3:57 pm , March 9, 2024

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের দুটি খেয়াঘাটের ইজারা হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। আর এ টাকার চারগুণ আয় করতে হবে ইজারাদারকে। এ কারণে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না ইজারাদারের নিয়োগপ্রাপ্ত লোকজন। তারা খেয়াঘাটের ইজারা নিয়েই ৫টির পরিবর্তে ১০টি মোটরসাইকেল এবং ২০ জনের পরিবর্তে ৪০ জন যাত্রী নিয়ে পারাপার করছেন। আর এ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছেন প্রতিদিন গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ ও যানবাহন। যানবাহনের বেশিরভাগই মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও ভ্যান। একটি ফেরীও আছে এখানে। তবে তা শুধুমাত্র ভিআইপি পারাপারের জন্য বলে জানান বরিশালের চরবাড়িয়া ও চরমোনাই ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
বরিশালের সদর উপজেলার বেলতলা খেয়া বা ফেরীঘাটের চিত্র এটি। এখানে প্রায়শই যাত্রী বোঝাই ট্রলার আটকে থাকছে চরে। খানাখন্দ ও ইট-সুরকী বিছানো ফেরীঘাটের বেহাল অবস্থা। তারউপর অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল ছাড়াও রয়েছে দশের অধিক মোটরসাইকেল বহন করার অভিযোগ। এসব অনিয়ম কখনোই চোখে পড়ে না বরিশাল জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তারা প্রতিবছর শুধু নিলামের টাকা বাড়াচ্ছেন। সরেজমিনে শনিবার সকালে বেলতলা খেয়াঘাট ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। ঘাট ইজারাদারের পক্ষে দুই পাড়ের শ্রমিকদের অনেকেই জানালেন, চলতি বছর ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ইজারা হয়েছে এই ফেরী বা খেয়াঘাটের। হিরা মাতুব্বর এবারের ইজারা পেয়েছেন বলে জানান তারা। এসময় সাবেক ইজারাদার মোকলেছুর রহমান বলেন, এই ঘাটের ইজারা সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সময় ছিলো মাত্র ১১ লাখ টাকা। ২০২২ সালে এটির ডাক হঠাৎ বেড়ে ৮৫ লাখ টাকা হয়ে যায়। আর চলতি বছর এই ঘাটের ডাক হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার লোকের চলাচল এই ফেরীঘাটে। ঘাটে দাঁড়ানো ফেরী থাকার পরও দুটি মাঝারি আকারের ট্রলারে মানুষসহ অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল পারাপার এখানে। চরমোনাই ছাড়াও হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চলাচলের পথ এটি। তবে চরমোনাই মাহফিলকে ঘীরে এ ঘাটের ব্যস্ততা দ্বিগুণ বেড়ে যায় বলে জানান এলাকাবাসী। বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ও চরমোনাই ইউনিয়নকে ঘীরে এই ফেরী বা খেয়াঘাটের অবস্থান। এখানের ঘাট প্রবেশ পথের অবস্থা দুপাড়েই ভয়াবহ অবস্থা। বর্ষাকালে রীতিমতো পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা ও ভয় দশ-বারোটি মোটরসাইকেল উঠিয়ে ৫০ জনের বেশি যাত্রী নিয়ে চলছে এই খেয়া। যাত্রীরা জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় আমাদের। দিনের বেলা ভাড়া ৮ টাকা হলেও বেশিরভাগ সময় দু টাকা ভাংতি নেই বলে দশ টাকাই রেখে দেয় ঘাটের লোকেরা। আর রাত হলেই ভাড়া হয়ে যায় ১৫-২০ টাকা। তারউপর ঘাটে ভিড়তে যেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ট্রলার প্রায়ই আটকে যায় চরে।
অভিযোগ স্বীকার করে ঘাট শ্রমিকদের কয়েকজন বলেন, রাত দশটার পর ১০ টাকা করে নেই। আর যাত্রী কম থাকলে তখন কেউ কেউ বেশি দিয়ে পার হতে চাইলেতো আমাদের দোষ নয়। তাছাড়া কোটি টাকা ইজারা হয়েছে। আমাদেরতো পোষাতে হবে বলে জানান ইজারাদার হিরা মাতুব্বর।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম বলেন, বরিশালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেয়াঘাট চরকাউয়া ইউনিয়নে। সেটি এখন টোল ফ্রি এবং ইজারামুক্ত। তাহলে এটি কেন এখনো ইজারা দিতে হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে চাইলে এই ঘাটের ইজারামুক্ত করতে হবে। এজন্য আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনও করেছি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ নিয়ে চুপ করে আছেন বলে জানান চরমোনাই চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ইজারার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এই খেয়াঘাটের অনেক সমস্যা রয়েছে বলে আমিও শুনেছি। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।