ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটার অপারেটর নবীন ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটার অপারেটর নবীন - ajkerparibartan.com
ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটার অপারেটর নবীন

3:51 pm , February 6, 2024

দুই যুগ ধরে একই কর্মস্থলে

ঝালকাঠি প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর মো. নূর নবীন হাওলাদার ওরফে নবীন প্রেষণেসহ দুই যুগ ধরে কর্মরত এখানে। বরগুনা জেলায় তার কর্মস্থল হলেও তিনি রহস্যজনক কারণে বেছে নিয়েছেন ঝালকাঠিকে। অভিযোগ রয়েছে, সওজ বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে সখ্যতার সুযোগে তিনি এখানে প্রভাব বিস্তার করে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। মাস্টার রোলে যোগদান করে নূর নবীন ঝালকাঠিতে প্রায় ২৫ বছর ধরে চাকরি করছেন। দীর্ঘ সময় এখানে থাকার সুযোগে গড়ে তুলেছেন ভাগ বাটোয়ারা সিন্ডিকেট। ঠিকাদারদের অভিযোগ কম্পিউটার অপারেটর পদের দায়িত্ব ধরে রেখে বছরের পর বছর অনিয়ম করার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, প্রেষণে থাকা এই কর্মচারী বিশেষ ২/৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পেতে সহায়তা করছে। তাদের আইডি পাসওয়ার্ড নবিনের কাছেই সংরক্ষণ করা আছে। এরকম ১টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নওগাঁ জেলার মেসার্স আমিনুল ইসলাম। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এই লাইসেন্সের কাজ করছেন স্থানীয় ঠিকাদার জয়ন্ত সাহা ও দিপক কুমার। ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের পুরাতন লাইসেন্সের মধ্যে মেসার্স মামুন এন্টার প্রাইজের ঠিকাদার মামুন ও এমএস হাবিব সন্সের ঠিকাদার মো. শাহীন খান। ইজিপি পদ্ধতিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবার পর তারা কোন কাজ পায়নি। কারণ এই পদ্ধতির লাইসেন্স পয়েন্টিংয়ে তাদের কাজ করার সুযোগ নেই। শুধু তারাই নয় পয়েন্টিং পদ্ধতিতে স্থানীয় আরো এক বড় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্সও বঞ্চিত। এ পদ্ধতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের আইডির মাধ্যমে ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে দরপত্রে অংশ নেন। পুরো প্রক্রিয়াটি কম্পিউটারে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই নবীন এ দায়িত্বে থাকায় খুব সহজেই তিনি তার নিয়ন্ত্রণে রেখে অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানান, নবীন হাওলাদারের নিয়ন্ত্রণে ঝালকাঠি সড়ক ভবন। তিনি কাজ পেয়ে দেবার শর্তে ঠিকাদার জয়ন্ত সাহা, দিপক এবং ফারুকের সাথে সিন্ডিকেট করে লুটপাট করছে। এই তিন ঠিকাদারকে কোন লাইসেন্সের বিপরীতে কাজ পাইয়ে দেবে সেই ঠিকাদারদের সাথে নবীন যোগাযোগ করিয়ে দেয়। যাদের মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি লাইন্সের পয়েন্ট বেশি। এরপর টেন্ডারে জয়ন্ত সাহাকে সর্বনি¤œ দর জানিয়ে দিয়ে অপর দুটি লাইসেন্সকে অংশগ্রহণকারী দেখায়। এভাবেই ঝালকাঠি সড়ক ভবনে বছরের পর বছর ধরে প্রেষণে থাকা এই কর্মচারী নবীন হাওলাদার দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩ সালে মাস্টার রোলে কম্পিউটার অপারেটর পদে সড়ক ও জনপথ বিভাগে কাজে যোগ দেন মো. নূর নবীন হাওলাদার। সে বরিশাল সদর উপজেলার সারুখালী গ্রামের মো. মোশারেফ  হোসেন হাওলাদারের পুত্র। মাস্টার রোল থেকে ২০১৮-তে তার চাকরি জাতীয়করণ হওয়ার পর ঝালকাঠি থেকে তাকে বরগুনায়  পোষ্টিং দেয়া হয়। সেখানে তিনি যোগদান করে এক সপ্তাহর মধ্যে তদ্বির করে ঝালকাঠিতেই ডেপুটেশনে আসতে সক্ষম হন। অদ্যাবধি তিনি এখানে কর্মরত।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের কর্মচারী নূর নবীন এখানে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করার সুবাধে আইসিটির ফাঁকফোকর ভালো ভাবেই আয়ত্তে নেন তিনি। কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি তৈরী করার পর যাচাই করে সঠিক হলে লাইভে/অনলাইনে নির্বাহী প্রকৌশলীর আইডি থেকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যাতে ঠিকাদাররা অন লাইনে ঢুকে দেখতে পারেন এবং দরপত্রে অংশ নিতে পারেন।
জানা যায়, নওগাঁর ঠিকাদার আমিনুল ইসলামের একার লাইসেন্সে দরপত্র ড্রপিং দেখানোর সময় ঢাকার ঠিকাদার আবিদ মনসুর, চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স ও খুলনার ঠিকাদার মো. মোজাহারকে দরপত্রে অংশগ্রহণ দেখানো হয়। এরমধ্যে নওগাঁর ঠিকাদার আমিনুল ইসলাম গত ৫ বছরে ঝালকাঠি সড়ক বিভাগে সর্বোচ্চ কাজ পেয়েছেন। ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাপ্তরিক নথিপত্রে এর প্রমাণ আছে। সড়ক বিভাগের কাজ বঞ্চিত একাধিক ঠিকাদার জানায়,  উল্লেখিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের রেট কোড কম্পিউটারে চূড়ান্ত করে নবীন ফায়দা নিয়ে থাকেন।
অভিযোগের ব্যাপারে কম্পিউটার অপারেটর মো. নূর নবীন হাওলাদার জানান, জনবল সংকট থাকায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে ঝালকাঠিতে ডেপুটেশনে দিয়েছেন। তারা ডেপুটেশন বাতিল না করলে আমার কি করার আছে। টেন্ডারের বিষয়গুলো এখন আর আমাদের হাতে কাগজে কলমে কিছু  নেই। আমিনুল হক একজন দক্ষ অভিজ্ঞ ঠিকাদার। তিনি সঠিকভাবে  টেন্ডার সাবমিট করেন। তার লাইসেন্স ও রেট কোড সময়োপযোগী হওয়ায় সার্ভারে তিনিই কাজ পাবার  যোগ্যতা রাখেন বিধায় কাজ পেয়ে থাকেন। এসব বিষয়ে আমার হাতে কিছুই নেই।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান এ বিষয়ে জানান, গত পাঁচ অর্থ বছরে ঝালকাঠিতে দুটি প্রকল্পে ৫টি প্যাকেজে কাজ হয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো ‘ঝালকাঠি হয়ে রাজাপুর-মীরেরহাট-আওরাবুনিয়া-সেন্টারেরহাট-কাঠালিয়া ও আমুয়া হয়ে বামনা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং অন্যটি ঝালকাঠি হয়ে রাজাপুর-ভান্ডারিয়া-কাঠালিয়াআঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প।
নির্বাহী প্রকৌশলীর দাপ্তরিক গোপনীয় আইডি পাসওয়ার্ড অফিসের অন্য কারো জানা কিংবা সংরক্ষণ করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অফিসের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
তবে তিনি বলেন, বিগত দিনের কর্মকর্তাদের কর্মকান্ড আমার জানার কথা না। সুতরাং ঐ বিষয় আমি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে পারবো না।”

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT