3:55 pm , February 9, 2024

মুলাদী প্রতিবেদক ॥ মুলাদী উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর জনপদ তয়কা-টুমচরের সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণ মানুষের মাঝে নেমে আসে আতঙ্ক। ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান হাজী ও আকন পক্ষের দ্বন্দ্বে হামলা, মামলা, খুন ও বোমাবাজির ঘটনায় সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানের টুমচর গ্রামের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আতঙ্ক আরও ছড়িয়ে পড়েছে। ওই এলাকায় হাত বোমা ফাটিয়ে একাধিক বাড়ি থেকে গরু-ছাগল লুটের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুর রাজ্জাক ভুলুর সহচর ও বাটামারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নানের ছেলে ড. আসাদুজ্জামান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান বিপ্লব ঢাকা জর্জকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং খালেদুজ্জামান হিরণ এলাকায় ব্যবসা করেন। এদের মধ্যে খালেদুজ্জামান হিরণ এলাকায় ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাসী-চুরি রোধে কাজ করেন। সন্ত্রাসী, চুরি, ডাকাতি ও দুর্ণীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে খালেদুজ্জামান হিরণ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলেন। সন্ত্রাসীরা তার কয়েক লাখ টাকার গাছ কেটে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদুজ্জামান হিরণ স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় উপকমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ড. আমিনুল হক কবিরের ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় খালেদুজ্জামান হিরণকে টুমচর গ্রামের রুবেল শাহ হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। টুমচর গ্রামের ফজলে আলী জানান, ‘২০২৩ সালের ২৩ জুলাই বরিশাল পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম ও প্রফেসর ড. মো. আসাদুজ্জামানের সহযোগিতায় মুলাদী থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ মো: মাহাবুবুর রহমানের উদ্যোগে তিন জেলা পুলিশের উপস্থিতিতে বাটামারা ইউনিয়নে হাজী ও আকন পক্ষের মধ্যে শান্তি চুক্তি করেন। হাজী পক্ষের লোকজন শান্তি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে একাধিক হত্যা ও সন্ত্রাসী মামলার আসামীদের এলাকায় এনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ওই আতঙ্কের মধ্যে টুমচর গ্রামের রুবেল শাহ নিহত হন। পরে রুবেল শাহ হত্যা মামলাকে পূজি করে স্থানীয় জাগরনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার মো. শহীদুল হক ও অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম পলাশ এলাকার অনেক নিরীহ লোককে আসামী করেছেন। সাধারণ মানুষ পুলিশের ভয়ে এলাকা ছাড়লে সুবিধাবাদীরা এলাকায় চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছেন।’ ব্যবসায়ী খালেদুজ্জামান হিরণ জানান, ‘জাগরনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার মো. শহিদুল হক এক সময়ে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাটামারা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে বার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অটোপাসের আশ্বাস দিয়ে প্রধান শিক্ষক সকাল ৮টায় পরীক্ষায় শুরু করে মাত্র ৩০-৪৫ মিনিটি পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রদের মিছিলে নিয়ে যান। ওই ঘটনায় স্থির চিত্র, ভিডিও এবং শিক্ষার্থীদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হত্যা মামলায় আসামী করেন এবং গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে তার লোকজন দিয়ে ডাকাতি করে আমার ডিস সংযোগের সরঞ্জামসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নেন।’ এবিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে জানান, ‘আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে এবং পরিবারের সবাই প্রতিষ্ঠিত। বিষয়টি এলাকার একটি মহল মেনে নিতে পারছে না। তারা আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। এরই অংশ হিসেবে আমার ভাই খালেদুজ্জামান হিরণকে হত্যা মামলার আসামী করেছে এবং বাড়িতে লুট করেছে। বিষয়টি মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি উপেক্ষা করেছেন এবং ডাকাতির স্থলে একটি চুরি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের দায়িত্বহীন কাজের ফলে আমার পরিবারের সদস্য ও এলাকার সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।