কুকুর জবাইয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ নগরীর বিরিয়ানি বিক্রেতারা কুকুর জবাইয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ নগরীর বিরিয়ানি বিক্রেতারা - ajkerparibartan.com
কুকুর জবাইয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ নগরীর বিরিয়ানি বিক্রেতারা

4:09 pm , February 5, 2024

জুবায়ের হোসেন ॥ মানসিক বিকৃতির কারণে অথবা বিক্রি করার জন্যই হোক নগরীর বটতলা বাজারে মাংসের দোকানের কর্মচারীর কুকুর জবাই দেয়ার ঘটনায় প্রভাব পড়েছে নগরীর বাসিন্দাদের মনে। কেন কি কারনে বটতলা বাজারে মাংসের দোকানে অস্থায়ী কর্মচারী রায়হান মোল্লা এমন নিকৃষ্টকর্ম ঘটিয়েছে তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। রোববার দুপুরে এই ঘটনা ঘটলেও দোষী রায়হান এখনো পলাতক রয়েছে। তবে ধারণা করা হয়েছে হয়তো মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যেই সে কুকুরটিকে জবাই করেছিল। এই ধারণা থেকেই এখন খবরটি সারা বাংলাদেশের ছড়িয়েছে। এই খবরের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে নগরীর খাবার হোটেল ও পথ খাবারের দোকানে।
সোমবার নগরীর মাংস বিক্রেতা থেকে শুরু করে ছোট ও মাঝারি আকারের রেস্তোরাঁ গুলোতে এই প্রভাব স্পষ্ট লক্ষ্য করা গেছে। তবে সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় গরু-ছাগলের মাংসের দোকানের পরিস্থিতি বোঝা যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে গরু ও ছাগলের মাংস বিক্রির বাজারেও প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিক্রেতারা। বিভিন্ন শ্রেণীর ক্রেতাদের সাথে আলাপ করে এই শংকা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে দেখা গেছে নগরী বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা নামি বেনামী ছোট ও মাঝারি আকারের রেস্তোরাঁ গুলোতে। দুটি বিশেষ খাবার বেচা বিক্রিতে প্রভাব পড়েছে এই রেস্তোরাঁ গুলোয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় কমপক্ষে দশটি রেস্তোরাঁয় গতকাল খিচুড়ি ও বিরানি বিক্রি একেবারেই নেই বললেই দেখা গেছে। এ সকল রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বটতলা বাজারে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রকৃত দোষীকে যেহেতু এখন পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি, তাই সে কি কারনে কুকুরটি জবাই করেছিল তা এখনো অস্পষ্ট। তবে বিষয়টি নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বেশ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ২০০ রেস্তোরাঁ রয়েছে, যারা কেউ কেউ শুধুমাত্র বিরানি এবং খিচুড়ি ও অন্যান্যরা এর সাথে বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি করে থাকে। এ সকল রেস্তোরায় কাচ্চি বিরিয়ানি,চিকেন বিরানি, তেহারি, বিফ খিচুড়ি, খাসির খিচুড়ির বেশ ভালো বেচাকেনা ছিল গতকালের আগ পর্যন্ত। নগরবাসীর কাছে এ সকল খাবারের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বগুড়া রোডের নাজেমস বিরিয়ানি, ফল পট্টি এলাকার আকাশ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, চকবাজার এলাকার ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, লঞ্চঘাট এলাকার চট্টগ্রাম হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, রুপাতলী এলাকার হুমাহুম ও খাবার বাড়ি হোটেল এন্ড রেস্তোরা। এছাড়াও নগরীর নতুন বাজার, খেয়াঘাট, আমতলার মোড়, বিএম কলেজ রোড সহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য ছোট ও মাঝারি আকারের রেস্তোরাঁ। সোমবার দিনভর কম সংখ্যক ক্রেতাদের কাছে সারাদিনে বিরিয়ানি ও অন্যান্য খাবার বিক্রি করেছে। তবে প্রকৃত খাসি ও গরুর মাংসের তৈরি খাবার নিয়ে তা বিক্রি করতে পারেনি ছোট ও মাঝারি আকারের রেস্তোরাঁ গুলো। প্রতিদিন যে পরিমাণ পার্সেল বিক্রি করে থাকে তার দশ ভাগের এক ভাগ বিক্রিও হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষায়, বরিশালের প্রেক্ষাপটে রেস্তোরাঁ মালিকদের নৈতিকতা এখনো এতটা নি¤œ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়নি যে সাধারণ মানুষকে খাসি বলে কুকুরের মাংস খাওয়াবে। আর এখন পর্যন্ত মানসিক বিকারগ্রস্ত ঐ ব্যক্তি কি কারনে কুকুরটি জবাই করেছিল তা স্পষ্ট হয়নি। তবে এমন খবর ছড়ালে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে লোভনীয় এ সকল খাবারের উপর থেকে আগ্রহ কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন তারা। এখানে ক্রেতাদের কোন দোষ নেই। প্রতিদিন যেখানে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ প্যাকেট কাচ্চি, একই পরিমান বিফ তেহারি ও খিচুরি বিক্রি হতো সেখানে গতকাল সোমবার মাত্র ৩০-৪০ প্যাকেট চিকেন বিরিয়ানি বিক্রি করেছেন বলে হতাশা প্রকাশ করেন নতুন বাজার এলাকার বিরানির দোকানীরা। এমন পরিস্থিতি বেশিদিন থাকলে নগরীর সুপরিচিত ও খ্যাতিসম্পন্ন রেস্তোরাঁ গুলো টিকলেও বন্ধ হয়ে যাবে অসংখ্য ছোট ও মাঝারি আকারের রেস্তোরাঁ । তারা দাবি জানিয়েছেন, অতি শীঘ্রই অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে জনসম্মুখে সত্যটা তুলে ধরার। কারণ বিষয়টি নিয়ে নগরীর বাসিন্দারা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। তদন্তে যদি বিষয়টি সত্যতা প্রমাণ হয়, তবে কোন কোন রেস্তোরা ও ছোট বড় খাবারের দোকান এমন কাজের সাথে জড়িত তা খতিয়ে বের করে আইনের আওতায় আনার আবেদন করেন তারা। আর এটি যদি একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির নিছক পাগলামি হয়, তবে তাও জনসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়োজন। তা না হলে বরিশালের সকল খাবার বিক্রেতারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে প্রতিদিন দুপুরে বিভিন্ন রেস্তোরায় নিয়মিত মধ্যাহ্নভোজ করা ব্যাংক কর্মকর্তা জাহিদ হাসানের সাথে আলাপকালে বলেন, ঘটনাটি শুধু তিনিই নয়, এখন সারা বাংলাদেশের মানুষই জানে। কাজের খাতিরে প্রতিদিন দুপুরের খাবারটি তিনি বেশিরভাগ সময়ই কাচ্চি বিরিয়ানি দিয়ে সারতেন। ছেলেবেলা থেকে লোভনীয় এই খাবারটি প্রায় সময় খাওয়া হতো। তবে রোববারের ঘটনাটি শোনার পর ইচ্ছে করলেও খাচ্ছেন না। প্রতিদিন নগরীর নামিদামি হোটেল থেকে বিরানি আনিয়ে খাওয়াটা সম্ভব নয়। তাই তার ব্যাংক সংলগ্ন নতুন বাজার এলাকার বিভিন্ন দোকানের বিরানি খেতেন। তবে এখন তা গলা দিয়ে নামবে না বলে জানান জাহিদ। পুরো নগরীর মানুষ বিষয়টি এখন স্পষ্ট না হওয়ায় আপাতত হলেও যে কোন রেস্তোরাই মাংস খাওয়া বন্ধ রাখবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অতি দ্রুত প্রকৃত দোষীকে ধরে বিষয়টি সাধারণের কাছে পরিষ্কার করা দরকার বলে মন্তব্য করেন এই ব্যক্তি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT