বিআরটিএ: প্রশাসনিক জটিলতায় অস্থির মানুষ বিআরটিএ: প্রশাসনিক জটিলতায় অস্থির মানুষ - ajkerparibartan.com
বিআরটিএ: প্রশাসনিক জটিলতায় অস্থির মানুষ

3:29 pm , January 28, 2024

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক জটিলতাই মানুষকে অসৎ হতে বাধ্য করছে বলে দাবী সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ হবার শ্লোগান তুললেও আজ পর্যন্ত পুরোপুরি ডিজিটাল হতে পারেনি বিআরটিএ। এখানে এখনো লাইসেন্স জটিলতায় আটকে আছে লাখো চালকের ভবিষ্যৎ। নবায়ন ফি জমা দেওয়া রশিদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বারবার আপডেট করতেও টাকা গুনতে হয় গ্রাহককে। তারপরও কবে লাইসেন্স পাওয়া যাবে সে নিশ্চয়তা নেই। জানতে চাইলে প্রশাসনের লোকেরা বলেন, ম্যাসেজ যাবে আপনার সেলফোনে। এটুকুই ডিজিটাল সেবা তাদের। সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে ২৮ জানুয়ারী রবিবার সকালে মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে। হাজারো মানুষের ভিড় বিআরটিএ এর ভিতর ও বাইরে।  বাহিরে ষ্ট্যাম্প, বিআরটিএ রেজিষ্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরম বিক্রি করেন একদল লোক। এদের কেউ কেউ গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সবকিছু লিখে ও গুছিয়ে দিয়ে ১০০ টাকা পান। এদের প্রতি খুশি গ্রাহকরাও। তারপরও ভোগান্তি তাদের পিছু ছাড়েনা বলে জানান রংপুর থেকে লাইসেন্স রশিদ  আপডেট করতে আসা হালকা যানবাহন চালক জাহাঙ্গীর।  তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি  করেন। ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ থেকে ইস্যু করা ২০১১ সালের ড্রাইভিং লাইসেন্স ২০২১ সালের জুনে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। ২০২৩ এর জানুয়ারীতে তিনি টাকা জমা দিয়ে এখনো লাইসেন্স পাননি বলে জানান।
জাহাঙ্গীর ঐ সময় তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি একবছর জরিমানাসহ রংপুর বিআরটিএ‘র লোকেরা বলে দিয়েছিল ২৬শ থেকে তিন হাজার টাকা হতে পারে।
জাহাঙ্গীর বলেন, আমি ৪ হাজার টাকা ও আমার আসা-যাওয়া খরচ সাথে এনেছি। একঘন্টার বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে কাগজ জমা দিতেই সবকিছু দেখে ব্যাংকের কর্মকর্তা বললেন, ১১৩ নম্বর কক্ষ থেকে টাকার অংক লিখিয়ে আনুন।
বিআরটিএ এর ১১৩ নম্বর কক্ষেও উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে লিখিয়ে আনতে আরো একঘন্টা । ৫ হাজার ১৮৮ টাকা দিতে হবে এখন। ১১৩ নং কক্ষে যারা আছেন, তাদের কাছে নবায়ন ফি কত জানতে চাইলে ক্ষেপে যান ও বলেন যানতো, বিরক্ত করবেন না। টাকা জমা দিয়ে আইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি এখানে রেখে যাবেন। এরপর জাহাঙ্গীর বলেন, একবছর পার হয়ে গেছে দুইবার রশিদ আপডেট হয়েছে। প্রতিবার ১৮৬ টাকা ফি দিচ্ছি আপডেট করতে এসে। আজও আবার আপডেট ফি জমা দিচ্ছি ১৯৬ টাকা।
এটা দেখে ব্যাংকের সামনে ৩ নম্বর লাইনে দাঁড়ানো একজন লাইন থেকে বেরিয়ে এসে জাহাঙ্গীর এর হাতের রশিদটি পরীক্ষা করলেন ও বললেন,  এই টাকা কেন নিয়েছে।  প্রতিবারই রশিদ আপডেট করতে আপনি টাকা দিচ্ছেন।  মাপ চাই বাবা!  ২৬শ  টাকা নবায়ন ফি, সাথে একবছরে জরিমানা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হতে পারে। ২ হাজার টাকা জরিমানা ট্রাফিক সার্জেন্টকে দিয়ে গাড়ি চালাবো সেটাই ভালো। এরা আমাদের সৎ থাকতে দেবেনা। বলে হনহনিয়ে চলে গেল লোকটি। তার পিছনে ছুটে জানতে পারলাম বরিশালের বাকেরগঞ্জের বাসিন্দা তিনি। লাইসেন্স নবায়ন করতে এসে এই অবস্থা দেখে প্রচ- বিরক্ত হয়েছেন। প্রতি তিনমাস পর এসে আপডেট করার ক্ষমতা তার নেই।  লাইসেন্স নবায়ন খরচ কেন নতুন লাইসেন্স এর বেশি হবে? প্রশ্ন তুলে চলে যান তিনি। প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ রেজিষ্ট্রেশন, নম্বর প্লেট পরিবর্তন, নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে মিরপুর বিআরটিএ তে ভিড় করেন। এদের বেশিরভাগ আসেন সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলার ইচ্ছে নিয়ে।  তারপর প্রশাসনিক এই হয়রানির শিকার হয়ে বিরক্ত হন এবং বেছে নেন আইন অমান্য করার পথ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT