4:12 pm , February 7, 2024
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ‘দলীয় প্রতীক বা সমর্থন ছাড়াই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’ সরকার দলের পক্ষ থেকে এ ঘোষণায় একের পর এক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা বাড়ছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে। শুধু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই নয়, এই নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক সংগঠনের নেতা, উন্নয়ন কর্মীরা চালাচ্ছেন জোর প্রচার প্রচারণা।
নির্বাচন কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত তফশিল ঘোষণা না হলেও আগামী ৪ মে থেকে ২৯ মে এর মধ্যে চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এ ঘোষণা সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর থেকেই সারাদেশের মতো বরিশালেও ১০ উপজেলা পরিষদকে ঘিরে চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুরাতন ও নতুন মিলিয়ে অর্ধশত প্রার্থী সরগরম করে তুলছেন নির্বাচনী এলাকা। এদের মধ্যে মহিলা প্রার্থীও রয়েছেন অসংখ্য। বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদায়ী চেয়ারম্যানরা ফের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইছেন। এই দৌঁড়ে শামিল হয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ের অন্য নেতারাও। দলীয় মনোনয়ন না থাকায় প্রার্থীরা তৃণমূলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই ব্যানার পোস্টার ঝুঁলিয়ে প্রচারণাও নিশ্চিত করেছেন অনেকে। বরিশাল সদর উপজেলায় এ নিয়ে তৎপর হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহেনা বেগম এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক বিএম কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসাইন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান মধু।
এদের মধ্যে মাহমুদুল হক খান মামুন একজন ত্যাগী এবং পরিচ্ছন্ন নেতা। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে জাতীয় সংকট মুহূর্তেও বরিশালে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন তিনি। তিনি বরাবরই আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে গিয়ে নিজেকে বঞ্চিত করেছেন অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে। তাই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বরিশালের সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে বলে ধারণা যুবলীগের এ নেতার।
এই প্রতিযোগিতায় দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু এবং চারবারের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবিও রয়েছেন। চারবার চেয়ারম্যান হয়েও মনিরুল ইসলাম ছবি তার নিজ এলাকা চরকাউয়া ইউনিয়নের বাইরে জনপ্রিয়তা কম। নিজ এলাকার সমস্যা সমাধানের কারণে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক এলাকাবাসী। ভাইস চেয়ারম্যান মধু অবশ্য খুব আশাবাদী এই নির্বাচনকে ঘীরে। তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছর আমি সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছি। বিপদে আপদে সকলের ডাকে ছুটে গেছি। সাধারণ ভোটারের দাবীর মুখেই এবার আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করবো ইনশাআল্লাহ। এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে চাঁদপুরা ইউনিয়ন থেকে সাবেক চেয়ারম্যানের একজন ভাগ্নিসহ চারজন নারী এবং বরিশাল আমজনতা পরিষদের আহ্বায়ক ল কলেঁ শিক্ষার্থী সাজেদুর রহমান শাকিল মৃধাও প্রার্থী হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় বর্তমান দুই চেয়ারম্যানসহ একাধিক প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন না থাকায় সাধারণ নেতাকর্মীদের অনেকেই প্রার্থী হবেন এটাই স্বাভাবিক। এখানে আবারও মনোনয়ন চাইছেন বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম জয়নাল আবেদীন, ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সি, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কামরুল ইসলাম দীলিপ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আকবর হোসেন ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান জিনিয়া আফরোজ হেলেনও চালাচ্ছেন জোর প্রচারণা।
আগৈলঝাড়া উপজেলাতেও একই চিত্র। বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জ্যোতিন্দ্র নাথ মিস্ত্রি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রুস্তুম সেরনিয়াবাতসহ আরো অনেকে।
এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো অংশ না নেওয়ার ঘোষণায় নির্বাচনে নিজেদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে দাবী করেন বরিশালের উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলার দুই চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ সিকদার (বাচ্চু) এবং কাজী ইমদাদুল হক দুলাল। বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এখানে শক্তিশালী অবস্থানে আছেন ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ওহাব। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে এলাকা ছাড়া হয়ে আছেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু।
বানারীপাড়ায় আবারও চেয়ারম্যান হতে চাইছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য মাওলাদ হোসেন ছানা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহমুদ হোসেন মাখন এবং সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরীফ উদ্দীন আহমেদ কিসলুও নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। মুলাদীতে বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান মিঠু ছাড়াও যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন খসরু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালেহ উদ্দিন হাওলাদার, বন্দর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান রবিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাইনুল আহসান সবুজ উপজেলা চেয়ারম্যান হতে জনসংযোগ শুরু করেছেন।
বরিশাল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান মুন্সি জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও অনেকটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই। তবে এক্ষেত্রে সিটি ও পৌরসভার ভোটাররা ভোট দিবেন না। ইউনিয়ন পরিষদের সবাই এই নির্বাচনে ভোট দেবেন এবং নির্বাচন শতভাগ স্বচ্ছ হবে।