উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় অবহেলিত বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) ও ৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় অবহেলিত বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) ও ৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন - ajkerparibartan.com
উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় অবহেলিত বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) ও ৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন

4:31 pm , October 31, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ একদিকে বাজার দরের অস্থিরতা, অন্যদিকে নদী ভাঙ্গনের আতঙ্ক। তার সাথে রয়েছে খানাখন্দ ভরা সড়কে কষ্টকর পথচলা। গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বিচার করলে বলা যায়, কোন ছোঁয়াই লাগেনি বরিশালের পাঁচটি আসনে। বিশেষ করে বরিশাল তিন আসনের মুলাদি, চার আসনের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মানুষেরাতো এখনো সন্ধ্যার পর গৃহবন্দী জীবনযাপন করেন। আর ছয় আসনের একাংশ বাহেরচর নদীতে বিলীন হবার পথে। সরেজমিনে গত ২৮ অক্টোবর শুক্রবার বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর বাজার, দুধল  ইউনিয়নের শিয়ালগুনি, বাহেরচর বাজার এবং চরামদ্দি ইউনিয়নের শতরাজ বোর্ড স্কুল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কষ্টের চিত্র। দুধল ও বাহেরচর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক কারখানা নদীর ভাঙন। গ্রামের পর গ্রাম ও সড়ক খেয়ে নিয়েছে এই নদী। এখানে সড়কের  কিছু উন্নয়ন হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবী সাধারণ মানুষের। এমনকি ৮ নং দুধল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ উজ্জ্বলও এখন চরম বিরক্ত স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপর। কেননা তাকে প্রয়োজন মুহূর্তে কখনোই পাশে পায়নি এলাকাবাসী। উজ্জ্বল বলেন, জোট নয় এখানে এখন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী চাই আমরা। আর এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ বাকেরগঞ্জ আওয়ামী লীগ। এখানে শতরাজ বোর্ড স্কুল এলাকার সড়কগুলো মানুষ চলাচলের অনুপযোগী।  একইচিত্র দাঁড়িয়াল, কামারখালীর বলে জানালেন চরামদ্দি বাজারের ব্যবসায়ীরা। এখানের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের খোকন হাওলাদার বললেন, এই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদারের সহধর্মিণী নাসরিন জাহান রতœা। তিনি কদাচিৎ এলাকায় আসেন। তাও ঐ উপজেলা সদর পর্যন্ত। এদিকে তাকে কখনোই দেখা যায়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদেরও। সাধারণ মানুষের মধ্যে স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব থাকলেও নির্বাচন নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সবাই ব্যাস্ত পেটনীতির সন্ধানে। বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরের বড়ো বাজার ও শ্যামপুর বাজারের মানুষের মুখে তাই বাজার দরের আতঙ্ক। সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে এটা স্পষ্ট যে, তারা সবাই চান বাজারের সহনশীলতা। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে প্রয়োজনে কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়ার দাবী জানালেন অনেকেই। আর রাজনীতি নিয়ে তাদের একটাই দাবী মনোনয়ন বাণিজ্য নয়, ভালো সৎ ও যোগ্য নেতা খুঁজে মনোনয়ন দেওয়ার। চা দোকানে আড্ডারত ষাটোর্ধ্ব বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ জানালেন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে লবিং, গ্রুপিং ও নমিনেশন ক্রয় করতে কত টাকা খরচ যায়? এরপর আবার নির্বাচন খরচ। এসব খরচের বোঝা বহন করে ভালো লোকও অসৎ হয়ে যাবেন। অথচ রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের মনোনয়নের বিনামূল্যে যোগ্য নেতাকে দান করে ও সেই নেতার নির্বাচনী খরচ দলগুলোই বহন করে তাহলে সমাজে আর দুর্নীতি থাকেনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বাড়েনা? তারা আরো বলেন, বেছে বেছে বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীদের টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন দিলে তারাতো আগে তাদের খরচ উঠাবে, তারপর সময় সুযোগ পেলে জনগণের কথা ভাববে। এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয়নি। এমনকি বাকেরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী দাবী করে বলেন, গত পনের বছরে বিএনপি এখানে কোথাও দাঁড়াতেও পারেনি। এটা জোরজুলুমের জন্য নয়, বাকেরগঞ্জের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে। তিনি আরো বলেন, আমি দল করি, যারা দল করে তারা নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। যারা দল করে না, তারা বিভিন্ন ভাবে নিজেকে প্রার্থী বানিয়ে বিতর্ক তৈরি করে। ফলে অন্যের হাতে ক্ষমতা চলে যায়। আর যারা ক্ষমতা লোভী তারা দেখবেন নির্বাচন আসা মাত্রই ঢাকায় ছুটতে শুরু করে। আর ক্ষমতা পেয়ে গেলে গ্রামের কথা, মানুষের কথা ভুলে যায়। তিনি বলেন, আমি সবসময় নেত্রীর নির্দেশ অনুসরণ করছি। বাকেরগঞ্জের জন্য তিনি যেটা ভালো মনে করবেন সেটা করবেন। ইতিপূর্বেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের সুত্রে জানা গেছে, বরিশাল এক আসন বাদে বাকী পাঁচটি আসনেই সংসদ সদস্যদের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে পরষ্পরের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় একই চিত্র দেখা গেল ৩০ অক্টোবর সোমবার নদী ভাঙনের শিকার বরিশাল তিন আসনের মুলাদি, চার আসনের হিজলা মেহেন্দিগঞ্জ ঘুরে। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বাহেরচর, চর ফেনুয়া ও আনন্দ বাজার এলাকায়তো রীতিমতো আতঙ্কিত জনজীবন। এখানের বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারেননা নদী ভাঙন আতঙ্কে। রাত জেগে পালা করে পাহারা দেন তারা। কিছুদিন আগে ভাঙনের শিকার গ্রামবাসী মানববন্ধন করেছেন। বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি  সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ছুটে এসে আশ্বাসও দিয়েছেন। তিনি বালুর বস্তা ফেলে আপাতত ভাঙন রোধের ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন বলে জানান বাহেরচর, শ্রীপুরের বাসিন্দারা। তাদের অনেকেই বাজার দর সামলাতে না পেরে রাগও ঝারলেন। তারপর সরকারের কাছে কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি চাইলেন। কেউ কেউ আবার শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী করে বললেন, এখানে একটিমাত্র হাইস্কুল তাও নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।  গ্রামবাসী বলেন, সবার আগে আমাদের দরকার একজন সৎ ও জনদরদী এমপি। যে এই নদী ভাঙন ঠেকাতে কাজ করবে। পরের জায়গা আর চর নিজের নামে দখল করে নেবে না।  কৃষককে সম্মান করবে। আর এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করার দাবী জানান শ্রীপুরবাসী। তাদের দাবীর সাথে সহমত পোষণ করেন মেহেন্দিগঞ্জের  পৌর মেয়রআওয়ামী লীগ নেতা  আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন খান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড়ো রাজনৈতিক দল। এখানে কখনোই মনোনয়ন বাণিজ্য হয়না। কারণ, এই দলের মনোনয়ন সরাসরি দলনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঠিক করেন। তাই এখানে মনোনয়নের জন্য নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।তিনি বলেন, আশপাশের অনেকে হয়তো মনোনয়ন নিয়ে বানিজ্য করার চেষ্টা করেন তবে তা আওয়ামী লীগে হয়না। আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, এখানে নদী ভাঙনের শিকার দ্বীপ এলাকা হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়ন। এই মানুষগুলো গত পনের বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উন্নয়নের ছিটেফোঁটা শুধু পেয়েছে। পুরোপুরি পায়নি ভালো ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে। তাই আগামী নির্বাচনে আমি তাদের পাশে থাকতে এসেছি। আমি আমার জন্মস্থানটিকে বাঁচাতে চাই। এখানের মানুষের সমস্যাগুলো দূর করতে চাই।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT