3:11 pm , January 13, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের প্রায় দেড় ডিগ্রী নিচে নেমে যাওয়ায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। শুক্রবার সকালে বরিশালে তাপমাত্রা ১১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামার পরে শনিবার তা ১০.৭ ডিগ্রীতে হ্রাস পেয়েছে। অথচ আবহাওয়া বিভাগের মতে এসময়ে বরিশালে সর্বনি¤œ স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ১১.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুক্রবার বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায় দুপুর সোয়া ৩টার পরে সূর্যের দেখা মিললেও ৪টার পরেই তা মেঘে ঢাকা পড়ে। শনিবার দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে মেঘ সরিয়ে সূর্য উঁকি দিলেও রোদের তেমন তেজ ছিলনা। সাথে হিমেল হাওয়া আর মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ও কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপন্ন।
পৌষের প্রায় শেষে এসে শুক্রবার শেষ রাত থেকেই দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে শীত জাকিয়ে বসে। সাথে হিমেল হাওয়া আর কুয়াশা ঠান্ডার অনুভূতিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার সকালে ১১.৫ ডিগ্রীতে হ্রাসের পরে শনিবার তা আরো দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা ২.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিকের ১.২ ডিগ্রী নিচে নেমে মৌসুমের সর্বনি¤œ স্তরে পৌঁছেছে। অপরদিকে শুক্রবার বরিশালে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদও স্বাভাবিক ২৫.৫ এর স্থলে ১৭.৫ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পায়। যা ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম। ফলে গত দুদিন জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বেশীরভাগ মানুষই ঘর থেকে বের হয়নি।
চলমান মৃদু শৈত্য প্রবাহে জনস্বাস্থ্যের সাথে বোরো ধান, গোল আলু ও শীতকালীন সবজি নিয়ে শংকিত মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধী বৃদ্ধির আশংকাকেও বাড়িয়ে তুলছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭৭ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। শিশু ও বয়স্কদের এ সময়ে যথা সম্ভব ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
এদিকে বর্তমান শৈত্যপ্রবাহ বরিশাল অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় মারাত্মক সংকট তৈরী করছে। গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে ভর করে অকাল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের আমন ও রবি ফসল বিরুপ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার পরে এখন শৈত্য প্রবাহে নতুন সংকট তৈরী করছে। সদ্যসমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয়েছে।
অপরদিকে দু দফার অকাল বর্ষণে রবি আবাদ বিলম্বিত হওয়ার পরে এখন শেষ রাতের মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরীর’ কবলে পড়ছে। গোল আলুর আবাদও বিলম্বিত হওয়ার পরে শৈত্য প্রবাহে ‘লেট ব্লাইট’ রোগের ঝুঁকির মুখে।
চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ হেক্টরে ১৭ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রায় ৯০ ভাগ বীজতলা তৈরী হয়েছে। কিন্তু লাগাতর ঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় এসব বীজতলা কোল্ড ইনজুরীর ঝুঁকির মুখে। এছাড়া প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে যে প্রায় ২ লাখ টন গোল আলু উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে, ঘন কুয়াশায় সেখানেও ‘লেট ব্লাইট’ রোগ হানা দেয়ার পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।
অপরদিকে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের বিরুপ প্রভাবকে পেছনে ফেলে ১৫ লাখ টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে যে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে, সেখানেও নতুন সংকট তৈরী করছে ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া সহ শৈত্য প্রবাহ। কনকনে ঠান্ডার সাথে ঘন কুয়াশায় ফুল কপি ও বাধা কপি সহ বিভিন্ন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি গুনগত মানও বিনষ্ট হচ্ছে। বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি মাঠে থাকা গমের ‘ব্লাষ্ট’ নামের এক ধরনের ছত্রাকবাহী রোগের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ সম্পন্নের পথে। তবে চলমান কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এ ফসলের জন্য খুব একটা অনুকূল নয়। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী দুদিন দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধির কথা জানিয়ে ১৫ জানুয়ারীর পরবর্তি ৫ দিনে বৃষ্টি ও বজ্র বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে।