3:13 pm , January 16, 2024

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা। কনকনে শীতে কাঁপতে কাঁপতে বরিশালের গরম কাপড়ের বাজারে ক্রেতার ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। দূর দূরান্ত থেকেও মানুষ ছুটে এসেছেন শহরে। অবস্থাপন্ন পরিবারের গন্তব্য শহরের বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটে হলেও গরীব ও নি¤œ আয়ের মানুষের ছুটোছুটি মহসিন মার্কেট ও সিটি করপোরেশন সামনে থাকা ফুটপাতের দোকানগুলোতে। এখানেই বাকেরগঞ্জের চরাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রিকশাচালক বাদশা হাওলাদার বললেন, দুই বছর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু কম্বল দিছিলেন। এখনো সেটা আছে। গতবারও কম্বল দিছে, আমি নেই নাই। এবারও শুনছি লোকজনরে কম্বলই দেয়। আমাগো ঘর থেকে বাইর হইয়া কত কামকাইজ করতে হয়, হেইডা কি কম্বল গায়ে দিয়া করবো। পোলাপাইনে শীতে স্কুলে যাইতে পারেনা। হেগো লাইগা গরম কাপড় কিনতে আইছি এহন।
বরিশাল সদরের চাঁদপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোকলেছুর রহমান বলেন, গতবার একখানা কম্বল পাইছি,পাতলা ফিনফিনা। ওরকম পাঁচটা কম্বল দিলেও কিছুই হয়না এই শীতে। ভালো মানসম্পন্ন একটা কম্বল পাইলে দশবছরেও আর কম্বল লাগতোনা। হেইডাতো হেরা কেউই দেয়না। এই কম্বল না দিয়া গরম কাপড় সোয়েটার দিলেই আমাগো বেশি উপকার হইতো।
গত কয়েকদিন ধরে বরিশালে শীতের তীব্রতা অব্যাহত আছে। গতকাল কিছুটা বেড়ে তাপমাত্রা ১২ হয়েছে। এই শীতে বরিশালের বঙ্গবন্ধু কলোনী সহ ২০ টি কলোনির শিশুদের ভোগান্তি খুবই বেশি। জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশন থেকে যারা কম্বল পাচ্ছে তাদেরও কিন্তু প্রয়োজন গরম কাপড়। সোয়েটার বা জ্যাকেট জাতীয় গরম কাপড় পেলে সবচেয়ে বেশি উপকার হবে বলে জানালেন রসুলপুর কলোনীর নৌকা চালক রাহেলা খাতুন। তিনি বলেন, বাচ্চারা স্কুলে যাইতে পারেনা। চলার পাড়ে বইসা থাকে। সোয়েটার বা জ্যাকেট পেলে গায়ে দিয়া স্কুলে যাইতে পারে।
পোর্ট রোড বাজার থেকে রসুলপুর ঘাটে নৌকা চালায় বেশ কয়েকজন মহিলা। তাদের দাবী, কম্বল গতবছর যারা পায়নি, তাদের দেয়া হোক। যারা কম্বল পেয়েছে তাদের গরম কাপড় যেমন সোয়েটার, জাম্পার বা সেগুলো কিনতে সাহায্য দিতে হবে। এদিকে সন্ধ্যায় মহসিন মার্কেটের একটি দোকানে সোয়েটার নিয়ে বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে দেখা যায় ক্রেতা শাহনাজকে। তিনি বলেন, আমার ছেলের স্কুলের ইউনিফর্মের সঙ্গে মানানসই একটি সোয়েটার দরকার ছিল। সেই অনুযায়ী সোয়েটার পছন্দ করে কিনতে এসেছি।
তিনি বলেন, আমাদের মতো মধ্যম আয়ের লোকেরা এই মহসিন মার্কেটে আসে। এখানে তুলনামূলক কম দামে মানসম্পন্ন গরম কাপড় পাওয়া যায়।
নি¤œ ও হতদরিদ্র লোকজনকে বিভিন্ন সড়কে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানে ভিড় করতে দেখা যায়। তবে দাম বেশি বা নাগালের বাইরে থাকায় হতদরিদ্র পরিবারের হাতে কখনোই পৌঁছে না এসব শীতবস্ত্র। তারা তাই সরকারের বা কোনো সংগঠন ও সংস্থার দিকে তাকিয়ে আছে। সকলের আবদার কম্বল শুধু নয়, পাশাপাশি গরম কাপড় সোয়েটার বা জ্যাকেট তাদের খুবই দরকার।
চলতি বছর বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার জন্য ৯৫ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই। তিনি বলেন, জেলা শহরের নৌ বন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ও উপজেলায় ইতিমধ্যেই ৯১ হাজার ১৭৩ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম নিজ হাতে বেশিরভাগ কম্বল বিতরণ করেছেন। তবে শীতবস্ত্র বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।