4:10 pm , February 13, 2024

ইটভাটা মালিকদের রক্ষা কবজ হিসাবে কাজ করছেন হিসাব রক্ষক
হেলাল উদ্দিন ॥ অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের কঠোর নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছিলো বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন। অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছিলো কয়েকটি ইটভাটা। কিছুদিন যেত না যেতেই হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর। এখন মাঝে মধ্যে কিছু অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে যা লোক দেখানো ও ক্ষেত্রবিশেষ নিজেরদের স্বার্থ হাসিল করার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। সুত্র বলছে এখন যেসব সব অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তা বরিশাল জেলার বাইরের অন্যান্য জেলা ও উপজেলায়। বিশেষ করে বরিশাল সদর উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না বললেই চলে। যা রহস্য জনক। বরিশাল বিভাগে যতগুলো অবৈধ ইটভাটা রয়েছে তার অর্ধেকই রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলা ও জেলায়। অথচ এখানেই অভিযানে নিষ্ক্রিয়তা বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের। জেলার দুই একটি উপজেলায় লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হলেও সদর উপজেলায় যেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের নিরাপত্তার চাদর বিছানো রয়েছে। তবে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের দাবি ঢাকা অফিস থেকে অভিযানের সিডিউল নির্ধারিত হয়। এখানে তাদের কিছু করার থাকে না। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এখানেও রয়েছে কৌশলগত প্রক্রিয়া।
ঢাকা অফিস সিডিউল নির্ধারন করলেও বরিশাল অফিস থেকেই অভিযানের তালিকা প্রেরন করা হয়। সে অনুযায়ী অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ ও প্রেরন করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষ ঢাকা অফিস থেকে অভিযানের যে তালিকা পাঠানো হয় তাও পরিবর্তন করে ফেলে বরিশাল অফিস।
অনুসন্ধান ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলায় যতগুলো অবৈধ ইট ভাটা রয়েছে তাদের মালিকদের সাথে পরিবেশ অধিদপ্তরের সখ্যতা রয়েছে। অফিস থেকে এসব ভাটার দুরত্ব অনেকটা কম থাকায় ভাটা মালিকরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে। ফলে তারা অনেকটা দাপটের সাথে পরিচালনা করছে অবৈধ ভাটাগুলো। এর মধ্যে কর্নকাঠীর ফাইভ স্টার ও জেবি-১৭, চরকাউয়ার আরএসবি, রানীর হাটের এমএবি ও মোল্লা ব্রিক্স। সম্পূর্ণ অবৈধ থাকার পর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে এসব অবৈধ ইটভাটা মালিকদের সাথে যোগাযোগ ও তাদের রক্ষা কবজ হিসাবে কাজ করছেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব রক্ষক সুকুমার দাস। তার বাইরেও বিভিন্ন সময়ে একাধিক সহকারী পরিচালক ও পরিচালক ভাটা মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে সব চেয়ে এগিয়ে হিসাবরক্ষক সুকুমার দাস। কারন চাকুরী জীবনের শুরু থেকে একযুগেরও বেশী সময় ধরে বরিশাল অফিসেই কর্মরত আছেন তিনি। যখন যে পরিচালক এসেছেন তাকেই নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছেন। তিনি। পরিচালককে সামনে রেখেই ভাটা মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহন করছেন সুকুমার দাস। তাকে খুশি না করতে পারলে কিংবা টাকা না পেলেই বিপদ নেমে আসে সেসব ভাটা মালিকদের কপালে। অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হয় তাদের। জানা গেছে অভিযান পরিচালনার সিডিউল তৈরীতে নিয়ন্ত্রন রয়েছে এই সুকুমার দাসের। একজন হিসাব রক্ষক হয়েও প্রায় সব অভিযানে স্বশরীরে উপস্থিত থাকেন তিনি। একাধিক ভাটা মালিক আজকের পরিবর্তনের কাছে এসব অভিযোগ করেছেন ও তথ্য উপাত্ত প্রদান করেছেন। বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এইচ এম রাসেদ বলেন অভিযানের সিডিউল নির্ধারন করে ঢাকা অফিস আমাদের কাছে তালিকা পাঠায়, আমরা সে অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে আসছি। বরিশাল বিভাগে ৬ জেলায় আমাদের অভিযান পরিচালনা করতে হয়। এটা অবৈধ ভাটার সংখ্যার আধিক্যের উপর অনেকটা নির্ভর করে। বরিশার সদর উপজেলায় অভিযান কম পরিচালনা হয়ে থাকওে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এখানে কেউ কোন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে বলে জানান তিনি।
গত বছরের মার্চ মাসে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছিলো আগামী ৭ দিনের মধ্যে সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন শূন্যের কোঠায়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মাত্র কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করেই দায় সেরেছে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর। যেখানে শুধু বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায়ই অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ১৪৬ টি।
তথ্য বলছে, বরিশাল জেলায় মোট ইট ভাটার সংখ্যা ৩০৪টি। যার মধ্যে প্রায় অর্ধৈক ১৪৬টি অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী শুধু মাত্র জিকজ্যাগ ইট ভাটা ছাড়া (পরিবেশের সনদ প্রাপ্ত) অন্য সকল ইট ভাটাই অবৈধ। তাতে যদি পরিবেশের সনদ থাকেও। কারণ ২০১৩ সালের পর ১২০ ফুট ড্রাম চিমনি ইট ভাটা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় ৩৫টি ১২০ ফুট এবং ৮০টি ড্রাম চিমনি ইট ভাটা রয়েছে। আইন অনুযায়ী এই ১১৫ টি ভাটা ২০১৩ সাল অর্থ্যাৎ ৯ বছর আগে থেকেই অবৈধ হিসাবে গন্য হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়েও তা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া জেলায় মোট ১৮৯টি জিকজ্যাক ইট ভাটা রয়েছে। তার মধ্যে ৩৫টির পরিবেশ সনদ নেই। জেলার মধ্যে বাকেরগঞ্জে সর্বোচ্চ ৪০টি এবং হিজলায় ৩১টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।