সৌভাগ্যের রজনী লাইলাতুল বরাত সৌভাগ্যের রজনী লাইলাতুল বরাত - ajkerparibartan.com
সৌভাগ্যের রজনী লাইলাতুল বরাত

3:49 pm , February 24, 2024

মুফতি মাওলানা ডাঃ এম,এ ছালাম

ভূমিকাঃ মুসলিম জাতীয় জীবনে প্রতিবছর যতগুলি পবিত্র ও মহিমান্বিত রজনীর আগমন ঘটে, তার মধ্যে পাঁচটি রাত বা রজনীর গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকে সর্বাধিক মহিমান্বিত, তা হলো শবে মেরাজ, শবেবরাত, শবে কদর, ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা রজনী। উল্লেখিত রজনীর মধ্যে শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত অন্যতম। সংজ্ঞাঃ শব ফারসী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ রাত বা রজনী। এর আরবী প্রতিশব্দ ‘লাইলাতুল’ অর্থও রজনী। ‘বরাত’ শব্দের অর্থ পাপ, মার্জনা, মুক্তি ও নিষ্কৃতি। সুতরাং ‘লাইলাতুল বরাত’ শবে বরাত অর্থ নিস্কৃতি। নিস্কৃতির রজনী, পাপ মার্জনার রাত্রি। যেহেতু এ রাতে মুমিন বান্দার গুনাহ মার্জনা করা হয়ে থাকে এবং আল্লাহর অসংখ্য রহমত ও বরকত বান্দার প্রতি নাযিল হয়, সে কারণেও রাতকে সৌভাগ্য রজনী বলা হয়।
গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ মাহে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগত নিয়ে যে মাসটি আগমন করে সে মাসটিই শাবান মাস। এ শাবান মাসের ১৪তারিখের দিবাগত রজনীকেই লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত বলা হয়ে থাকে। এ রাতের ইবাদত আল্লাহর নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য। এ রাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একাধিক বানী প্রদান করেছেন। নি¤েœ তার কতিপয় বানী উল্লেখ করা হলোঃ
১. তিরমিযি শরীফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আয়েশা ছিদ্দিক (রাঃ) বানী প্রদান করেছেন, মহান আল্লাহ শাবানের মধ্যবর্তী রাতে ১৪ই দিবাগত রাত, প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বনু কিলাবের সমুদয় বকরীর পশমের সংখ্যার চেয়ে বেশি অপরাধী বান্দাদের ক্ষমা করে থাকেন।
২. অন্য এক হাদিসে বনু কিলাব, বনু রবী ও বনু মুজর এর মেষ বা বকরীর পশমের সংখ্যা পরিমাণ রহমত নাযিলের কথা বর্ণিত হয়েছে। উক্ত তিন গোত্রের প্রত্যেক সম্প্রদায় তিন হাজারের অধিক বকরী পালন করত।
৩. ইবনে মাযাহ নামক হাদীসগ্রন্থে বর্নীত রয়েছে যে, হযরত আলী (রাঃ) রাসুল (সাঃ) হতে এরশাদ করেছেন, যখন অর্ধ শাবানের রাত জেগে ইবাদক কর (নামাজ পড়) এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা আল্লাহপাক সূর্যাস্তের পর ঐ রাতে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন হে মানব সকল, কোন ক্ষমাপ্রার্থী কি নেই? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব, কোন জীবিকা কি প্রার্থী নেই? আমি তাকে জীবিকা দান করব, কোন বিপদগ্রস্থ কি নেই? আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেব। (এরকম আরো আরো যারা প্রার্থী আছে, আমি তাদের আশা পূরণ করব)। এভাবে প্রভাতের পূর্ব পর্যন্ত ঘোষণা চলতে থাকে।
৪. অনুরুপ আরো একটি হাদীস হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন, হে মানব সকল! তোমরা শাবান মাসের ১৫ তারিখের রজনীতে ওঠো। কেননা উহা বরকতপূর্ণ। সে রাতে আল্লাহ ঘোষণা করেন তোমাদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি, যে আমার নিকট ক্ষমা চায়? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।
৫. এ মাসের রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) অপর একটি হাদিসে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শাবান মাসের তিনদিন রোজা রাখলো আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন তাকে বেহেশতী উটের উপর আরোহী করে উঠাবেন। (ইবনে মাযাহ)।
৬. বায়হাকী নামক হাদিস গ্রন্থে অপর একটি হাদিস হযরত আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে তিনি বলেছেন হুজুর (সাঃ) বলেছেন, তোমরা কি জানো এ রজনীতে অর্থাৎ শাবানের পঞ্চাদশ রজনী কি আছে? তিনি আয়েশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এতে কি আছে? এ বৎসর যত মানব সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং যত মানব সন্তান প্রাণ ত্যাগ করবে ঐ রাতে সবই লিপিবদ্ধ করা হবে। এ রাতে তোমাদের কার্যাবলী উত্তোলিত হবে এবং তোমাদের জীবিকা অবতীর্ণ হবে। তারপর আয়েশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত কেহই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনবার তিনি এ কথা বললেন, আমি আয়েশা (রাঃ) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আপনিওনা? একথা শুনে তিনি তার কপালে হাত রাখলেন এবং বললেন না, আমিও না। তবে আল্লাহ তাআলা আমাকে আপন অনুগ্রহ দ্বারা আবৃত করেছেন, তিনবার তিনি এ কথা বললেন।
৭. সহীহ বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী শরীফে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অন্য মাস অপেক্ষা শাবান মাসেই অধিকতর নফল রোযা রাখতেন। হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) পূর্ববর্তী রমজানের পরিত্যক্ত রোজা শাবান মাসে কাযা আদায় করতেন। ইসলামী বিশ্বকোষে উল্লেখ রয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) এ রাতে জান্নাতুল বাকী কবর স্থানে গমন করে মৃত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করছিলেন।
৮. রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন, তুবালিমান ইয়াখালু ফিলাইলাতিন নিছফিমিন শাবান খায়রুন’ অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির জন্য সু-সংবাদ (খুশি) যে ব্যক্তি শাবানের মধ্যে (১৫ তারিখ) রাতে নেক আমল করে।
৯. অন্য এক হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শাবানের ১৫ ই তারিখ রোজা রাখবে, আগুন জাহান্নাম তাকে কখনো স্পর্শ করবে না।
করণীয়ঃ উপরে উল্লেথিক হাদিসে ব্যাতিত আরো অনেক হাদিস লাইলাতুল বরাত এর মধ্যে শাবানের রাতে ইবাদতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে। এ রাতে ইবাদতের কারণে আবিদ ব্যক্তির গুনাহ মাফ হতে পারে জীবিকা বৃদ্ধি লাভ করে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তার আয়ুও বৃদ্ধি পেতে পারি। এ ব্যতীত আবিদ ব্যক্তির অন্যান্য যে কোন আশা ও অভাব পূরণ হতে পারে।এ রাত প্রার্থনা কবুলের রাত। সুতরাং, মুমিন মাত্রই উচিৎ এ রাতে অধিক পরিমাণে নামাজ পড়া, কোরআন তেলওয়াত করা, ইসতিগফার করা, দোয়া-দুরুদ পড়া, মৃত স্বজনদের জন্য দোয়া বা মাগফিরাত কামনা করা। এ রাতে সকল আবিদের দোয়া কবুল হলেও কয়েক ব্যক্তির দোয়া কবুল হবেনা। তারা হলো যাদুকর, গনক, কৃপন, পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারী সন্তান, মদখোর, জেনাকারী নারী ও পুরুষ এবং নেশা পান কারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না। তবে খালেছ (একনিষ্ঠভাবে) তওবা করলে অর্থাৎ আর কখনো এমন হবে অপরাধ করবেনা এরূপ সংকল্পকারীকে আল্লাহ মাফ করতে পারেন।
বর্জনীয়ঃ আমাদের বাংলাদেশ সহ ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য কোন কোন দেশে এ রাতে ইবাদতের নামে অনেক ইসলামবিরোধী কার্যাকলাপ সংঘটিত হয়ে থাকে, যেমন আতশবাজী, বোমাবাজী, রঙ তামাশা, গান বাজনা করা ইত্যাদি। এছাড়া হালুয়া, রুটি বন্টনের নামে বিভিন্ন প্রাণীর আকৃতিতে রুটি বানিয়ে তা বিক্রি ও ক্রয় করে বিতরণ করা হয়, তা মোটেই ইসলামসম্মত নয়। তবে মিসকিনদের ও আত্মীয়দের খাওয়ানো ও গরীবদের দান খয়রাত করা যেতে পারে। আরো একটি বিশেষ দিক লক্ষণীয় তা হলো এ রাতের নফল ইবাদতের কারণে পরবর্তী দিনের ফরজের ব্যাঘাত না ঘটে।
সমাপনীঃ তাই আসুন আমরা এই শাবান মাস ও লাইলাতুল বরাতের মর্যাদা রক্ষায় বেশি বেশি নেক আমলের চেষ্টা করে নিজেরা উপকৃত হই। আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত, বরকত ও মাগফিরাতের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন। ছুম্মা আমিন। আসসলামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT