4:07 pm , January 21, 2024
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিভাগ হওয়ার ৩১ বছর পরেও শ্রম ও পরিবেশ আদালত, আঞ্চলিক পোস্ট অফিস, বিসিক, আয়কব ও ভূমিসহ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো খুলনায় ছুটোছুটি করতে হয় বরিশালবাসীকে। বিভাগীয় শহর হওয়ার ২৪ বছর হলেও এখনো কাটেনি বরিশালের পরনির্ভরতা। আর এ জন্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবহেলাকে দায়ী করছেন বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তবে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি মেয়রের।
বরিশাল বিভাগীয় পোস্ট অফিসের পরিদর্শক শিমুল চন্দ্র দে জানালেন, গত বছর জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন হায়দার এর সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখির কারণে পোস্ট অফিসের আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জেলা পোস্ট অফিসের ভবনসহ বেশকিছু কাজ হলেও লোকবল সংকটে তা পুনরায় আটকে আছে। আর বরিশাল বিসিকের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেআইবি ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক ইব্রাহিম খান বলেন, আমাদের বিসিকেরও সব কাজকর্ম এখনো খুলনা নির্ভর। এই নির্ভরতার কারণে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ৩১ বছর ধরে খুলনা নির্ভর বরিশালের সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান দাবী করে বরিশালের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল, অধ্যাপক তপংকর চক্রবর্তী ও শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ফরিদুল আলম জাহাঙ্গীর তালুকদার বলেন, পায়রা ও পদ্মা সেতু চালু হবার পর বরিশালের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা পুরোটাই আটকে আছে এই আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপর। ইতিমধ্যেই খুলনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে বেকুটিয়া সেতু তৈরীতে। এ সময় ভোলার থেকে পাইপলাইনে গ্যাসের সুবিধা পেলে এখানে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর আগেই খুলনা নির্ভর প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলোকে গুটিয়ে বরিশাল নির্ভর হতে হবে বলে মনে করেন বরিশালের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
এসব কাজে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে আগে উদ্যোগী হতে হবে বলে মতামত সুশীল সমাজের অনেকের। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনেই এতোদিন আটকে ছিলো বরিশালের উন্নয়ন এমন দাবী পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ও কলামিস্ট কাজী মিজানুর রহমানের। তিনি বলেন, আমার জানামতে, ডাক, বিসিক, পরিবেশ ও জাদুঘর এখনো খুলনা নির্ভর। আরো অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা এখনো খুলনায় ছুটোছুটি করছে। এসব কারণে বিভাগীয় অনেক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত আমরা। নগর উন্নয়নেও কোনো সুপরিকল্পিত উদ্যোগ দেখি না। নগরীর উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা করার কথা সিটি করপোরেশনের। সে অনুযায়ী খুলনা সিটি করপোরেশন এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে বরিশাল সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় দপ্তর তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো গুছিয়ে নেবে। এতে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সহযোগিতা করবে। বরিশাল বিভাগ ঘোষণার প্রায় ১০ বছর পরে বরিশাল সিটি করপোরেশন হয়েছে। সিটি করপোরেশনের বয়সও এখন ২২ বছর। অথচ এখনো আমাদের খুলনা সিটিতে ছুটতে হচ্ছে এটা অবশ্যই লজ্জার বলে দাবী সামাজিক আন্দোলনের এই নেতার।
আর এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, একটি বিভাগীয় শহর কেন আর একটি বিভাগের উপর নির্ভরশীল থাকবে। তাহলে বিভাগীয় প্রশাসন কি করছে? ১৯৯৩ সালে বরিশাল বিভাগ হয়েছে। ২০০০ সালে হয়েছে সিটি করপোরেশন। এতোদিনেও বরিশাল উন্নয়ন কমিটি হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি চান বরিশালের নাগরিকদের সমন্বয়ে শক্তিশালী একটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তৈরী হোক বরিশালে।
এই একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ বরিশালের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ সবাই। ইতিপূর্বেই সহমত পোষণ করে বক্তব্য দিয়েছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জাহানসহ অনেকে। তারা বলেন, শ্রম আদালত, পোস্ট অফিস, বীমা এমনকি জাদুঘরের যাবতীয় কিছু এখনো খুলনা নির্ভর। সিটি করপোরেশন হওয়ার ২৪ বছর পরও বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নেই এখানে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যা কিছু হয়েছে তার সবটাই বাহ্যিক। বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, আমাদের সময়ে বিভাগ ঘোষণা হয়েছে, সিটি করপোরেশন হয়েছে। এরপর গত সতের বছরে কি হয়েছে বরিশালে?
সামাজিক আন্দোলনের নেতা কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, এটা বরিশালের জন্য অমর্যাদাকর। বিভাগ হওয়ার ৩১ বছর চলছে। এখন পর্যন্ত আমাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম খুলনার সাথে। তাহলে এতো বছর প্রশাসন কি করছে প্রশ্ন তুলে শিবলু আরো বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিভাগীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং তা দ্রুত। আমাদের বরিশাল বিভাগের সন্তান জাহাঙ্গীর কবির নানক মন্ত্রী, জাহিদ ফারুক প্রতিমন্ত্রী। প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নিতে হবে বলে জানান শিবলু।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হলে আমার পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা দেয়া হবে। আমি বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের সাথে কথা বলবো। আর বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। কেউ কখনো এ নিয়ে কিছু বলেও না। আজই প্রথম এটা জানলাম। নামের তালিকাগুলো পেলে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেব।