শীতে কাঁপছে বরিশাল! শীতে কাঁপছে বরিশাল! - ajkerparibartan.com
শীতে কাঁপছে বরিশাল!

3:58 pm , January 12, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপমাত্রার সাথে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবন অনেকটাই বিপন্ন হয়ে পড়ে শুক্রবার সকাল থেকে। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায় সূর্যের দেখা মিলেছে দুপুর সোয়া ৩টার পরে। আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে চলতি জানুয়ারী মাসে বরিশালে সর্বনি¤œ স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ১১.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু পৌষের প্রায় শেষে এসে শুক্রবার সকাল ৬টায় বরিশালে তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় ১১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। যা মাত্র ২৪ ঘন্টা আগেই ছিল ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিকের নিচে নেমে মৌসুমের সর্বনি¤œ স্তরে পৌঁছেছে। ফলে শুক্রবার সকাল থেকে অনেককেই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। জুম্মার নামাজের জামাতেও মুসুল্লীদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। শুক্রবার সকালে বরিশাল বিভাগের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে ১১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মৃদু শৈত্য প্রবাহ জনস্বাস্থ্যের সাথে বোরো ধান, গোল আলু ও শীতকালীন সবজির ওপর মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা।
পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধি বৃদ্ধির আশংকাকেও বাড়িয়ে তুলছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে বরিশালে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭৭ হাজার রোগী এসেছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে।
এদিকে বর্তমান শৈত্য প্রবাহ বরিশাল অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় নতুন সংকট তৈরী করতে যাচ্ছে। গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে ভর করে অকাল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের আমন ও রবি ফসল বিরুপ পরিস্থিতির শিকার হয়। এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয়েছে।
অপরদিকে দু দফার অকাল বর্ষণে রবি আবাদ বিলম্বিত হবার পরে এখন শেষ রাতের মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরীর’ কবলে পড়ছে। গোল আলুর  আবাদও বিলম্বিত হবার পরে শৈত্য প্রবাহে এখন তা ‘লেট ব্লাইট’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার মুখে।
চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ হেক্টরে  ১৭ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষে প্রায় ৯০ ভাগ বীজতলা তৈরী হয়েছে। কিন্তু অব্যাহত ঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায়  এসব বীজতলা কোল্ড ইনজুরীর ঝুঁকির মুখে। এছাড়া প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে যে প্রায় ২ লাখ টন গোল আলু উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে, ঘন কুয়াশায় সেখানেও ‘লেট ব্লাইট’ রোগ হানা দেয়ার আশংকা ক্রমশ বাড়ছে।
অপরদিকে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের বিরুপ প্রভাবকে পেছনে ফেলে ১৫ লাখ টন সবজি উৎপাদনের লক্ষে যে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে, সেখানেও নতুন সংকট তৈরী করছে ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া সহ শৈত্য প্রবাহ। কনকনে ঠান্ডার সাথে ঘন কুয়াশায় ফুল কপি ও বাধা কপি সহ বিভিন্ন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি গুনগত মান বিনষ্ট হচ্ছে। বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি মাঠে থাকা গমের ‘ব্লাষ্ট’ নামের এক ধরনের ছত্রাকবাহী রোগের পরিস্থিতি তৈরী করার আশংকাও বৃদ্ধি করছে। ইতোমধ্যে বরিশাল কৃষি  অঞ্চলে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ সম্পন্নের পথে। যা লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী দু’দিন  দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধির কথা জানিয়ে ১৪ জানুয়ারীর পরবর্তি ৫ দিনে বৃষ্টি ও বজ্র বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT