নগরীর গড়িয়ারপাড় থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ নগরীর গড়িয়ারপাড় থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ - ajkerparibartan.com
নগরীর গড়িয়ারপাড় থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ

3:04 pm , December 8, 2023

সড়ক দখলে থ্রি-হুইলার-অটো-বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মহাসড়কের নগরীর মধ্যবর্তী অংশের যানযট ও দুর্ঘটনা রোধে ২৪ ফুটের রাস্তা হয়েছে ৫৪ ফুট। তবে পূর্বের ২৪ ফুট সড়কের পড় বর্ধিত অংশে কয়েকদিন পূর্বে ট্রাকের চাপায় নিহত হয়েছে মো. তৌফিকুর রহমান শুভ নামের শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। সিএন্ডবি রোডের তেমাথা এলাকায় নথুল্লাবাদ থেকে আসা ট্রাকটি গতিরোধক এড়াতে গিয়ে পুরোপুরি রং সাইডে এসে এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। আটক হয় চালক ও ঘাতক ট্রাক। এটি একটি উজ্জল উদাহরন যে সঠিক তদারকির অভাবে কতটা ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠেছে নগরীর সবচেয়ে প্রশস্ত এই সড়কের চলাচলের অবস্থা। নগরীর গড়িয়ারপাড় থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারের প্রায় প্রতিটি স্থানই এখন ঝুকিপূর্ন। প্রতিদিন এই সড়কে ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। নগরীর মাত্রাতিরিক্ত থ্রী হুইলার, এত প্রসস্ত সড়কে অনভ্যস্থ চলাচলকারী, সড়ক আটকে ব্যক্তিগত স্বার্থে পাকিং সহ ট্রাফিক বিভাগের যান চলাচলে দুর্বল নিয়ন্ত্রন ও সঠিত তদারকির অভাবে উন্নয়নের সুফল এখন ভোগান্তি এবং ঝুকির কারনে পরিনত হচ্ছে বলে মনে করেন নগরীর সচেতনরা। এতে দায় শুধু ট্রাফিক বিভাগের নয় বলে মনে করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগকে পারস্পরিক সমন্বয় করে চলাচল ও তদারকির নিয়ম প্রনয়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
সূত্র মতে, মহাসড়কের যানজট ও দুর্ঘটনা রোধে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে (পিএমপি) রোড মেজর মেইনটেন্যান্স প্রোগ্রাম নামের এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৪ ফুটের সড়কটিকে ৫৪ ফুটে প্রশস্ত করার প্রকল্প হাতে নেয়। নগরীর গড়িয়ারপাড় থেকে চৌমাথা এবং চৌমাথা থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত দুই ভাগে এই কাজ চলছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমডি মাহফুজ খান লিমিটেড এ বছর ২ ও ১৪ মার্চ কার্যাদেশে স্বাক্ষর করে শুরু করে সড়ক প্রশস্ত করন কাজের। বর্তমানে সড়ক প্রশস্ত করে প্রথম লেয়ার পিচ ঢালাই দিয়ে সিএন্ডবি রোডের মডেল মসজিদ পর্যন্ত এক অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অপর দিক থেকে উল্টো দিক থেকে দপদপিয়া থেকে শুরু করে রুপাতলী পর্যন্ত প্রশস্ত সড়কের পিচ ঢালাইয়ে প্রথম লেয়ার দেয়া হয়েছে। এই কাজ শুরুতে পল্লী বিদ্যুতের খুটি সড়ানো এবং গাছ কাটার জন্য কাজের শুরুতে বেশ বিলম্ব হয়েছিল বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ সময় কাটা হয়েছিল ৪০২ টি শতবর্ষী গাছ। বর্তমানে সড়কের মধ্যে দেয়া হচ্ছে ডিভাইডার। মডেল মসজিদের প্রান্ত থেকে ডিভাইডার দেয়া শুরু হলেও তা আপাতত বন্ধ রেখে ডিভাডিং এর কাজ বেশি গুরুত্বের ভিত্তিতে শুরু করা হয়ে হয়েছে নথুল্লাবাদে। এই কাজের পর পুরো ১৩ কিলোমিটার সড়কে পিচ ঢালাই এর ২য় লেয়ার দিয়ে কাজ সম্পন্ন হবে।
বৃহস্পতিবার দিনভর বর্ধিত সড়কের কাশিপুর, নথুল্লাবাদ, কাজীপাড়া তেমাথা, চৌমাথা, থানা কাউন্সিল, সিএন্ডবি এক নং পুল, খান সড়কের মুখ, সড়ক ও জনপদ অফিস, আমতলা মোড়, সাগরদী চান্দু মার্কেট, রুপাতলী এবং সোনার গা টেক্সাইল মিল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে যান ও পথচারিদের নিয়মনিতীহিন ও ঝুকিপূর্ন চলাচলের দৃশ্য। ঐ সকল এলাকা সহ প্রায় পুরো বর্ধিত সড়কটিতে দেখা গেছে ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পার্ক করা যানবাহন রয়েছে। রুপাতলী হাউজিং এর সামনে সড়কের ওপরেই বসানো হয়েছে ফলের দোকান সহ নানা ধরনের ব্যবসা। অন্যদিকে নথুল্লাবাদ পোলে ওঠা ও নামার উভয় পাশের সড়কেই পার্ক করা দেখা গেছে বাস সহ থ্রী হুইলার। এই ধরনের পার্কিং এর কারনে সড়ক প্রসস্থ হয়েছে ঠিকই তবে যান চলাচল  রয়ে গেছে সংকীর্ণ। এই সকল স্থান থেকে রাতে ও দিনে দ্রুত চলাচল কারী যানগুলো নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলিত হচ্ছে।
পথচারীদের চলাচলে দৃশ্য দেখে খোদ আতঙ্কিত হচ্ছে পথচারীরাই। নগরীর চৌমাথা এলাকায় সাইদ আহমেদ নামের এক পথচারির সাথে আলাপকালে জানান, বরিশালে এই সড়কটি যখন ২৪ ফুট ছিলো তখনো মানুষ চলাচল করেছে। এখন ৫৪ ফুট হওয়ার পরেও বিড়ম্বনা এড়াতে পারছে না। যেখানে বাড়ার কথা সুবিধা, সেখানে বেড়েছে ঝুকি। বরিশালে বৈধর তুলনায় কয়েকগুন বেশি থ্রি-হুইলার রয়েছে। এ সকল থ্রি-হুলারের বেশির ভাগ চলাচল করে মহাসড়কের নগরীর অংশে। এদের নেই সড়কে চলাচলের সঠিক জ্ঞান। এরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে যে কোন সময় থামিয়ে যাত্রি নামায়-উঠায়। সিগন্যাল কি জিনিস এই থ্রি-হুইলার চালকরা যানেনা বলে অভিযোগ করেন পথচারী। এদের নিয়ন্ত্রনে ট্রাফিক বিভাগের কঠোর হওয়া উচিত। অপরদিকে বরিশালের পায়ে হেটে চলাচল কারীরা এত প্রশস্থ সড়ক পারাপারে অভ্যস্থ নয়। তারা যেভাবে ইচ্ছা যেখান থেকে ইচ্ছা তেমনি ভাবে চলাচল করছে। কেউ কেউ যানবাহনে ওঠার জন্য এসে দাড়াচ্ছে ঠিক সড়কের মাঝখানে। এ সকল বিষয়ে অতি দ্রুত নিয়ন্ত্রনে আনা উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তা না হলে মেডিকেলের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তৌফিকুর রহমান শুভর মৃত্যুর মত আরো দুর্ঘটনা ঘটবে বলে মন্তব্য করেন। নগরীর ১৩ কিলোমিটার এই সড়কটির দুই পাশে কমপক্ষে ১০টির বেশি সরকারি বে-সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী সরাসরি এই মহাসড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন। এ পাড় থেকে অপর পাড়ে আসা যাওয়া করে। দীর্ঘ প্রশস্থ এ সড়কের যত্রতত্র স্থান থেকে আকস্মিকভাবে দৌড়ে পারাপারের চেষ্টা করে। বড় সড়ক পেয়ে যানবাহন কোন লেন না মেনে যে যেভাবে পারছে দ্রুত গতিতে ছুটছে। আকস্মিক সড়ক পারাপারকারীদের কারনে দ্রুত গতির কারনে নিয়ন্ত্রন হারানো যানবাহনে ঘটতে পারে বড়ধরনের দুর্ঘটনা। তাই দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহন প্রয়োজন। অন্যদিকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের কঠোর নিয়ম করা উচিত। প্রতিটি যানের চলাচলের জন্য সড়কের নির্দিষ্ট অংশ পৃথক করে দেওয়া উচিত। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান যেমন হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে গতিরোধক ও সতর্কতা সংকেত দেয়া ও তা পালনে কঠোর নজরদারীর আওতায় আনতে হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং বন্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত ভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করার আহবান জানান এই পথচারি।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের টিআই বিদ্যুৎ কুমার জানান, ট্রাফিক বিভাগের জনবল সংকটের কারনে কাজের বিরম্বনা রয়েছে। মহাসড়কের পুরো ১৩কিলোমিটার এই অংশের ৪টি স্পটে ১৫ জন ট্রাফিক কনেস্টবল ও সার্জেন্ট যান চলাচল নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। এই সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট দিয়ে বিশেষ বিশেষ স্থান নিয়ন্ত্রন করতেই হিমশিম খেতে হয়। এর পরেও প্রতিদিনই মাত্রাতিরিক্ত থ্রি-হুইলার নিয়ন্ত্রনে মামলা ও আটক অভিযান চলমান থাকে। কিন্তু তারা পুনরায় সড়কে ফিরে আসে। এদের নিয়ন্ত্রনে শুধু ট্রাফিক বিভাগই নয় এগিয়ে আসা উচিত সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্টদের। যান চলাচলের এই অবস্থা শুধু মহাসড়কেই নয়, এমন অবস্থা গোটা নগরীতে। সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে সমাধানে পদক্ষেপ না নিলে দিনদিন বরিশালের সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আল আমিন বলেন, সড়ক বর্ধিত করনের কাজ দ্রুতই এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সিংহভাগ সম্পন্ন করেছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাজ সময়ের মধ্যে সড়কটি চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা। আর এই কাজ আগামী জানুয়ারীর মেয়াদ কালের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ২৪ ফুটের সড়ক যখন ছিলো তখন মানুষ চলাচল করেছে এখন ৫৪ ফুটের সড়কে তারা দূর্ঘটনার ঝুকি বাড়াচ্ছে এলোমেলো চলাচলের  মাধ্যমে। এটি আসলে দুঃখজনক বিষয়। যান ও পথচারিদের চলাচলে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন ট্রাফিক বিভাগের হাতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদেরকে আরো কঠোর হতে হবে। বাড়াতে হবে নজরদারী। সড়ক ও জনপদ বিভাগ কাজ সম্পন্ন করে সড়কে সতর্কতা সংকেত এর ব্যবস্থা করবে। তবে চলাচল কারীদের তা পালন করাতে অবশ্যই ট্রাফিক বিভাগকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আল আমিন আরো বলেন, সড়ক প্রশস্থ করার পর পিচ ঢালাইয়ের একটি লেয়ার দেয়া হয়েছে। আরো একটি লেয়ার আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দেয়া হবে। এরপর পুরো সড়কের মাঝে একটি ডিভাইডার দেয়া হবে এবং স্থাপন করা হবে সড়ক ব্যবহারের সতর্কতা সংকেত। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দ্রুততার সাথে কাজ সম্পন্নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সড়কটি সম্পন্ন হলে ট্রাফিক বিভাগ তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করলে সড়কের সুফল ভোগ করতে পারবে নগরবাসী বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT