3:50 pm , November 7, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মাছ কাটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে নগরীর বিভিন্ন বাজারের শতাধিক নারী পুরুষ। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মাছ কাটেন তারা। এই পেশা একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে তাদেরকে স্বাবলম্বী করছে অন্যদিকে গৃহস্থলীর কাজকে করছে সহজ। পূর্বে বিভিন্ন ধরনের মাছ কেনার পরে কাটা একটি ঝামেলা পূর্ণ কাজ ছিল। কিন্তু এমন পেশাজীবীদের কারণে এখন হয়েছে সহজ। এতে করে বাজারে মাছের বিক্রিও বেড়েছে। অন্যদিকে তাদের কাঁটা মাছের বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট অংশ নানা ধরনের শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে। এতে করে বাড়ছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। সোমবার নগরীর পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে দেখা গেছে এক সারিতে বসে বৃহদাকৃতির বটি দিয়ে মাছ কাটতে এই পেশাজীবীদের। ছোট বড় প্রায় সব ধরনের মাছ কাটতে দেখা গেছে তাদের। পোর্ট রোডে ইলিশ মোকামের বাইরে মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করা মোহাম্মদ শাওনের সাথে আলাপ করা হয় এই পেশার আদ্যোপান্ত নিয়ে। পরিবর্তনকে তিনি জানান,শুধুমাত্র বরিশাল পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে মাছ কাটার পেশার সাথে জড়িত রয়েছে কমপক্ষে ১০০ জন। প্রতিটি গদিতে মাছ কাটার কাজে মোট তিনজন লোক কাজ করে। এদের মধ্যে এক জন বটি ওয়ালা, একজন আইশারি ও একজন করে কাস্টমার ডেকে আনার কাজ। সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ক্রেতাদের ক্রয়কৃত মাছ তাদের চাহিদা অনুযায়ী কেটে থাকেন। এক একজন ঘরে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি বিভিন্ন জাতের মাছ কাটেন প্রতিদিন। শাওন বলেন, তাদের কাঁটা মোট মাছের মধ্যে ৬০ শতাংশ ছোট মাছ এবং ৪০ শতাংশ থাকে বড় আকৃতির মাছ। ছোট মাছের মধ্যে রয়েছে কই, শিং, পাবদা, পুঁটি, ছোট তেলাপিয়া, ছোট মৃঘা ইত্যাদি। এই মাছগুলো প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে কাটা হয়। ঝামেলাপূর্ন হওয়ায় বড় মাছের তুলনায় এর খরচ দ্বিগুন। ২০টাকা কেজিদরে কাটা হয় বড় আকৃতির মাছ। এ সকল মাছের মধ্যে রয়েছে পাঙ্গাস, রুই, কাতল, বড় মৃঘা, বোয়াল, আইড়, রিডা, ইলিশ, মাগুর, মোচন, মেদ, ভোলপোয়া সহ ইত্যাদি। বড় মাছের প্রতি কেজি কাটতে খরচ ২০টাকা। তবে মাছের উচ্ছিষ্টাংশ বিভিন্ন বানিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে বলে জানান শাওন। মাছের নারীভূড়ি বিক্রি হয় জৈবসার তৈরি সহ পশুপাখির খাবার তৈরির কাজে। বিভিন্ন মাছের আইশ বিক্রি হয় মণ প্রতি দুই থেকে ৪ হাজার টাকায়। একই ধরনের মাছের আইশ আলাদা বিক্রি হয় তবে দর বেশি এবং মিশ্র বিক্রি হয় কিছুটা কম দামে। প্রতিদিন একএকটি গদি থেকে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ কেজি উচ্ছিষ্ট বিক্রি হয়। নির্দিষ্ট সময়ে এগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায় এই শিল্পে জড়িতরা। মাছের আইশ থেকে তৈরি হয় চুমকি সহ বিভিন্ন ধরনের শো-পিস। পূর্বে শুধু বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরার মালিকরা এসে মাছ কাটিয়ে নিয়ে যেত। কিন্তু দিনে দিনে গৃহস্থলির ক্রেতাদেরও সংখ্যা বাড়ছে। মাছ কাটার ব্যবস্থা থাকায় প্রতিটি বাজারেই ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানায় শাওন। তুলনামূলক কম টাকা খরচে এই সুবিধা পেয়ে ক্রেতারাও বেশ খুশি। পোর্টরোড বাজারে তারাও বেশ সুবিধা নিয়েই ব্যবসা করতে পারছেন। একএকটি গদির প্রতিদিন ৬০টাকা ভাড়া দিতে হয়।