বরিশাল নগরীর সৌন্দর্য্য ও সুনাম ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছেন সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বরিশাল নগরীর সৌন্দর্য্য ও সুনাম ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছেন সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত - ajkerparibartan.com
বরিশাল নগরীর সৌন্দর্য্য ও সুনাম ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছেন সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত

3:59 pm , January 11, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ধান-নদী-খাল নিয়ে সমৃদ্ধ প্রাচ্যের ভ্যানিস খ্যাত বরিশালকে পূর্বের রুপে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এ মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন কথা কম, বেশী কাজ-এ মন্ত্রে বিশ্বাসী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। গত বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে বরিশাল নগরীর সাগরদী খালের দুই পাড়ে সোয়া চার কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে ও সাইকেল ওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে সাগরদী খালের এই কাজের উদ্বোধন করে সিটি মেয়র বলেছেন, এখন আমরা যে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সে লক্ষ্যে কাজ করে যাব। আমি অগ্রিম কোন কিছু বলতে চাইনা, তবে বরিশালের উন্নয়ন হবে এটা নিশ্চিত।উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১৮০১ সালে বাকেরগঞ্জ জেলার সদরদপ্তর বরিশালে স্থানান্তরের মাধ্যমে বরিশাল নগরীর যাত্রা শুরু হয়। মূলত নগরীর অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমাণে জলাশয় এবং খাল থাকার কারণে যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে ব্রিটিশরা এই শহরকেই নতুন সদরদপ্তর হিসেবে বেছে নেয়। খালসমূহের সৌন্দর্যে নগরীর চিত্র ছিলো অপরূপ। রবীন্দ্রনাথের বজরা এই নগরীতেই ভিড়েছিলো।এছাড়াও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বরিশালকে আখ্যায়িত করেছিলেন বাংলার ভেনিস হিসেবে। সবমিলিয়ে সড়কপথের চেয়ে নৌপথই ছিলো বরিশাল নগরীর প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম।অস্তিত্ব সংকট : কথিত আছে ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলে ১০৮ টি খালের অস্তিত্ব ছিলো। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে এই সংখ্যা কমে গিয়ে হয় ৪৬টি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারি হিসেবে ২৩টি খালের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারি বরিশালকে বিভাগ ঘোষণা করা হয় এবং বরিশাল শহরকে বিভাগীয় সদরদপ্তর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত এরপর থেকেই খালসমূহ তাদের চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। অন্যান্য বিভাগীয় শহরের মতো উন্নত সড়কযোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে খাল ভরাট করে ড্রেন, রাস্তাঘাট ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নেয় তৎকালীন নীতিনির্ধারকেরা। তারই অংশ হিসেবে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন পৌরসভা বটতলা বাজার এলাকায় নবগ্রাম খাল (বটতলা খাল) ভরাট করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়। ২০০০ সালে বরিশাল পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হলে ঐসময় খালটির বটতলা থেকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা পর্যন্ত অংশ ভরাট করা হয়। ২০০৩ সালে খালটির নবগ্রাম থেকে বটতলা মার্কেট পর্যন্ত এলাকা ভরাট করা হয়। বটতলা খালের ওপর সড়ক নির্মাণ করা হয় ২০০৮ সালের পরে।মূলত তারপরথেকেই খালসমূহ চূড়ান্তভাবে অস্তিত্ব হারায়। অধিকাংশ খালই আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে ভরাট হয়ে যায়। হাতেগোনা কয়েকটি খাল টিকে যায় মৃতপ্রায় হিসেবে।বর্তমানে সরকারিভাবে ২৩টি খালের অস্তিত্বের কথা শোনা যায়ঃ ১. জেল খাল, ২. ভাটার খাল, ৩. সাগরদী খাল, ৪. আমানতগঞ্জ খাল, ৫. লাকুটিয়া খাল, ৬. উত্তর সাগরদী খাল, ৭. নবগ্রাম খাল, ৮. নথুল্লাবাদ খাল, ৯. চাঁদমারী খাল, ১০. ভেদুরিয়া খাল, ১১. তাজকাটী খাল, ১২. শোলনা খাল, ১৩. সাপানিয়া খাল, ১৪. হরিনা ফুলিয়া খাল, ১৫. চৌপাশা খাল, ১৬. চর বদনা খাল, ১৭. টিয়াখালী খাল, ১৮. পশ্চিম হরিনাফুলিয়া খাল, ১৯. কাটাখালী খাল, ২০. কৃষ্ণচূড়া খাল, ২১. ইছাকাঠী খাল, ২২. জাগুয়া খাল, ২৩. নাপিতের খাল। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে কোনো খাল ভরাট না হলেও এবং খালসংস্কার ও পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা সফলভাবে বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি। তবে সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত খালসংস্কার ও পুনরুদ্ধারে বাস্তবমূখী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। বরিশালের সচেতন মহল মনে করেন, সাগরদী খাল, নবগ্রামের খাল সংস্কারের মতোই অন্যান্য খাল উদ্ধার করে এর সংস্কার কাজে উদ্যোগ নেয়া হবে। এব্যাপারে সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বরিশাল নগরীর খালগুলো খনন ও উদ্ধারের কাজ চলছে।পর্যায়ক্রমে নগরীর সকল খাল একই ভাবে সংস্কারের পাশাপাশি সৌন্দর্য্য বর্ধ্যনের কাজ করা হবে। এদিকে সরেজমিনে সাগরদী খাল সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) পূর্বেকার কর্তাব্যক্তিদের গাফিলতির কারণে এ খাল আবর্জনায় ভরে গিয়েছিলো। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই সাগরদী খাল খনন ও এর আশপাশের সৌন্দর্য্য বর্ধনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন। তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কর্পোরেশনের এ উদ্যোগের ফলে মৃতপ্রায় খালটি যেমন প্রান ফিরে পাবে তেমনি এখানকার মানুষদের কাছে বিনোদন স্পট হিসেবে বিবেচিত হবে। বরিশাল নগরীর সচেতন বেশ কয়েকজন নাগরিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নগরীর একটি প্রধান সমস্যা। অল্প বৃষ্টিতেই নগরী তলিয়ে যায়। নগরীর মৃতপ্রায় খালগুলো উদ্ধারে মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত যে মহতি উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাতে আশা করছি আগামী বর্ষা মৌসুমে নগরীতে আর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবেনা। নগরীর কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা সুকদেব সাহা বলেন, সাগরদী খাল যেমন খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তেমনি আমরা আশা করি অচিরেই মেয়র মহোদয় বরিশাল জেল খাল খননসহ এর সৌন্দর্য্য বর্ধনে উদ্যোগী হবেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT