4:14 pm , February 3, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঘরে উপার্জন করার কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়ে দ্বারে দ্বারে বিভিন্ন ফাই-ফরমাশ খেটে নিজের পেটে দু,বেলা খাবারের ব্যবস্থা করছেন ৭০ বছর বয়সের এক মা ফিরোজা বেগম। অথচ তরতাজা যুবক দুই সন্তানের জননী তিনি। দুই সন্তানই তার নিখোঁজ গত একযুগ ধরে। ছেলেরা বেঁচে আছে না মরে গেছে কিছুই জানা নেই তার। প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত কাটে তার সন্তানের অপেক্ষায়। এই বুঝি মা বলে দরজার কড়া নাড়বে ছেলেরা, এই বুঝি একব্যাগ বাজার নিয়ে ঘরে ঢুকে মাকে জড়িয়ে ধরবে তার ছেলেরা। ডাকবে – মা মা বলে। ২০১২ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রাম থেকে বড়ো ছেলে ফিরোজ খান কালু এবং ঢাকার মিরপুর থেকে ছোট ছেলে মিরাজ খান নিখোঁজ হয়। তারা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে কিছুই জানা হয়নি আজ পর্যন্ত। কারো প্রতি কোনো দোষারোপ নয়, আমি শুধু আমার সন্তানদের ফিরে চাই, তাদের সন্ধান চাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা ফিরোজা বেগম। তিনি বলেন, গত একযুগ ধরে কি কষ্টের জীবন আমাদের, কতটা দয়া-দক্ষিণা নির্ভর, প্রধানমন্ত্রী যদি তা দেখতেন। আমার সন্তানের সন্ধান দিন এই একটি আকুতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা বরিশালের অসহায় এই মা ফিরোজা বেগমের।
তার বড় ছেলে কালু যখন নিখোঁজ হয়, তখন কালুর ছেলের বয়স মাত্র দেড় বছর। সেই ছেলে আব্দুল্লাহ জিসান আজ ১৪ বছরে পা রেখেছে। মঠবাড়িয়ার একটি মাদ্রাসায় দশম শ্রেণির ছাত্র সে। জিসান জানেনা তার বাবার মুখটি কেমন। ১৩টি বছর ধরে বাবাকে ডাকার সুযোগ হয়নি তার। আর জিসানের মা আমেনা আক্তার বৃষ্টি বিয়ের পর মাত্র দুবছর স্বামীকে কাছে পেয়েছেন। এরপর স্বামী ফিরে আসার অপেক্ষায় মানবিক জীবনযাপন এই পরিবারের সবার। বরিশালে স্বামীর ঘরে একবেলা খাবার জোটে তো দুবেলা উপোস দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে জিসানের মা আমেনা। মাঝে মধ্যে ছুটে আসেন শ্বাশুড়ির কাছে। বরিশালের কলেজ রো এলাকার একটি কলোনীতে বসবাস মা ফিরোজা বেগমসহ এই পরিবারের। স্থানীয় বাসিন্দা ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মী আজিজ শাহিন মানবিকতার হাত বাড়িয়ে তাদের পরিবারের দেখভাল করেন জানিয়ে কালুর মা ফিরোজা বেগম বলেন, আজিজ শাহিন এর চেষ্টা আর আল্লাহর দয়ায় বেঁচে আছি আমরা। কিন্তু আজিজ শাহিন একা কতটা করবেন, তারওতো সীমাবদ্ধতা আছে। স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত বড় ছেলে কালুর বউটা নিজ বাপেরবাড়ি চলে গেছে। বউটার জন্য কষ্ট হয় ভীষণ দাবী করে মা ফিরোজা বলেন, আমার সন্তানরা বিএনপির রাজনীতি করার কারণেই তাদের এভাবে নিখোঁজ হতে হয়েছে। তাই আমাদের দেখাশুনার দায়িত্ব বিএনপি নেতৃবৃন্দের উপরই বর্তায়। তবে উৎসব পার্বণে তারেক রহমান আমাদের খোঁজ নিলেও স্থানীয় বিএনপি সে অর্থে কোনো দায়িত্ব পালন করেনি বলে অভিযোগ এই মায়ের। তিনি বলেন, যতটুকু শুনেছি বা জেনেছি তারেক রহমান লন্ডন থেকে আমাদের জন্য উপহার সামগ্রী পাঠান, আর সেটা পৌঁছে দিতেই বিএনপি নেতারা উৎসব পার্বণে আমাকে ডাকেন। এছাড়া কখনো তারা কেউ খোঁজ করেননা। দুএকজন ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নেন, বিএনপির হয়ে আসেন না তারা।
মা অভিযোগ তুলে বলেন, কালুর অনেক ছোট মিরাজ। ঢাকার মিরপুর থেকে মিরাজ নিখোঁজ হয়েছে। আমি সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, আমার সন্তানের খোঁজ দিন। আমাদের বাঁচতে দিন।
আর কালুর সহধর্মিণী আমেনা আক্তার বৃষ্টি বলেন, আমি ও আমার সন্তান কি দোষ করেছি? আমরা কেন বঞ্চিত হলাম স্বামী সংসার থেকে। আল্লাহ এর বিচার করবেন নিশ্চয়ই।