4:06 pm , November 9, 2023

লালমোহন প্রতিবেদক ॥ পরিবাবের সুখের জন্য এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং করছিলেন মহিউদ্দিন। স্ত্রী আরজু বেগম, দুই ছেলে হাসান ও হোসাইনকে নিয়ে ভোলার লালমোহন উপজেলা থেকে ৩ বছর আগে ঢাকা মগবাজার গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু বুধবার রাতে শিশু হাসান ও হোসাইন চিরতরে এতিম হয়ে গেলো। স্ত্রী আরজু বেগম হারালেন স্বামীকে। রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় বুধবার রাত ১০টার দিকে একটি ট্রাক মহিউদ্দিনের ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারের উপর উল্টে পড়ে। প্রাইভেটকারে থাকা দুই যাত্রী প্রাণে রক্ষা পেলেও চালকের আসনে থাকা মহিউদ্দিন আটকে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মালামাল সরিয়ে মহিউদ্দিনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেন। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মহিউদ্দিনের স্ত্রী আরজু বেগম দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে মৃত স্বামীর পাশে আছেন। পোস্টমর্টেম শেষে ওয়ারী থানা রাতে লাশ হস্তান্তর করবে। পরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। তিনি জানান, দীর্ঘ ৪ ঘন্টা ট্রাকের স্টীল সিটের নিচে আটকে ছিল তার স্বামী। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় তিনি মারা যান। সময়মতো উদ্ধার করতে পারলে হয়তো বেঁচে যেতেন। তার দুই ছেলে ৮ বছরের হাসান ও ৫ বছরের হোসাইনকে নিয়ে এখন কোথায় যাবেন তিনি বলেই কেঁদে ওঠেন।
বৃহস্পতিবার মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব চরউমেদ গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার পুল এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায় মহিউদ্দিনের বৃদ্ধ বাবা তফাজ্জল মালকে। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনেছেন রাতে। প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি। তার ৩ ছেলের বড় ছেলে মফিজও এর আগে মারা যান। মহিউদ্দেনের মাও জীবিত নেই। ছোট ছেলে মিজানও ঢাকায় গাড়ি চালান। পুত্র শোকে তিনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। মহিউদ্দিনের খালাতো ভাই শাহাবুদ্দিন আহমেদ শুভ্র জানান, মহিউদ্দিন দেড় যুগ ধরে গাড়ি চালাতো। আগে অন্যের গাড়ি চালাতো। বছর দুয়েক আগে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি প্রাইভেটকার কেনেন রাইড শেয়ারিং এর জন্য। সেই ঋণ এখনো শোধ হয়নি। প্রাইভেট কার চালিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলেন তিনি। এখন এনজিওর ঋণ পরিশোধ নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে ভুগতে হবে। তিনি আরো জানান, ট্রাকটি ওয়ারী থানা পুলিশ আটক করেছে। তবে চালক ও হেল্পার পালিয়ে গেছে।