3:45 pm , October 21, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনে আজ রোববার মহা অষ্টমীতে কুমারী পুজা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমীতে গতকাল শনিবার নবপত্রিকা স্থাপন ও অঞ্জলির মাধ্যমে মন্দিরে মন্দিরে চলে দেবীর আরাধনা।দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা এসেছেন মর্ত্যলোকে। তাই বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মেতেছেন উৎসবের আমেজে।শনিবার মহাসপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নান করিয়ে আনা হয় ম-পে।এই নবপত্রিকাকে প্রচলিত কথায় বলা হয় কলা বউ।লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে বাংলার বধূরূপ দিয়ে দেবীর ডান পাশে স্থাপন করা হয়। এরই মাধ্যমে শুরু হয় সপ্তমীর পূজা। করা হয় ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান।পূজা শেষে অঞ্জলির মাধ্যমে দেবীর কাছে নিজেকে সমর্পণ। দুর্গার আরাধনায় তাই ভক্তরা ম-পে ছুটে আসেন।তারা বলেন, মহাসপ্তমীর সকালে অঞ্জলি দিলাম। মায়ের কাছে চাই সবাই যেন সুস্থ থাকে, আনন্দে যেন পূজাটা কাটানো যায়।এদিকে বরিশালে যথাযথ আনুষ্ঠানিকতা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সপ্তমী বিহীত পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার সকাল ৭টা ২৬ মিনিটে থেকে সকাল ৯ টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দূর্গাদেবীর নবপত্রিকা স্থাপন ও সপ্তমী বিহীত পূজা অনুষ্ঠিত হয়।এছাড়া ম-পগুলোতে চ-িপাঠ, পূজা-অর্চনা, দেবী দর্শন, অঞ্জলী প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে দিনব্যাপী চলে মহাসপ্তমীর আনুষ্ঠানিকতা।আয়োজকরা জানান, শাস্ত্রমতে মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোল উপাদানে) দেবীর পূজা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা।এ সময় পূজারীরা প্রতীমার সামনে বসে মায়ের মুখ দর্শন করেন। ঢাকের বাদ্য, ধুপের ধোঁয়া, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে বরিশালের প্রতিটি পূজা ম-প মুখরিত হয়ে উঠেছে। সঙ্গে নাচ-গান-আরতি আর দেবী বন্দনা। শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবে মেতে উঠেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিশু ও কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সী মানুষ। পূজা ম-পগুলো সাজানো হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে। তবে এসব ম-পে সন্ধ্যা নামার পর পরই বিভিন্ন রংয়ের ঝলমলে আলোক সজ্জায় সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।অপরদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে দিনব্যাপী বরিশাল নগরীর বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম-বার।গতকাল শনিবার পূজা মন্ডপ পরিদর্শন কালে তিনি হিন্দু ধর্মালম্বীদের সাথে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং পুজা মন্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কর্তব্যে নিয়োজিত পুলিশ সদস্য ও ডিউটি তদারকি কর্মকর্তাদেরকে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।এসময় তিনি পূজাম-প ও তার আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পূজাম-প কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান এবং যে কোনো অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।এছাড়াও তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব শতভাগ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পালনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক তাদের পাশে আছে।এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) রুনা লায়লা, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মােঃ ফজলুল করিম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মােঃ ফারুক হােসেন, সহকারি পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি মডেল থানা) সীমা খানম, সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু পুলিশ কমিশনার) প্রণয় রায়, কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন ও কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগন ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ বছর বরিশাল জেলায় ৬০০টি এবং মহানগরে ৪৮টি ম-পে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গা পূজা।ভক্তদের কষ্ট দূর করতে এ বছর দেবী দুর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে। আর বিজয়া দশমীর দিন একই বাহনে মর্ত্যলোক ছেড়ে যাবেন।আজ ২২ অক্টোবর অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর নবমী এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।