ভান্ডারিয়ায় শীতের পিঠা বিক্রি করে বাড়তি আয় ভান্ডারিয়ায় শীতের পিঠা বিক্রি করে বাড়তি আয় - ajkerparibartan.com
ভান্ডারিয়ায় শীতের পিঠা বিক্রি করে বাড়তি আয়

4:00 pm , February 9, 2024

কবির খান, ভান্ডারিয়া প্রতিবেদক ॥  পিরোজপুরের ভা-ারিয়া উপজেলায় বিভিন্ন গলিতে, রাস্তার মোড়ে এবং লোকালয়পূর্ণ স্থানগুলোতে শীতের পিঠা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে শতাধিক পরিবার। বিশেষ করে পরিবারের নারী সদস্যরা বেশি এই পিঠা বিক্রি করছেন। কেউ একসঙ্গে ২ থেকে ৪টি চুলা বসিয়েও পিঠা বানাচ্ছেন। এসব ভ্রাম্যমান দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। কোনো কোনো দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে পিঠা কিনতে দেখা যায়। শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভা-ারিয়া বাসস্ট্যান্ড, উপজেলার পৌর শহরের সার্কিট হাউজ রোডে, ভূমেশ্বর ব্রিজ এলাকায়, ওভারব্রিজ, মঞ্জুমার্কেটে এলাকায়, লিয়াকত মার্কেট, থানা রোড মোড়, তেলিখালী বাজার, জুনিয়া বাজার, গৌরীপুর বাজারের সড়ক, ইকড়ি বাজার সড়ক,ধাওয়া বাজার সড়ক, হালদার খালী কৃষি বাজার সহ বিভিন্ন হাট-বাজারের মোড়ে মোড়ে শতাধিক ভ্রাম্যমান দোকান বসিয়ে পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কমপক্ষে দুটি চুলা থেকে শুরু করে চারটি চুলা পর্যন্ত একসঙ্গে জ্বালিয়ে পিঠা বানাচ্ছেন তারা। অনেকে ভ্যানে চুলা বানিয়ে ঘুরে ঘুরেও পিঠা তৈরি করে বিক্রি করছেন। নানা ধরনের পিঠার পাশাপাশি সবেচেয়ে বেশি দেখা যায় ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা বানাতে ও বিক্রি করতে। নারিকেল, আতব চালের গুড়া ও  খেজুরের গুড় দিয়ে বানাচ্ছেন ভাপা পিঠা। চালের গুড়া দিয়ে চিতই পিঠা বানিয়ে তার সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে শুটকি, ধনেপাতা, সরিষা, বাদাম, কালোজিরা, মরিচসহ নানা ধরনের ভর্তা। ভা-ারিয়াবাসীর কাছে এই খাবার খুবই জনপ্রিয়। কাজ ও ব্যস্ততার জন্য আগের মতো ঘরে ঘরে পিঠা তৈরি করতে দেখা না গেলেও রাস্তার পাশে বসে এই পিঠা তৈরি এখন ভা-ারিয়াবাসীর ঐতিহ্য হয়ে উঠছে। ভা-ারিয়ায় এই ঐতিহ্যবাহী পিঠা অনেককেই রাস্তার পাশে বসেই গরম গরম খাচ্ছেন। আবার অনেকেই পিঠা কিনে পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। ভ্রাম্যমান এই দোকানগুলো বিকেলে বসে। চলে রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীত মৌসুমে এক শ্রেণির মানুষ অল্প পূঁজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় পিঠা বানিয়ে তা বিক্রি করছেন। বিকেল হলেই উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক গ্যাসের বা মাটির চুলা জ্বালিয়ে তার ওপর ছোট ছোট মাটি বা লোহার কড়াই বা হাঁড়ি বসিয়ে তাতে বানাচ্ছেন পিঠা। একটু পর পর ঢাকনা তুলে কড়াইয়ের মধ্যে চালের গুড়া, পানি ও লবণ দিয়ে গোলানো অংশ দিয়ে বানানো হচ্ছে চিতই পিঠা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই হয়ে যায় পিঠা। এই গরম গরম চিতই পিঠা নামিয়ে প্লেটে নানা ধরনের ভর্তা সাজিয়ে ক্রেতাদের দেওয়া হচ্ছে। প্রতি পিস চিতই পিঠা বিক্রি হয় ৫ টাকা করে। আর ভাপা পিঠা বিক্রি হয় ১০ টাকা করে। এতে একেক জন পিঠা বিক্রেতার দিনে আয় হচ্ছে দেড় হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। ভা-ারিয়া পৌর শহরের গৃহবধূ কুলসুম বেগম বলেন, ‘কাজের ব্যস্ততায় পিঠা বানাতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে স্বামী আর সন্তানদের জন্য রাস্তার পাশ থেকেই চিতই পিঠা কিনে এনেছি। সঙ্গে সরিষা, শুটকি ও ধনিয়া পাতার ভর্তা নিয়েছি। পিঠা বিক্রেতা জাকির ও রুবেল জানান, শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রি করে তারা লাভবান হয়েছেন। অভাবের সংসারে শান্তি ফিরে এসেছে। আগের মত অভাব তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছেন না। ভা-ারিয়া উপজেলার হালদারখালী এলাকায় পিঠা বিক্রি করেন হাসিনা বেগম। তাকে সহযোগিতা করেন তার দিন মজুর স্বামী। পাশেই তাদের বাড়ি। দুই ছেলে তার। তাদের পড়াশোনা ও নিজেদের সংসারের সব খরচ জোগার হয় এই পিঠা বিক্রির টাকায়। বিকেল হলেই হালদারখালী বাজারে আলগা মাটির চুলা নিয়েই বসে পড়েন পিঠা বানাতে। ভাপা ও চিতই পিঠা বানান। পিঠা বিক্রেতা পারুল বেগম বলেন,শীত এলেই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করি। আমি একা সামাল দিতে পারি না। তাই আমার স্বামীও আমাকে সহযোগিতা করেন। তাদের প্রায় প্রতিদিন ১২শ’ টাকা আয় হয়। পিঠা বিক্রি করে সংসারে সুখ এসেছে। ভা-ারিয়া উপজেলার মঞ্জুমার্কেটের পিঠা বিক্রেতা মো: ইউনুস বলেন, ভাপা পিঠা বিক্রি করায় সংসারের অভাব চলে গেছে। বড় সন্তান সহযোগিতা করেন। পিঠা বিক্রি করে তিনি তিন সন্তানকে স্কুলে পড়াশোনা করান। পাশেই পিঠা বিক্রেতা নজরুল শিকদার বলেন, তিনি বছরের ১২ মাসই নানান পিঠা বিক্রি করছেন। তবে শীতের দিনে বেশি পিঠা বিক্রি হয়। তিনি পিঠা বিক্রি করে ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এবং তার একটি ছেলেকে স্কুলে পড়াচ্ছেন। পিঠা কিনতে আসা চাকরিজীবি নারগিস আক্তার বলেন, সারাদিন স্কুলে চাকরি করি। বাসায় এসে আর কিছু করতে ইচ্ছে করে না। পরিবারের সদস্যরা পিঠা খেতে চায়। তাই বাজার থেকে খেজুরের গুড় কিনে তা দিয়ে প্রথমে শিরা তৈরি করি। তারপর রাস্তার পাশ থেকে পিঠা কিনে এনে গরম গরম সেই শিরার মধ্যে ভিজিয়ে রাখি। সারারাত ভেজার পর সকালে নরম হয়ে যায় পিঠাগুলো। তখন সবাইকে খেতে দেই। পরিবারের লোকজন মজাদার পিঠা খেয়ে অনেক খুশি হয়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল ওহাব বলেন, শীত মৌসুম এলেই নিম্নআয়ের পরিবারের অনেক নারী-পুরুষরা রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমান চুলা বসিয়ে পিঠা বানিয়ে তা বিক্রি করে আয় করছেন। এটা খুব ভালো উদ্যোগ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT