3:44 pm , February 17, 2024

মনীষা চক্রবর্তী সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নগরীতে অবৈধ যানবাহন (হলুদ অটো-অটো রিক্সা) চালকদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে অতর্কিত হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে রীতিমতো অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এসময় বৈধ যানবাহন ভাংচুর ও একজন ট্রাফিক পুলিশসহ মোটরসাইকেল চালকের উপর হামলা চালায় অটো শ্রমিকরা। এ ঘটনায় মনীষা চক্রবর্তী সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের কপি আজকের পরিবর্তনে আসলেও কোতয়ালী ওসি বললেন, আমি কিছুই জানেন না। ব্যাটারিচালিত যানবাহন বিশেষ করে অটোরিকশা নিয়ে যখন নগরবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ এবং নগরবাসীর দাবীর মুখে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ এর নির্দেশে কিছু সড়কে ব্যাটারিচালিত যানের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারীর ঘোষণা চলছে ঠিক তখন ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালকদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন ব্যাটারিচালিত যানবাহন সংগঠনের উপদেষ্টা ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দেয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। একইসাথে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল ও র্যালি করতে সদর রোডসহ আশেপাশের সড়কে কঠিন নিরাপত্তা বেষ্টনী তুলে দিয়ে টাউনহল থেকে নগরভবন পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ট্রাফিক বিভাগ। তারপরও হঠাৎ অশান্ত হয়ে ওঠে ব্যাটারিচালিত যানবাহন চালকদের মিছিলটি। নগরভবনের সামনে গেলে শুরু হয় ভাংচুর, মারধর। রক্ষা পায়নি ট্রাফিক সার্জেন্টও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মনীষা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বেশ শান্তিপূর্ণ ভাবেই শ্রমিকরা ফজলুল হক এভিনিউতে প্রবেশ করে। সেখানে একজন মোটরসাইকেল চালক তার মোটরসাইকেল নিয়ে মিছিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাকে বেদম মারধর ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করে শ্রমিকরা। মোটরসাইকেল চালককে রক্ষা করতে এসে ট্রাফিক সার্জেন্ট শহীদুলও মারধরের শিকার হন।
এরপরই ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালকদের একটা অংশ নগরভবনের সামনে ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে থাকা সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এতে সিএনজি উল্টো করে ফেলে দেয়ায় নারী-শিশু আহত হয়।
আহত মোটরসাইকেল চালক আব্দুল্লাহ আল মেহেদী জানান, মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র ঘরে রেখে আসার কারণে ট্রাফিক সার্জেন্টকে এড়িয়ে যেতে সে তাড়াতাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। মিছিলের পাশ দিয়ে বের হয়ে যেতে চাইলে শ্রমিকদের ধাক্কায় মোটরসাইকেলসহ পড়ে যান। এরপর শ্রমিকদের একটা অংশ তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে ও লাথি-ঘুষি সহ লাঠিপেটা করে।
মেহেদী বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট শহীদুলের ভয়েই আমি পালাতে চেয়েছিলাম। তবে তার কারণেই আজ প্রাণে বেঁচে গেলাম। আমার জন্য তিনিও আঘাত পেয়েছেন।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা আমরা শ্রমিকদের থেকে আশা করিনি। ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন প্রাপ্য সিএনজি চালিত থ্রীহুইলার চালকরা। তাদের দাবী ১১টি গাড়ী ভাংচুর করেছে শ্রমিকরা। এ ঘটনায় মনীষা চক্রবর্তীকে প্রধান আসামী করে মামলা করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গত তিনমাসে বরিশালে অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ৩ শতাধিক লোক শয্যাশায়ী হয়েছেন দাবী করে সামাজিক আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান, এনায়েত হোসেন শিবলু, নারী নেত্রী শাহ সাজেদা বলেন, নগরীতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করছে। এদের মধ্যে অটোরিকশাগুলো খুবই ভয়ংকর। ওদের কারণে অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ পথচারী ও যাত্রীরা। এদের থামানো উচিত।
এবিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা রোমেল বলেন, নগরবাসীর দাবীর মুখে মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালের ট্রাফিক বিভাগকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, একজন মোটরসাইকেল চালক মিছিলের মধ্যে ঢুকে যাওয়ায় শ্রমিকরা এবং এলাকাবাসী তাকে নিবৃত্ত করেন। আমাদের ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালকরা কেউ কোনো ভাংচুর ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলোনা।
এসময় যত্রতত্র অযৌক্তিকভাবে ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে ট্রাফিক হয়রানি ও মামলা দেয়া বন্ধ করা, মামলার জরিমানা অনধিক ৫০০ টাকা করা, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পার্কিং স্ট্যান্ড নির্মাণ, অবিলম্বে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে ব্যাটারিচালিত রিক্সা উচ্ছেদ বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়ে মনীষা আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন মোড় থেকে যাবার সময় একটি পালসার মোটরসাইকেল প্রচন্ড গতিতে মিছিলের মধ্যে শ্রমিকদের গায়ে উঠে যায়। এসময় কিছু অজ্ঞাতপরিচয় লোক মিছিলে ঢুকে শ্রমিকদের উপর হামলা করে ও আশেপাশে গাড়িতেও আঘাত করে। পরে শ্রমিকরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।
মনীষাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নেতৃবৃন্দ সংগ্রাম পরিষদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে এই ষড়যন্ত্রমূলক অতর্কিত হামলা ও ভাংচুরের তীব্র নিন্দা জানান এবং এই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
এর আগে বেলা ১১টায় বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে রিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান- ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের সহস্রাধিক শ্রমিকের উপস্থিতিতে সদর রোড অবরুদ্ধ হয়ে যায়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগ্রাম পরিষদের বরিশাল জেলার সভাপতি দুলাল মল্লিক, বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়কারী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক ইমাম হোসেন খোকন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সংগ্রাম পরিষদের ১৩ নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি শহিদুল শেখ, ৩ নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি মনির সরদার প্রমুখ। এসময় বক্তারা গত ২৬ জানুয়ারি বরিশালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির মিটিং এর পর থেকে যত্রতত্র অযৌক্তিকভাবে ট্রাফিক মামলা ও পুলিশী হয়রানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে দাবী করেন এবং বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চলাচল বন্ধ করার বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানান। বক্তারা শ্রমিকের পেটে লাথি মারার চেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী জানান।