3:54 pm , January 4, 2024

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল-২ (বানারিপাড়া-উজিরপুর) আসনে জোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তবে এখানে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাইয়াজুল হক রাজু। এছাড়াও ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করছেন ঢেঁকি প্রতীক নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মনি এবং গামছা প্রতীকের কৃষক জনতা পার্টির প্রার্থী কন্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। এই আসনে জোট প্রার্থীসহ ৭ জন কাগজে-কলমে থাকলেও নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই চার প্রার্থী। সাতজনের মধ্যে থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বাকী ছয়জনের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন জোট প্রার্থী বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য শের ই বাংলা একে ফজলুল হকের নাতী একে ফাইয়াজুল হক। প্রচারণার মাঠে দেখা যায়নি তৃণমূল বিএনপি’র আলহাজ্ব মো. শাহজাহান সিরাজ ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) সাহেব আলীকে। সরেজমিনে এই আসনের কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এটা স্পষ্ট যে, এখানে নির্বাচনে জোটের নৌকার প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র ঈগলের সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ কারনে ওই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। ইতিমধ্যে ঈগলের প্রার্থীর ১৬টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে। যা নিয়ে থানায় মামলা করেছেন ঈগল প্রার্থীর মেয়ে। মনোয়নয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন জোট প্রার্থী রাশেদ খান মেনন। এখানে প্রথমে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোঃ ইউনুস। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে ফাইয়াজুল হক রাজুর পক্ষে গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। জোটের মনোনয়ন নিয়ে রাশেদ খান মেনন নৌকার মাঝি হলে এই আসনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে প্রচারণা শুরু করে। এর পূর্বে দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে বর্ধিত সভা করেন রাশেদ খান মেনন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসও। তিনি দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য। তবে জোটের প্রার্থীর বিষয়টি মেনে নিতে ইউনুসকে বেশ বেগ পেতে হয়। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর তিনি বর্ধিত সভায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এরপরই অসুস্থ হয়ে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারপরও দলের সিদ্ধান্ত মেনে জোটের প্রার্থীর সাথে প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন তালুকদার মোঃ ইউনুসসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। তাদেরকে সাথে নিয়েই জোট প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন বানারীপাড়ার ৮ ইউনিয়নের ৭৯ গ্রাম সহ উজিরপুর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ১২৫ গ্রামে। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত চলছে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক। পাশাপাশি মাইকিং চলছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। দুই উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাপোর্ট থাকায় এবং তারাও প্রচার-প্রচারণায় স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নেয়ায় দুই উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটারের কাছে নৌকার উন্নয়ন বার্তা নিয়ে পৌঁছে গেছেন মেনন। তাছাড়া এক সময় উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ নিয়ে একটি আসন ছিল। তখন মেনন ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই এলাকার মশাং গ্রামে মেননের নানাবাড়ি এ কারনে আসনটি তার পুরনো। তবে দীর্ঘদিন পর ওই আসনে আবারো মনোনয়ন নিয়ে যাওয়ায় দারুন খুশী উপজেলাবাসী।
বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ও উজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এসএম জামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জোটের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এতে করে আগামী ৭ জানুয়ারী জোটের প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে বলে আশা করছেন তারা। এদিকে জোটের প্রার্থীর পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামে সমানে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাইয়াজুল হক রাজু। তার বাবা শের ই বাংলা একে ফজলুল হক এর ছেলে একে ফায়জুল হক ছিলেন ওই আসনের দুইবারের এমপি। আওয়ামীলীগ সরকারের পাটপ্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। বাবা ও দাদাকে সামনে রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় করতে চাইছেন রাজু। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ের কিছু আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে চলছে তার প্রচার-প্রচারণা। রাজু অভিযোগ করেন, প্রতিনিয়ত নৌকার কর্মী সমর্থক তার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা চালাচ্ছে। তার কর্মী-সমর্থকদের মোটরসাইকেল বহরে হামলা চালিয়ে ১৬টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুর করা হয়েছে। এতে তার ৪০ নেতাকর্মী আহত হয়।
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আতঙ্কিত দাবী করে রাজু আরো বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কিছু লোক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে আমার প্রচার প্রচারণায় হামলা করছে। উজিরপুরের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী কার্যালয়ে তালা দেয়ারও অভিযোগ করেন তিনি। এ সকল কারনে প্রচার-প্রচারণায় মারাত্মক বিঘœ সৃস্টি হচ্ছে। তারপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনিই বিজয়ী হবেন বলে জানান ফাইয়াজুল হক রাজু । আর এ দুইজনের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ওই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি ও সঙ্গীত শিল্পী নকুল বিশ্বাস। মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। ওই সময় দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। এ কারনে দুই উপজেলাবাসী তাকে ভোট দিয়ে আবারো উন্নয়নের ধারায় ফিরবে বলে তিনি দাবি করেন। আর গামছা গলায় ঝুঁলিয়ে গায়ক নকুল কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতীক পাওয়ার পর থেকে দুই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা প্রচার-প্রচারণায় চালিয়ে আসছেন। এতে করে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দুই উপজেলায় এখনো বহু সড়ক রয়েছে যা চলাচলের একেবারে অযোগ্য। তিনি কথা দিয়েছেন নির্বাচিত না হলেও ওই সকল সড়ক নিজ অর্থায়নে পাকা করে দেবেন। তাছাড়া যেখানেই যাচ্ছেন তার ভক্তরা তাকে ঘিরে ধরছেন। মাহফিলে গিয়ে ধর্মীয় গান শুনিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করছেন তিনি। দুই উপজেলার একাধিক ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে মূল লড়াই হবে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে। নৌকার ভরসা আওয়ামী লীগের ভোট আর ঈগলের ভরসা প্রার্থীর বাবা ও দাদার সমর্থকদের উপর। এরপরও গ্রাম পর্যায়ের আওয়ামী লীগের ভোটে ভাগ বসাবে রাজু। এ কারনে বিভিন্ন স্থানে রাজুর কর্মী সমর্থকদের বাধা দেয়া হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বাধা দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।