বন্টনের দায়িত্বরত কামরুল হাসান রতন। তিনি বলেন, প্রতিদিন এই মসজিদে ১৫০ থেকে ২০০ মুসল্লী ইফতার করেন। এই ইফতার আয়োজন মসজিদ কমিটির। তবে যেমন আজ আমার উদ্যোগে হচ্ছে। আমার বাবা মরহুম তানজেল আলী খলিফা এর জন্য দোয়ার দরখাস্ত করে এই ইফতার আয়োজন করেছি আজ।
সোমবার সন্ধ্যায় চিড়ার শরবত, সেদ্ধ ডিম, কলা, খেজুর, ছোলাবুট ও পানি নিয়ে ব্রাউন কম্পাউন্ডের মসজিদের ইফতারে ভিড় ছিলো অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি।
এই মসজিদের ঈমাম মাওলানা মো: সোহরাব হোসেন বলেন, প্রতিবছর এই মসজিদে ইফতারে কয়েক হাজার মানুষের সেবা করার সুযোগ হয়। ইফতারে অসহায় গরীব মিসকিন ও মুসাফির যত বেশি হবে নেকির পাল্লা ততই ভারী হবে। বিশেষ করে মিসকিন, যাদের খাবারের অভাব আছে তাদের উপস্থিতি বেশি হওয়া উচিত বলে জানান ইমাম সোহরাব হোসেন। গতদিন স্বাভাবিক ইফতারের আয়োজনে ছিল ছোলা বুট, মুড়ি, খেজুর, আলুর চপ ও পিয়াজু। কোনোদিন কলা অথবা জিলাপি দিয়ে সাজানো হয় প্লেট। সাথে এক গ্লাস শরবত। কখনো আবার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেও ইফতার আয়োজন হয় নগরীর উল্লেখযোগ্য প্রায় সব মসজিদেই। এটাই রোজার মহত্ত্ব। রোজদারকে ইফতার করানো রোজা রাখার সমান নেকী বলে জানান তালুকদার হাটের তালুকদার বাড়ি জামে মসজিদের ঈমাম মোকলেছুর রহমান। বরিশাল নগরীর জামে কসাই, এবাদুল্লাহ, স্টিমারঘাট মসজিদেও প্রতিদিন প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ মানুষের জন্য এই ইফতার আয়োজন সাজানো হয় রমজান উপলক্ষে।সাথে নিয়মিত থাকে চিড়া ও বুট মুড়ি। সব মসজিদও চলে নিয়মিত ইফতারীর আয়োজন ।স্থানীয় মুসুল্লিসহ পথচারীরাও এতে অংশ নেয়। ইফতারের পূর্বে রোযাদারদের নিয়ে দোয়া-মোনাজাত করা হয়। একইভাবে কোথাও কোথাও শুধু মুড়ি-চিড়া ও শরবত কিংবা কোনো কোনো মসজিদে খিচুড়ির আয়োজনও হয়। এটা ফি সাবিলিল্লাহ। আল্লাহর দয়া ও রহমত প্রাপ্তির আশায় মসজিদ কমিটি বা স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। বরিশাল জেলা ঈমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, ইফতার করা নিয়ে নবী করিম (সাঃ) এর অনেক হাদিস রয়েছে। যায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সম পরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।”[ সুনানে তিরমিযি (৮০৭), সুনানে ইবনে মাজাহ (১৭৪৬), ইবনে হিব্বান তাঁর সহিহ গ্রন্থ (৮/২১৬) এ এবং আলবানি তাঁর ‘সহিহ আল-জামে’ গ্রন্থ (৬৪১৫) হাদিসটিকে ‘সহিহ’ বলেছেন।
মাওলানা আব্দুল মান্নান আরো বলেন, জনৈক সলফে সালেহিন বলেছেন: “দশজন সাথীকে দাওয়াত দিয়ে তাদের পছন্দসই খাবার খাওয়ানো আমার কাছে দশজন গোলাম আজাদ করার চেয়ে প্রিয়।” সলফে সালেহিনের অনেকে নিজের ইফতার অন্যকে খাওয়াতেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- ইবনে উমর, দাউদ আল-তাঈ, মালিক বিন দিনার, আহমাদ ইবনে হাম্বল। ইবনে উমর এতিম ও মিসকীনদের সঙ্গে না নিয়ে ইফতার করতেন না। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশের অনেক মসজিদে আজো পথচারী মুসাফিরদের সাথে নিয়ে ইফতার করার প্রচলন রয়েছে বলে জানান তিনি।