3:37 pm , March 10, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ রাজধানী ঢাকা ও উত্তরাঞ্চল সহ প্রায় সারা দেশের সাথে বরিশাল অঞ্চলের সড়ক পরিবহন আরো নির্বিঘœ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রায় ১০ বছর পরেও কাগুজে অগ্রগতিও খুব সীমিত। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বরিশালেও একাধিক জনসভায় এ মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ মহাসড়কটির ওপরই বরিশাল বিভাগীয় সদর সহ পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ নির্ভরশীল। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে’র সুফলও নির্ভর করছে ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি উন্নয়নের ওপর। অথচ ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু হবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের সব জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের বাড়তি চাপ ইতোমধ্যে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি সহ নানা বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেছে। ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়তি যানবাহনের কারণে এ মহাসড়কে যানবাহনের গতি এখন অনেক ধীর। ফলে আগের চেয়ে বাড়তি সময় লাগছে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পৌঁছলেও সেখান থেকে ৯১ কিলোমিটার দক্ষিণে বরিশাল, ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ফরিদপুর শহর এবং ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌঁছার মহাসড়কের কোনটিই মানসম্মত নয়। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ।
অথচ প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহেই এ মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত ভূমি অধিগ্রহণে একটি প্রকল্প একনেক-এর অনুমোদন লাভ করে। তবে প্রকল্প-প্রস্তাবনানুযায়ী ২০২০-এর জুনে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা থাকলেও তা চলতি বছরের জুনেও সম্ভব হচ্ছেনা। মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করণের লক্ষ্যে বিদ্যমান সড়কের দুপাশে আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে মূল প্রকল্পের আগে ঐ ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল।
কিন্তু এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৫ সাল থেকে যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও পথনকশা তৈরী করা হয়, তাতে বরিশাল মহানগরীর মধ্যে দিয়ে বিদ্যমান মহাসড়কটি সম্প্রসারণের কথা বলা আছে। বাস্তবতার আলোকে পরবর্তীতে মহানগরীর পরিবর্তে প্রায় ১৬ কিলোমিটার বাইপাস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় সে ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পটুয়াখালীতেও পথনকশায় কিছু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। ফলে বরিশাল ও পটুয়াখালীতে আরো অন্তত ২শ’ হেক্টর বাড়তি ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে।
২০১৫ সালের দর অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে ১৮শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ঐসব জমির বর্তমান বাজার মূল্য দ্বিগুণেরও বেশী বৃদ্ধি সহ নতুন পথনকশা অনুযায়ী প্রায় ৩ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমির মূল্য পরিশোধেই মূল ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের দ্বিগুণেরও বেশী অর্থের প্রয়োজন হবে বলে সড়ক অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সাথে বাড়তি ২শ’ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সংশোধিত ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ তৈরীর কথাও জানিয়েছে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র।
অপরদিকে মহাড়কটির বরিশাল বিমান বন্দর ও ফরিদপুরে একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের কাছে এলাইনমেন্ট নিয়েও যথেষ্ট জটিলতা তৈরী হয়েছে। এ দুটি স্থানের এলাইনমেন্ট নিয়ে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হতে পারে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
অপরদিকে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটির যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও পথনকশা অনুযায়ী ২১১ কিলোমিটার মহাসড়কটির জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ২১ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও এখনো তার জন্য কোন দাতা পাওয়া যায়নি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি’র অর্থে সমীক্ষা ও নকশা প্রস্তুত হলেও ইতোমধ্যে দাতা সংস্থাটি পূর্বের সব কিছু সংশোধন করে নতুন করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ নকশা প্রণয়নের কথা বলেছে। সে লক্ষ্যে কাজও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে কবে নাগাদ এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে তা বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট মহল।
দাতা সংগ্রহের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও এডিবি ছাড়া আরো কয়েকটি দাতা সংস্থার সাথে প্রকল্পটির অর্থায়ন নিয়ে কথা চলছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চ পর্যায় থেকে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনও হয়েছে। তবে আগামী অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে-এডিপি’র সবুজ পাতায় ‘ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী সড়ক অধিদপ্তর সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়।
কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ সহ দাতা সংগ্রহ এবং দরপত্র আহবান, কারিগরি ও অর্থিক মূল্যায়ন শেষে বাস্তব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ কবে শুরু হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মহল। তবে এ লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায় সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় যথেষ্ট আন্তরিক বলে জানানো হয়েছে।