4:24 pm , February 15, 2024
ভোলার ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে
মো. আফজাল হোসেন, ভোলা ॥ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কোন ধরণের বৈধতা না থাকার পরেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না অজ্ঞাত কারণে। এতে করে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে শিশুরা।
জেলার সর্বদক্ষিনের চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের এ আলী ব্রীকস। উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক বাবুল এর মালিকানাধীন এ আলী ব্রিকস অবৈধভাবে চলছে। জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর এই ইটভাটার পাশেই রয়েছে ১০৯ নং দক্ষিণ আসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিন কোমলমতি শিশুরা পাঠদানে আসে এই বিদ্যালয়ে। তবে এই শিশুরা টের পাচ্ছে না কত ভয়ংকর ক্ষতি হচ্ছে তাদের স্বাস্থ্যের। শুধু যে এই শিশুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব ইটভাটার আশপাশে বসবাসকারী হাজারো মানুষ।এছাড়া মনপুরা উপজেলার মাস্টারহাট এলাকায় ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সাকুচিয়া বদিউজ্জামান দাখিল মাদ্রাসার ঠিক সামনেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাকির হোসেন এর রয়েছে বিশাল অবৈধ ইটভাটা। চিমনি ব্যবহার করা ইটভাটাতে কোন ধরণের নিয়মের তোয়াক্কা নেই। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডা: মো: হোসাইন শাওন বলেন, অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটার আশপাশের মানুষের জন্য ঝুঁকিটা সবচেয়ে বেশি। যেমন সিলিকা,কার্বন পার্টিকেলসহ যেগুলো বের হচ্ছে সেগুলো শ্বাসের সাথে ফুসফুসে চলে যায়। ফলে নানা ধরনের ইনফেকশন হয়। বড়দের ক্ষেত্রে এ্যাজমাসহ নানা রোগ হলেও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। সেক্ষেত্রে খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হয়। যেমন নিউমোনিয়া,এ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয় থাকে শিশুরা।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি রির্জাভ বনায়ন ও ঘন বসতিসহ লোকালয় থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। এছাড়াও কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরির আইনগত বিধি নিষেধ থাকলেও কৃষিজমি, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
মনপুরা মাস্টারহাট সাকুচিয়া বদিউজ্জামান দাখিল মাদ্রাসার সামনের স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: জাকির হোসেন এর ইটভাটায় কথা হয় সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর মো: হেলাল এর সাথে। তিনি জাকির চেয়ারম্যানের ইটভাটায় কাঠ বিক্রি করছেন। তিনিই দিয়েছেন সাড়ে ৩ থেকে ৪হাজার মণ। তার মত রয়েছে আরো ৬/৭জন যারা কাঠ দিয়ে থাকেন মনপুরার বড় দুটি ইটভাটায়। একটির মালিক হচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো: জাকির হোসেন অপরটি হচ্ছে উপজেলা পরিষদ এর ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান রাশেদ মোল্লার।
মনপুরা ব্রিকস এর দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা মো: জাকির বলেন, এবছর ইটভাটা চালাচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এর ভাই মো: ফারুক। তার ইটভাটায় ২৫ হাজার মণ লাকরি লাগে ইট পোড়াতে।
কমদাম ও সহজেই পাওয়া যায় বলে ভাটার মালিকরা জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছে বলে জানান চরফ্যাশনউপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন আখন এর ঘোষের হাট সংলগ্ন জাহান ব্রিকস এর ম্যানেজার মিজানুর রহমান।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে একই নামে দুটি করে ইটভাটা চালাচ্ছেন মালিকরা। জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার জন্য প্রতি বছর এ আলী ব্রিকস এর মালিক ওমর ফারুক বাবুল প্রতিটি ইটভাটা থেকে টাকা তুলছেন বলে একাধিক মালিক এই প্রতিদককে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে এবছর তারা চরফ্যাশনের হোটেল মারুফে মিটিং করেছেন বলেও জানান তারা। সাংবাদিক ম্যানেজ করার জন্য চরফ্যাশনের ৩২টি ইটভাটা থেকে ১০ হাজার করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলেছেন। চরফ্যাশন ইটভাটা মালিক সমিতির সাদারন সম্পাদক ওমর ফারুক বাবুল প্রতিটি ইটভাটা থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে বলেন, না না ভাই এ রকম কোন কথাও হয়নি এবং কোন টাকাও কালেকশন করিনি। ডিসি অফিস কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর অফিস নিয়ে কোন কথাও হয়নি আমার জানামতে। আপনাকে কে জানিয়েছে তা আমার জানা নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: তোতা মিয়া বলেন,১০৯টি ইটভাটার মধ্যে ৯২টি চলমান রয়েছে। ৫৪টি পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়েছে। বাকী ৩৬টি অবৈধ ইটভাটা। তবে বৈধ আর অবৈধ প্রায় সব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করার খবর পেয়েছি। এসব ইটভাটা গুলোতে মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমরা চিঠি দিয়েছি, তারা কথা শুনছে না। এখন ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।
জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন,যেসকল ইটভাটা অবৈধ রয়েছে এবং বৈধ আছে যারাই কাঠ বা অন্যকিছু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। যাতে কেউ অবৈধভাবে সরকারি বনায়নের গাছ এনে বনায়ন উজার না করতে পারে সে বিষয় বন বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী ১০৯টি ইটভাটা থাকলেও বাস্তবে অনেক বেশি রয়েছে।