পূর্ণমন্ত্রী হলেন বরিশালের গর্বিত সন্তান নানক পূর্ণমন্ত্রী হলেন বরিশালের গর্বিত সন্তান নানক - ajkerparibartan.com
পূর্ণমন্ত্রী হলেন বরিশালের গর্বিত সন্তান নানক

3:56 pm , January 11, 2024

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ যেখানে সমস্যা, দলীয় কোন্দল বা সংঘাতের আশঙ্কা সেখানেই দলীয় সভাপতির নির্দেশে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। সিলেট, চট্টগ্রাম এবং সর্বশেষ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি দেখিয়েছেন তার দক্ষতা। তারই প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে শত বাধাবিঘœ উপেক্ষা করে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে জয় পেয়েছে নৌকার প্রার্থীরা। যার অনন্য উদাহরণ বরিশালের আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। গতবছর ১২ জুনের এই নির্বাচনে বরিশালের অলিগলিতে ঘুরেছেন তিনি, ঐক্যবদ্ধ করছেন দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষকে। যার প্রভাব ছিলো দ্বাদশ জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বরিশাল-৫ আসনের মাঠে। বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতা অর্জনের সাথে সাথে পালন করেছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। বলছি, বরিশালের গর্ব জাহাঙ্গীর কবির নানক এর কথা। বরিশালবাসীর প্রিয় নানক ভাই। বিজয় হাঁটে যার পায়ে পায়ে। এই বিজয়ের সম্মানে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করার পর ১১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেলেন তিনি। তার সম্পর্কে মূল্যায়ন করে বরিশালের আরেক গর্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক বলেন, তুখোড় ছাত্রনেতা নানককে সাথে নিয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে বরিশালে ও বরিশালের আশেপাশে মাইকিং করেছি আমি। নানক ছোটবেলা থেকেই চমৎকার সংগঠক গুণাবলী সম্পন্ন ছিলো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ওর বয়স ছিলো ১৩-১৫ হয়তো। চমৎকার কণ্ঠ থাকায় মাইকিং এর দায়িত্ব ওর ছিলো।নানক সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, যদিও তার সম্পর্কে মূল্যায়ন আমার উচিত নয়, তবুও বলবো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা ও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করায় তার ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। যুদ্ধ শেষে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে নানক বিএম কলেজের ভিপি হয়েছিল। ওদের সময়ে সত্যিকারের ছাত্র রাজনীতির চর্চা ছিলো। বরিশাল শহরের ক্ষীরোদ মুখার্জী লেনের পৈতৃক বাড়িতে ১৯৫৪ সালের ১৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীর কবীর নানক। স্কুল জীবন থেকেই ১৯৬৭ সালে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। ১৯৬৯-৭০ সালে একে স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন ঐ সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত  বিদ্যাপীঠ বিএম কলেজে। তখন পাকিস্তানি শৃংখল থেকে মুক্তির দাবীতে উত্তাল বাংলাদেশ। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বেলিত নানক ঐ বয়সেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় উঠে আসে নানকের নাম। যুদ্ধ শেষে পুনরায় পড়াশুনায় মনোযোগী হন নানক। পাশাপাশি বিএম কলেজে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৭৪ সালে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে জিএস পদপ্রার্থী ছিলেন। ভিপি প্রার্থী মনসুর আলম মন্টু। কিন্তু তৎকালীন সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আসে ‘৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। নৃশংস হত্যাযজ্ঞে স্বপরিবারে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৩০ আগস্ট মোশতাক সরকার সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু থামলেন না বরিশালের  এই বিদ্রোহী তরুণ নেতা। গোপনে কাজ করতে লাগলেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শোকাহত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে তার চেষ্টা ব্যর্থ হলো। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও শহীদুল ইসলাম খানসহ তৎকালীন কয়েকজন ছাত্রনেতা সিদ্ধান্ত নিলেন ১৫ই আগস্ট বরিশালে হরতালের ডাক দিবেন। ঐসময় বরিশালে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে কেউ সাহস পায়নি। সড়কে আঁকা হয়নি আলপনা, দেয়ালে লেখা হয়নি বর্ণমালা। আগস্টের ১০ তারিখ। শবে বরাতের দিন। সূর্য তখনও অস্ত যায়নি। ঠিক তখন ১৫ আগষ্ট হরতালের সমর্থনে বিএম কলেজে গোপন সভা চলছে। কিন্ত সামরিক জান্তারা গোপনে খবর পেয়ে সভাস্থল ঘিরে ফেলল। সেখান থেকে গ্রেফতার হলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তারপর দিনের পর দিন চলল অমানুষিক নির্যাতন। সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হলো তাকে। সে দিনের দুঃসহ স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে আজও শিউরে ওঠেন তিনি। বললেন, ‘দীর্ঘ ১৪ মাস ডিটেনশনে থাকতে হয়েছে। ডিটেনশনে নির্ধারিত মেয়াদ থাকে এক মাস, দুমাস, তিন মাস কিন্তু আমার ডিটেনশন ছিল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। জেলে বসেই অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয়েছিল’। জেল থেকে বের হয়ে ছাত্র-জনতাকে আবার সংগঠিত করতে থাকেন নানক। বরিশালে তৈরী হয় এক ঝাঁক ত্যাগী ছাত্র নেতা আর এক দল প্রতিবাদী কর্মী। ‘৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে শামসুদ্দিন খাজা, এনায়েত হোসেন হাওলাদার, সুভাষ রায়, হাবিবুর রহমান শাহজাহান, হেমায়েত উদ্দিন হাওলাদার, শহীদ খানের ত্যাগের কথা তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।১৯৭৭ সালে দেশে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে অশ্বিনী কুমার হলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে তৎকালীন সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন নানক। সন্ত্রাসীদের লাঠির আঘাতে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। একই বছর ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক  উকিল ও আব্দুর রাজ্জাকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে লাইন রোডের মুখে আর্ট ভিলা ষ্টুডিওর সামনে তৎকালীন সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে কিন্তু অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৭৯ সালে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নানক-শহীদ পরিষদে তিনি ছিলেন ভিপি প্রার্থী। কিন্তু সেবারও নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায় সন্ত্রাসীদের হামলায়। তৎকালীন ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা বিএম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবীতে স্বাধীনতার পর থেকে আন্দোলন করেছি। দাবীর স্বপক্ষে ১৯৭৪ সালে আমরা তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সভামঞ্চ ভেঙে দিয়েছি। আমরা তাকে বরিশালের জনসভা করতে দেইনি। নানক বলেন, ছাত্র রাজনীতির মূলমন্ত্রই হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন নিয়ে কথা বলা। বেতন কমানো, ছাত্রাবাসের সমস্যা দূর করা, ক্যান্টিনের খাবারের মান বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে কথা বলাটাই ছাত্র রাজনীতি। তারপর প্রয়োজন মুহূর্তে দেশ ও দশের উপকারে মাথা জাগাবে ছাত্ররা। ছাত্র রাজনীতি না থাকলেতো আজ বাংলা ভাষা হতো না, বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু হতো না।তিনি শুধু যে ছাত্র বা যুব নেতা তা-ই নয়, বলা যায় বিজয়ের আরেক নাম জাহাঙ্গীর কবীর নানক। শুধু ছাত্র রাজনীতিতে নয়, তিনি যেখানে গিয়েছেন সেখানেই বিজয় হেঁটেছে তার পায়ে পায়ে। ’৮৪ সালে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হলেন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলে ছাত্রলীগ হলো শক্তিশালী সংগঠন। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।শ্লোগান-কবিতা আর সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন। ডাকসু নির্বাচন হলো। কাদের-নানক পরিষদে। জিএস হলেন নানক। ২০০৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন যুগ্ম সম্পাদক থেকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিছুদিন পর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক। সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। এবার নিয়ে তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য। একবার প্রতিমন্ত্রী ও এবার পূর্ণ মন্ত্রী হলেন জাহাঙ্গীর কবীর নানক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT