3:45 pm , January 30, 2024
স্বরূপকাঠি প্রতিবেদক ॥ স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের চেযারম্যান মিঠুন হালদার ও তার দলবলের মারধরে সাবেক চেযারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখর কুমার সিকদার (৬০) নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় কুড়িয়ানা বাজারে ওই ঘটনা ঘটেছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে কুড়িয়ানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়ানুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানাগেছে। এ সময় মিঠুন বাহিনীর অক্রমনে সজল সিকদার, শংকর সিকদার, সজীব ঢালী, রাজিব, জয় হালদার, আকাশ, সংগ্রাম ও বিজয় হালদার নামের আরো ৮ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে সজল সিকদারকে বরিশাল শেবাচিমে পাঠানো হয়েছে। কুড়িয়ানা বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার নেছারাবাদ সার্কেল সাবিহা মেহেবুবা, ওসি মো. গোলাম সরওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বাধীন হালদার (৩৫) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা ঘটনার পর তেকে আত্বগোপনে রয়েছে। শেখর সিকদারকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত সজল সিকদার জনায়, ঘটনার ১০ মিনিট আগে সাবেক চেযারম্যান শেখর কুমার সিকদার তার দোকানে আসেন এবং তাকে কুড়িয়ানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়ানুষ্ঠান দেখতে যাওয়ার জন্য বলেন। এসময় চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার দলবল নিয়ে তার দোকানের সামনে এসে শেখর সিকদারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবী করেন। এসময় শেখর সিকদারের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এই সময় মিঠুন হালদারের সাথে থাকা পঙ্কজ বড়াল, শংকর বড়াল, বুলুমন্ডল, মো. বাকীর সাবেক চেয়ারম্যান শেখর সিকদারকে মারতে থাকে। তারা তাকে মারধর করতে করতে পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়। তাদের বাধা দিতে গেলে আমাকেও বেদম মারপিট করে। সরেজমিনে কুড়িয়ানা বাজারের গেলে স্থানীয় যুবক সংগ্রাম বিশ^াস জানান, সাবেক চেয়ারম্যান শেখর সিকদারকে সজলের দোকানের সামনে বসে চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার ও তার লোকজন মারতে মারতে পশ্চিম দিকের নিয়ে যায়। এসময় মনী বড়াল, মো. বাকীর, শান্তি বড়াল, মাডাই, বুলু মন্ডলসহ ১৫-২০ জন মিলে তাকে মারধর করে। পুলিশ হামলাকারীদের বাধা না দিয়ে উল্টো শেখর চেয়ারম্যানের ভাই ও আহত লোকদের ক্যাম্পে নিয়ে আটক করে রাখে।
ঘটনাস্থলের পার্শবর্তি বাড়ীর গৃহবধু বিনা হালদার জানান, মাছ কেনার জন্য বাজারে এসে ডাক চিৎকার শুনতে পাই। এসময় দেখি শেখর দাকে মারতে মারতে পশ্চিম দিকে নিয়ে আসে মিঠুন হালদার সহ অন্যরা। আমি তাকে রক্ষা করার জন্য হাত দিয়ে বেড়া দিয়ে একটি দোকানের সামনে নিয়ে আসি। এসময় বাকীর একটি লাটি দিয়ে মাথার পেছলে বাড়ী মারে। এতে শেখর দা লুটিয়ে পড়েন। এসময় লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্বরূপকাঠি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, সাবেক চেযারম্যান শেখর সিকদারকে কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে আমরা পরীক্ষা করে মৃত পাই। অতপর আরও নিশ্চিত হতে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেলে নেয়া হলে সেখানেও একই কথা তথা তাকে মৃত বলে ঘোষনা করা হয়।
শেখর কুমার সিকদারের ছোট ভাই শংকর কুমার সিকদার অভিযোগ করে বলেন, কুড়িয়ানার একটি প্রাইমারি স্কুলে ক্রীড়ানুষ্ঠানের দাওয়াত কার্ডে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারের নাম কার্ডের উপরে লেখা হয়নি। একারনে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সহ তার বাহীনি কুড়িয়ানা বাজারে বসে তার ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারকে মুঠোফোনে বার বার ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। তিনি মোবাইল বন্ধ করে আতœগোপনে চলে গেছেন। নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনার পরপরই তিনি কুড়িয়ানায় পৌছেছেন। সব কিছু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান। পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান বলেন, এখানে একটি স্কুলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন। পিরোজপুর বসে এমন খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে এসেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবির একটি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। ক্যাম্পের পুলিশের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।