4:21 pm , January 2, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সীমানা প্রাচীর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের জায়গা দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সিটি কর্পোরেশন বা জেলা প্রশাসন কারো কাছ থেকে কোন প্রকার অনুমতি না নিয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ মো. এহতেসাম উল হক উন্নয়নের নাম করে দখলের এই চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে অভিযোগকারীরা। আরমান নামের এক চা দোকানি অভিযোগ করেছেন তাকে মারধর করেছে অধ্যক্ষ। তবে এলাকাবাসী ও ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনের হস্তক্ষেপে দখলের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন। এলাকাবাসী সহ সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারী সূত্র জানায়, বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণের পর বাইরে দেবদারু গাছ রোপন করেছিলেন সাবেক মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরণ। বিদ্যালয়ের প্রাচীরের সীমানা চূড়ান্ত করা হয়েছিল এই গাছ রোপনের মাধ্যমে। এরপর ওই প্রাচীরের পাশে সুমন নামের একজনকে নার্সারি ব্যবসা করার অনুমতি দেয় সিটি কর্পোরেশন সহ জেলা প্রশাসন। ওই নার্সারীর বাইরে সড়কের পাশে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে ভ্রাম্যমান বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। এই খাবারের দোকানগুলো থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের বড় একটি রেস্তোরাঁ সহ মডেল স্কুলের ক্যান্টিনের বেঁচাকেনায় প্রভাব পড়তে শুরু করে। তাই অধ্যক্ষ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে চেষ্টা শুরু করেন ভ্রাম্যমান সকল দোকান উচ্ছেদ করে ওই রেস্টুরেন্ট মালিকদের সহায়তা করার। তবে হতদরিদ্র শ্রেণির হলেও ১০ নং ওয়ার্ডের বেশিরভাগ ভোটাররা ওই স্থানে এ সকল খাবারের দোকান পরিচালনা করায় তাদের সরাসরি উচ্ছেদ করতে পারছিলেন না অধ্যক্ষ বলে জানিয়েছে সূত্র। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশস্থলের পার্শ্ববর্তী ওই স্থানটি পরিচ্ছন্ন করা হয়। সাময়িকভাবে সরানো হয় সকল দোকান। ২৯ ডিসেম্বর সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ফাঁকা স্থানে সুযোগ নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর সকালে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের বাইরে তিন/চার ফুট বঙ্গবন্ধু উদ্যানের জায়গার মধ্যে এসে সীমানা প্রাচীরের পাশে গাথা শুরু করেন অধ্যক্ষ। দূর দূরান্ত থেকে শ্রমিক এনে মাত্র একদিনের মধ্যে বিদ্যালয় প্রবেশের বা পাশের পুরো সীমানা প্রাচীর বরাবর দেয়াল গেথে ফেলা হয়। এ সময় দোকানীরা বাধা দিলে অধ্যক্ষ নিজেই পার্শ্ববর্তী দোকানদারদের মারধর করেন। স্থানীয়রা বিষয়টি ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনকে জানালে তিনি এসে কাজ বন্ধ করে দিয়ে যান। কোন শ্রমিক কাজ না করলেও অধ্যক্ষ নিজেই দখলের এই কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছেন বলে জানায় সূত্রটি।
এ বিষয়ে ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজটি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ।পূর্বে এখানে যারা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তারা সকলেই ছিলেন ভালো লোক। তবে বর্তমান অধ্যক্ষ ডঃ মো. এহতেসাম উল হক একজন দুষ্ট প্রকৃতির লোক। শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে সন্ত্রাসী চরিত্র বিদ্যমান। মডেল স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর সীমানা প্রাচীন নির্মাণ শেষে তা চূড়ান্ত করে দেবদারু গাছ রোপণ করছিলেন সাবেক মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরণ। কিন্তু বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে বর্তমান অধ্যক্ষ ডঃ মো. এহতেসাম উল হক সীমানা প্রাচীরের ৩-৪ ফুট বাইরে এসে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে দেয়াল তুলছেন। ৩০ ডিসেম্বর সকালে কাজটি শুরু করার সময় তিনি নিজে আরমান নামে এক চা দোকানিকে মারধর করেছেন। এসময় তিনি আরমানকে লাথি মারেন। এস সময় আরমান পালানোর চেষ্টা করলে শাবল ছুড়ে মারে অধ্যক্ষ। স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ সকল দোকানদার ১০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জানিয়ে কাউন্সিলর আরো জানান, এলাকার বাসিন্দারা তাকে এসে জানালে কোন অনুমতি আছে কিনা এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেন।
কিন্তু কোন ধরনের অনুমতির বিষয় নিশ্চিত কোন তথ্য পাননি। এরপর জানতে পারেন অধ্যক্ষ নিজেই নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছেন। ৩১ ডিসেম্বর সকালে গিয়ে তিনি কাজ বন্ধ করে দিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ মো. এহতেসাম উল হক জানান, সীমানা প্রাচীর সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তিনি এই কাজ শুরু করেছেন। সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে থাকা এই স্থানটিতে কাজ শুরু করার কোন ধরনের লিখিত অনুমোদন নেই। তবে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মৌখিক আলাপ করেছেন। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ফান্ডের কিছু টাকা অবশিষ্ট থাকায় কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই এই কাজ করাচ্ছেন তিনি। তবে স্থানীয় ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসে কাজ বন্ধ করে দিয়ে গেছেন। তার কোন লাভ-লস নেই এখানে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আবুল বাসারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রতিবেদক এর কাছ থেকেই প্রথম শুনেছেন। এর আগে কেউ তার সাথে এ ধরনের কোনো বিষয় আলাপ করেনি। এমনকি মৌখিক অনুমোদনও তার কাছ থেকে নেয়নি কেউ। সিটি কর্পোরেশনের একাধিক প্রকৌশলী রয়েছেন। হয়তো তাদের কারো সাথে আলাপ করতে পারেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে থাকা বঙ্গবন্ধু উদ্যানের জায়গায় কোনভাবেই মডেল স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন কিছু নির্মাণ করতে পারবেন না।