আগৈলঝাড়ায় অনুষ্ঠিত হলো ২৪৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা   আগৈলঝাড়ায় অনুষ্ঠিত হলো ২৪৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা   - ajkerparibartan.com
আগৈলঝাড়ায় অনুষ্ঠিত হলো ২৪৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা  

3:18 pm , January 15, 2024

আগৈলঝাড়া প্রতিবেদক ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ সকল বয়সী শিশুদের পদচারণায় রামানন্দের আঁক গ্রামে বসেছে ২৪৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা।
রবিবার ভোররাতে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া পৌষ সংক্রান্তির গোসাই নবান্ন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংকীর্ত্তন চলবে সোমবার রাত পর্যস্ত।
সোমবার পূবের আকাশ ফর্সা হতেই শুরু হয় ২৪৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী  মারবেল খেলার মেলা। দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে লোক সমাগম।
মেলায় আগৈলঝাড়া উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার শিশু ও নারী-পুরুষ মেলায় এসেছে মারবেল খেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দেরআঁক গ্রামে মা সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত ২৪৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন উৎসব উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মত এ বছরও মন্দির আঙ্গিনার আশপাশের এলাকায় বসেছে ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার প্রতিযোগীতা।
মারবেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন,  শীতকালে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাওয়ায়  তাদের পূর্ব পুরুষেরা মেলার এই দিনে মারবেল খেলার প্রচলন শুরু করে। গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে আজও তারা মারবেল খেলার ধারা অব্যাহত রেখেছেন। এই দিনটিকে ঘিরে রামানন্দেরআঁক গ্রামে কয়েকদিন পর্যন্ত বিরাজ করে উৎসব, আমেজের ।
স্থানীয়রা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের পিঠা পায়েসের নিমন্ত্রণ জানানোর সাথে মার্বেল খেলায় আমন্ত্রণ জানান। এলাকার প্রতিটি বাড়ির আত্মীয়-স্বজন ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে ওই গ্রাম হয়ে ওঠে লোকে-লোকারণ্য। বাড়িতে বাড়িতে চিড়া, মুড়ি, খেঁজুর গুড়ের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। ঐতিহ্যবাহী এই মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল সকল বয়সী নারী-পুরুষের মারবেল খেলায় অংশগ্রহণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মন্দির এলাকার আশপাশের এলাকাজুড়ে মারবেল খেলার আসর পেতেছে বিভিন্ন বয়সী  নারী পুরুষ ও শিশুরা। বাড়ির আঙ্গিনা, অনাবাদী জমি, বাগান ছাপিয়ে রাস্তার উপরও বসেছে মারবেল খেলার আসর। এর সাথেই রামানন্দেরআঁক মাদ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফল, চটপটি, ফুচকাসহ হরেক রকমের খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানের পসরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা মারবেল খেলার কথা শুনে মেলা দেখতে এসেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী এই মেলা তাদের ভীষণ ভাল লেগেছে বলেও জানান তারা। তারা নিজেরাও মারবেল খেলেছেন। মেলায় মারবেল খেলার জন্য স্থানীয় নারী, পুরূষসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে লোকজন এসেছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে মেলা চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
মন্দির কমিটির সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রাণী  রায় এবং মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান চন্দ্র (বিসি) বিশ্বাস গোসাই নবান্ন ও মেলার উৎপত্তি সম্পর্কে বলেন, এই গ্রামের ছয় বছর বয়সী সোনাই চাঁদ নামে এক মেয়ের বিয়ের বছর না ঘুরতেই তার স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুর বাড়িতে একটি নিম গাছের নীচে সদ্য বিধবা কিশোরী দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন।
পূজার্চনা থেকে সাধনা। এক সময় সাধনার উচ্চ মার্গে সিদ্ধ হলে সোনাই চাঁদের অলৌকিক কর্মকান্ড এলাকা ছাপিয়ে বাইরেও প্রচার পায়। সোনাই’র জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিঃ ‘ সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির’ স্থাপন করা হয়। সোনাইর মৃত্যুর পরেও তার স্থাপিত মন্দির আঙ্গিনায় চলে নাম সংকীর্ত্তন ও নবান্ন উৎসব। স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২ সালে ওই মন্দিরটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।
পঞ্জিকা মতে, প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন নাম সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন মহা উৎসবকে সামনে রেখে এই মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় উৎসবকে ঘিরে গ্রামীণ ঐতিহ্যর ধারক মারবেল খেলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
সোনাই চাঁদের দেহত্যাগের পর ওই বাড়িটি ‘সোনাই আউলিয়ার’ বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছরের মতো এবছরও মেলা উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, হরিণাম সংকীর্ত্তন শেষে সোয়া মণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সাথে সোয়া মণ গুড়, ৫০ জোড়া (১শ পিস) নারকেল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য খাদ্য উপকরণ মিলিয়ে তৈরী করা হয় গোসাই নবান্ন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT