3:45 pm , February 4, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বর্তমান বাজারে মাছ মাংস তো দূরের কথা সবজি দিয়ে দুইবেলা আহার করাও এখন কষ্টসাধ্য বিষয়ে পরিনত হয়েছে মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষের। বিগত কয়েক মাসে সারাদেশের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি এতটাই অসহনীয় হয়ে পড়েছিল যে আলু ভর্তা দিয়ে খাবার খেতেও ভাবতে হয়েছে। মাছ মাংসের দাম কমার আশা ছেড়ে দেওয়া ক্রেতারা শীতের সবজিও পাতে তুলতে পারেনি নিয়মিত। তবে সর্বশেষ ভারত থেকে আলু আমদানীর খবরে নিয়ন্ত্রনে আসতে শুরু করেছে অতি প্রয়োজনীয় সারাবছরের সবজি আলুর বাজারে। আলুর মূল্য যদি নিয়ন্ত্রনে থাকে তা অনেক বড় উপকার সাধারন ক্রেতাদের জন্য। দেশের উৎপাদিত নতুন আলুর দামও ভারত থেকে আমদানির খবরের দাপটেই কমছে বলে জানিয়েছে বরিশালের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। ভারতের আমদানিকৃত আলু এখনও বরিশালের বাজারে না আসলেও গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৭/৮ টাকা কমেছে পাইকারী বাজারে। খুচরা বাজারে যে আলু গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তা গত রোববার ৩ কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এতে করে সাধারন ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে বলে খোদ ক্রেতারাই জানিয়েছেন।
রোববার নগরীর পেঁয়াজপট্টির বরিশাল বাংলা আড়তের একজন প্রতিনিধি পরিবর্তনকে জানান, বিগত কয়েক মাস থেকেই অন্যান্য পণ্যের ন্যায় একবারেই নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছিল অতি প্রয়োজনীয় মুদি পণ্য আলু। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে নতুন আলুর কেজি পাইকারী বাজারে বিক্রি করতে হয়েছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা যার খুচরা মূল্য ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতাদের নাজেহাল করা আলুর এমন বাজার একটানা মাস খানেক চলেছে। এর পর কিছুটা দাম কমলেও তা খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ টাকার নিচে নামতে দেখা যায়নি। এরপর দেশের উৎপাদিত আলুর যোগান বাজারে এলে ১৫/২০ দিন আগে এই দর পাইকারীতে ৩২ থেকে ৩৩ টাকায় আসে এবং খুচরা বাজারে চলে আসে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। দেশের বগুড়া ও জয়পুরহাটের আলু গত সপ্তাহে প্রতি কেজি সর্বশেষ ৩২/৩৩ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান ওই আড়ৎদার। তবে ভারত থেকে আলু আমদানির পূর্বাভাসে ক্রমেই এই দাম কমতে শুরু করেছে গত কয়েকদিন থেকে। গত সপ্তাহের ৩২/৩৩ টাকা পাইকারী দরের আলুর পাইকারী দর রোববার এসে দাঁড়িয়েছে ২৫/২৬ টাকায়। এই আলু খুচরা বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ৭/৮ টাকা মুনাফায় খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারবে বলে জানিয়েছেন ওই আড়ৎদার। এতে সর্বোচ্চ দাম হবে খুচরা ৩২/৩৩ টাকা। এর চাইতে বেশি দাম রাখা হলে তা সাধারন ক্রেতাদের প্রতি খুচরা বিক্রেতাদের জুলুম করা হবে বলে জানান। ৬০ কেজির প্রতিবস্তা আলুতে বর্তমানে ৪/৫ কেজি ছোট আলু দিয়ে খুচরা বিক্রেতারা যদি ৭/৮ টাকা সব খরচ মিলিয়ে লাভ করে তাতেও সাধারন ক্রেতারা ভারসাম্যপূর্ণ দরেই কিনতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, শনিবার থেকে হিলি ও সোনা মসজিদ সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতীয় কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৫৫০ মে. টন আলু বাংলাদেশের বাজারে এসেছে। এ সকল আলু এখনো বরিশাল এসে না পৌঁছালেও এর প্রভাবেই দাম কমে গেছে সব ধরণের আলুর। তিনি আরো জানান, কৃষকের কাছ থেকে পাইকাররা আলু কেনে খুব স্বল্প মূল্যে। তারা যদি সরাসরি পাইকারদের কাছে ওই মূল্যেই বিক্রি করতো, তবে আলুর বাজার এত অস্থিতিশীল হত না। এর মধ্যে এক ধরনের মজুদদার রয়েছে, যারা আলু কিনে হিমাগারে সংগ্রহ করে রাখেন এবং তৈরি করেন কৃত্রিম সংকট। এভাবেই মূল্য বাড়ে অতিপ্রয়োজনীয় এই সবজির। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে একেবারেই নতুন আলু যা চাইলেও বেশি দিন মজুদ রাখা সম্ভব না। এই আলু বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে পরিপক্ক হবে যা চাইলে হিমাগারে দীর্ঘদিন সংরক্ষন করা সম্ভব। নতুন আলু বাজারে থাকায় সাথে ভারত থেকে আলু আমদানি করায় বর্তমানে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রনে এসেছে।
খুচরা ব্যবসায়ী কবির জানান, গতকাল থেকে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রনে এসেছে। এ বছরের নতুন আলু দাম বেশি থাকায় তাদের ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। কিন্তু গতকাল রোববার এই আলুর দাম ছিল ৩৫ টাকা। এতে ক্রেতারা বেজায় খুশি।
আলু নিতে আশা ক্রেতা মারুফ খান জানান, দীর্ঘদিন পরে অতিপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম কমায় বেশ আনন্দিত তিনি। ৩ কেজি আলু তিনি ১০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। এই আলুই সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত কিনতে হয়েছে। শুধুমাত্র দাম কমলেই হবে না, এই দাম পুনরায় না বাড়ে সে দিকে সংশ্লিষ্টদের লক্ষ্য রাখার আহবান জানিয়েছেন এই ক্রেতা।